২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সর্বজন খাতে রক্ষণশীল, গোষ্ঠীতন্ত্রে উদার বাজেট

সর্বজন খাতে রক্ষণশীল, গোষ্ঠীতন্ত্রে উদার বাজেট - ছবি : সংগৃহীত

এবারের বাজেট নিয়ে জনগণের বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল। করোনার প্রথম ধাক্কায় মানুষের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। দ্বিতীয় ধাক্কা অনিশ্চয়তা আরো ঘনীভূত করেছে। প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা আবারো ঊর্ধ্বমুখী। মানুষ আশা করেছে, বাজেটে তাদের অনিশ্চিত জীবন ও জীবিকা পুনরুদ্ধারের কৌশল থাকবে। নিম্ন আয়ের মানুষ, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, বৃদ্ধ, শিশু, নারীসহ সমাজের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর হাতে নগদ অর্থ পৌঁছানো হবে। সবার জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। নতুন দারিদ্র্য মোকাবেলার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকবে। বেকার, যুবক, ছাত্রছাত্রী, অভিবাসী শ্রমিকদের দুরবস্থা লাঘবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষক, ছোট কারবারি, অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যও আশা জাগিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘সব শ্রেণীর মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছি’, ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে গুরুত্ব পাবে স্বাস্থ্য খাত’। প্রস্তাবিত বাজেটের শিরোনামও দিয়েছেন, ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। জনগণের প্রত্যাশার সাথে বাজেটের মিল-অমিল দেখা খুবই জরুরি।

নতুন দারিদ্র্য মোকাবেলায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি যথেষ্ট নয়
সব হিসাব বলছে- করোনায় নতুন করে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে; যদিও পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে এ হিসাব পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা দিতে পারেনি। উন্নয়ন অন্বেষণের হিসাব বলছে, লকডাউন পরিস্থিতি বাড়তে থাকলে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ শতাংশে দাঁড়াবে। জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে আগের বছরের চেয়ে বরাদ্দ ১৩ শতাংশ বেড়েছে। ১৪ লাখ মানুষকে নতুন করে আওতায় আনা হয়েছে। তবে মাথাপিছু ভাতার পরিমাণ বাড়েনি। উপরন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ইত্যাদি প্রদানে যাবে।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ না করেও অনেকে পাচ্ছে। সরকারি প্রতিবেদনই বলছে, যোগ্য না হয়েও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা নেন ৪৬ শতাংশ সুবিধাভোগী। আবার অনেকে যোগ্য হয়েও কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ছেন। বরাদ্দকৃত অর্থ নতুন যোগ হওয়া আড়াই কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে প্রচলিত কর্মসূচিগুলো সার্বজনীন নয়। ফলে সুবিধাভোগী বাছাই করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। জনসংখ্যার তথ্য-ভিত্তিক ডাটাবেইজ নেই। ফলে প্রকৃত সুবিধাভোগী বাছাই করা যাচ্ছে না এবং সরকার সবার কাছে সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না। যেকোনো অভিঘাতে খানাগুলোর ঝুঁকি হ্রাসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পূর্ণ জীবনচক্রভিত্তিক সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রয়োজন। সার্বজনীন পেনশন ভাতা, বেকার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশু প্রতিপালন ভাতা, আবাসন সুবিধা, আয় সহায়ক ভাতা ও স্বাস্থ্য ভাতা- এ সাতটি খাতে এ কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে।

জীবন বাঁচাতে ও অতিমারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেই। কয়েক দিন ধরে করোনায় সংক্রমণ হার ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু এখনো সবার জন্য টিকা পাওয়া অনিশ্চিত। এ জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সারা দেশে ২৪ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন।

এ দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অত্যন্ত স্বল্প। প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ডাক্তার আছেন ৫ দশমিক ২৬ জন। এটা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সীমা অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার রোগীর জন্য কমপক্ষে ২৩ জন ডাক্তার, নার্স এবং মিডওয়াইফ থাকতে হবে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজারে নার্স আছেন মাত্র ৩ দশমিক ০৬ জন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। রোগীর তুলনায় ডাক্তার অনেক কম থাকায় ডাক্তারদের পক্ষে পর্যাপ্ত সময় দেয়া সম্ভব হয় না। জনসংখ্যার ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবার জন্য ফার্মেসি, হাতুড়ে ডাক্তার বা কবিরাজের কাছে যান। মাত্র ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ সরকারি সেবা গ্রহণ করেন। অনেকে বাধ্য হন বেসরকারি হাসপাতালে যেতে। বেসরকারি হাসপাতালেও ডাক্তার রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। তা ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয় সরকারি হাসপাতালের প্রায় দ্বিগুণ। ডাক্তার সংখ্যা বাড়াতে এবং রোগী দেখার সময় বৃদ্ধি করতে বাজেটে কোনো পরিকল্পনা নেই।

স্বাস্থ্য খাতের মাত্র ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ খরচ আসে সরকারি ব্যয় থেকে। বাকি টাকা জনগণকে পকেট থেকে দিতে হয়। ব্যক্তিগত খরচ (ওওপি) বেশি। বাংলাদেশে ওওপি ৭৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। ভারতে এটি ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং নেপালে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু সরকারি ব্যয় বাংলাদেশে সবচেয়ে কম, ৮৮ মার্কিন ডলার। পাকিস্তানে এটি ১২৯, ভারতে ২৬৯, শ্রীলঙ্কায় ৩৬৯ এবং মালদ্বীপে দুই হাজার মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে বরাদ্দ সামান্য বাড়লেও বাজেটের অংশ এবং জিডিপির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে গতবারের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে। গত বাজেটে জিডিপির অংশ হিসেবে বরাদ্দ ছিল ১ দশমিক ০২ শতাংশ। এবার তা কমে জিডিপির মাত্র দশমিক ৯৫ শতাংশ হয়েছে। গত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের অংশ হিসেবে বরাদ্দ ছিল ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এবার তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ছাড়া জিডিপির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দে বাংলাদেশ সবার চেয়ে পিছিয়ে। স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত খরচ হ্রাসে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। কাঠামোগত সংস্কারের পথনকশাও অনুপস্থিত।

শিক্ষা খাতের ক্ষতি পোষানোর ব্যবস্থা নেই
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্ররা বসে আছে। টিউশন বা অন্যান্য কাজের মাধ্যমে তারা যে আয় করত তারও সুযোগ নেই। ছাত্ররা এখন ঋণগ্রস্ত। অনেকেই হতাশায় আত্মঘাতী হয়ে উঠছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশের শুধু ১৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় আছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলা হলেও এত দিনেও সবার কাছে অললাইন সেবা পৌঁছানো যায়নি। করোনার বাস্তবতায় সব ছাত্রছাত্রীর কাছে অনলাইন সুবিধা ও সরঞ্জাম পৌঁছানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষা খাতে দক্ষতা বাড়াতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, বৃত্তির ব্যবস্থা করায় দেশে নারী শিক্ষায় ইতিবাচক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। কারিগরি শিক্ষায় বৃত্তির ব্যবস্থা করলে এখানেও অনেকের আগ্রহ বাড়বে। এক বছরের স্বল্প সুদে শিক্ষানবিস ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু বাজেটে এ ধরনের ব্যবস্থা ও দিকনির্দেশনা অনুপস্থিত।

ইউনিসেফের মতে, তিন কোটি ৬৮ লাখ শিক্ষার্থী সব অনলাইন ক্লাস ও নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনের প্রায় অর্ধেক বছর হারাচ্ছে। এ পরিমাণ শিক্ষাজীবন অপচয়ের কারণে দীর্ঘমেয়াদে একজন শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে প্রায় ১৩ শতাংশ; দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ক্ষতি হবে জিডিপির প্রায় ৩৩ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ১১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে। আর পরিস্থিতি উন্নতির দিকে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা খাতের এত বড় ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব তা নিয়ে বাজেটে কার্যকর ব্যবস্থা ও পথনির্দেশ নেই।

শিক্ষা খাতে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ সামান্য বাড়লেও বাজেটের অংশ এবং জিডিপির অংশ হিসেবে গতবারের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে। জিডিপি ও বাজেটের অংশ হিসেবে গেল অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ২৪ এবং ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ। কিন্তু তা এবার নেমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ১১ দশমিক ৯২ শতাংশে।

গোষ্ঠীতন্ত্র লাভবান
জনপ্রশাসন এখনো বাজেটের সবচেয়ে বড় খাত। প্রকৃত রাজস্ব রক্ষণশীল তাত্ত্বিকতায় সরকার ছোট হওয়ার কথা। এসব খাতে ব্যয় না কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের ৬০ দশমিক ৭২ শতাংশই ব্যয় করা হবে পরিচালন খাতে। পরিচালন ব্যয়ের এক-চতুর্থাংশের বেশি ব্যয় হবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা ও পেনশন পরিশোধে।

রক্ষণশীল কায়দায় সর্বজন খাতে প্রকৃত ব্যয় কমানো হলেও এবং কিছু খাতে কর অবকাশ দিলেও জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। অথচ এ খাতগুলো বছরের পরপর অর্থের অদক্ষ ব্যবহার, অপচয় এবং সময়মতো কাজ শেষ না করতে পারার জন্য সমালোচিত। বাজেটে মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এনার্জি ও পরিবহন খাতে। গত বছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু সর্বজনের সামাজিক খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ আগের বছরের ২২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২০ দশমিক ৯ শতাংশ।

অন্য দিকে দুই বছরে করপোরেট কর কমেছে ৫ শতাংশ। এতে ব্যবসায়ীরা ছাড় পাবেন; কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ছাড় নেই। এতে মূলত গোষ্ঠীতন্ত্রই লাভবান হচ্ছে।

কাঠামোগত রূপান্তরে জোর নেই, ঋণের জাল বাড়ছে
করের আওতা বহুমুখীকরণের ব্যবস্থা বাজেটে নেই। রফতানি পণ্য ও বাজারের বৈচিত্র্যকরণ, অঞ্চলভিত্তিক এবং খাতভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন কর ব্যবস্থা নিলে অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর করা যেত। আগামীর অগ্রযাত্রা নির্মাণে বাজেটে এ ধরনের দিকনির্দেশনা অতীব প্রয়োজনীয়।

ঘাটতির এক-তৃতীয়াংশ জোগাড় করতে হবে ঋণ করে। ঋণ বাড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে নগদ অর্থ যাচ্ছে সামান্যই। উদাহরণস্বরূপ, প্রণোদনা হিসেবে ব্যবসার মোট টার্নওভার ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হলেও কুটির, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরাসরি নগদ সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হয়নি। আবার এ খাতে আগে ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ বাস্তবায়নের ধীর অগ্রগতির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা বাজেটে নেই। অথচ এ খাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ নিয়োজিত। দেশের ৮০ ভাগ শ্রমিকই কাজ করেন অনানুষ্ঠানিক খাতে। গত কয়েক বছরে সিএমএসএমই খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

বাজেট ব্যবস্থাপনায় গণতন্ত্রায়ন দরকার
সংসদের কার্যবিধি অনুযায়ী, সংসদীয় কমিটি কর্তৃক অর্থবিল যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ নেই। এমনকি রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ব্যতীত অর্থবিল উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে। উত্থাপিত বিলে কোনো নতুন প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ নেই। সংসদ বাজেট পুরো গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে কিন্তু পরিবর্তন করতে পারে না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা দলের বাইরে ভোট দেন না। আবার সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই বিধায় বাজেট নিয়ে সমালোচনা ও প্রশ্ন নেই বললেই চলে। ফলে বাজেট কোনো বিরোধিতা ছাড়াই পাস হয়ে যায়। বিরোধিতার এবং কার্যকর তর্ক-বিতর্ক ও পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত বিধায় বাজেটে প্রতিবারই স্বজনতোষণ, সম্পদের গোষ্ঠীতান্ত্রিক কেন্দ্রীভবন প্রাধান্য পায়।

প্রতি বছর প্রস্তাবিত বাজেট এবং সংশোধিত বাজেটের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ করা যায়। কিভাবে ও কেন এ পার্থক্য হলো, তা জানা যায় না। বিভিন্ন খাতে কেন ব্যয় বাড়ল বা কেন বরাদ্দকৃত অর্থের পূর্ণাঙ্গ ব্যয় সম্ভব হয়নি তার কোনো জবাবদিহিতার সুযোগ নেই। কী প্রক্রিয়ায় বাজেট সংশোধন করা হয় তা নিয়েও নির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা নেই।

বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন বাজেট সম্পর্কিত সব তথ্য ও উপাত্ত প্রাপ্তিতে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা। সঠিক তথ্য-উপাত্ত থাকলেই সঠিক নীতি-কৌশল প্রণয়ন সম্ভব। অনেক তথ্য-উপাত্তের মধ্যেই সামঞ্জস্য নেই। অনেক পরিসংখ্যান হালনাগাদ করা হয়নি।

বাজেটে জনগণের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। রোধন-তদারকি-জবাবদিহিতা তথা অর্থব্যবস্থার গণতন্ত্রায়নের অনুপস্থিতি প্রকট। ফলে সাধারণ নাগরিকের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।

লেখক : অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন, ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’।


আরো সংবাদ



premium cement