২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


‘চিজ যায় যার, ঈমান যায় তার’

‘চিজ যায় যার, ঈমান যায় তার’ - ফাইল ছবি

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগের ঘটনা। বাইরে জ্যোৎস্নার আলো। মশারিতে প্রবেশকালে নজর যায় আলনার দিকে। আবছা আলোয় প্যান্টের খোলা কটিবন্ধটি সাপের মতো ঝুলতে দেখেই আঁতকে উঠে লাইট অন করে জানতে চাই,

-প্যান্ট কোথায়? ডায়াবেটিস বাড়তিসহ নানা উপসর্গ নিয়ে আমার আগেই শুয়ে পড়েছিল সালমা। হয়তো তন্দ্রাচ্ছন্ন।

-প্যান্ট লন্ড্রি দোকানে। (তন্দ্রাচ্ছন্ন উত্তর)। -প্যান্টের টাকা কোথায়? -(বিস্মিত হয়ে) প্যান্টের টাকা! -জি, প্যান্টের টাকা! -কত টাকা? -১০ হাজার টাকা। ১০ হাজার অঙ্কটা কানে ঢুকতেই তন্দ্রা ছুটে যায়। শোয়া থেকে উঠে বসে জানায়,

-সকালে বুয়াকে কাপড় ধুতে দিয়েছি। বেল্ট খুলে দিয়েছি প্যান্টও। -প্যান্টের ‘চোরা’ পকেটের টাকা? ১০ হাজার টাকা? বেল্ট খুলতে হাতে লাগার কথা। (চটে গিয়ে) দু’দিন পরতে না পরতেই প্যান্ট ধোয়ার দরকার হয়ে পড়ে কেন? প্যান্ট জামা ধুতে দেয়ার আগে পকেট চেক করার মতো সাধারণ জ্ঞানও মানুষের থাকতে নেই?

সকাল ৯টা থেকে এখন রাত সাড়ে ১০টা। সাড়ে তেরো ঘণ্টা। কড়কড়ে ১০টি হাজার টাকাসহ ধোয়ার জন্য প্যান্ট প্রথমে গেল কাজের বুয়ার হাতে। বুয়া সাবান-সোডা লাগিয়ে ময়লা খসালো। পরিষ্কার পানিতে চুবিয়ে দূর করল সাবান-সোডার পানি। দু’হাতে কষে পানি নিংড়ালো, নিংড়ানো ভেজা কাপড় খুলে রোদে ছড়ালো- তার পরও এতগুলো টাকার অস্তিত্ব টের পেল না, এটি হয়!

শুষ্ক কাপড় নিয়ে গেল কেয়ারটেকার ঈশা খাঁ। একটা করে কাপড় ব্যাগে ভরে ইস্ত্রি করার জন্য সে নিয়ে যায়। একটা একটা করে কাপড় গণনা করার সময় প্যান্টের সাথে টাকাসহ ভারী চোরা পকেটটা নজরে না পড়ার কথা নয়। তার পরও টের পেল না টাকার অস্তিত্ব। এক টাকা না, পাঁচ টাকা না, ১০টি হাজার টাকা। প্যান্ট নাড়াচাড়ার সময় চোরা পকেটও নড়েচড়ে। হাতে না ঠেকলেও চোখে ঠেকবে নিশ্চয়ই। ঈশা খাঁর অভাবের সংসার, টাকা দেখলে কাঠের মূর্তিও হা করে। বাড়ি থেকে পনেরো মিনিটের পথ লন্ড্রি দোকান। সে বিকেলে কাপড় রেখে আসে। পরদিন ভোরে গুনে গুনে নিয়ে আসে। এখন রাত ১০টা। কাপড়গুলো এতক্ষণে নিশ্চয়ই ইস্ত্রি করা হয়ে গেছে। লন্ড্রিওয়ালার হাত পার হবে না কিছুতেই। তিন হাতের এক হাতে এতক্ষণে টাকাগুলোর পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে নিঃসন্দেহে।

মনে হয়, সালমা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে। জ্ঞানী আর বোকা কে, তা কথায়ই ধরা পড়ে। ‘নিজের ভুল বুঝতে পারার পর চুপ থাকা জ্ঞানীর লক্ষণ, আর ভুলটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মরিয়া হয়ে তর্ক করা বোকার লক্ষণ।’

কৈশোরের ঘটনা। টিঅ্যান্ডটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমাছ মাস্টার। সম্পর্কে চাচা শ্বশুর। আবার আমার বিয়ের উকিল। একবার তার ঘড়ি খোয়া যায়। তখন হাজারে একজনের হাতে ঘড়ি দেখা যেত। প্রচলিত ঘড়ির মধ্যে সিটিজেন সবার প্রিয়। বালিশের কাছে ঘড়ি রেখে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘড়ি নেই। সোনালি চেইন ও ফ্রেমের হাতঘড়ি। কোনো পুরুষ মানুষ ঘরে প্রবেশ করেনি। মহিলাদের মধ্যে যে ক’জন ঘরে প্রবেশ করেছিলেন সে ক’জন সন্দেহের ঊর্ধ্বে। ঘরে নেই সিঁদ কাটা। জিন-ভূতরা হাতে ঘড়ি পরে না। তার পরও ঘড়িটা উধাও! ঠিক করছেন বাড়ির নারী-পুরুষ, ছেলেমেয়ে সবাইকে চালপড়া খাওয়াবেন। গাঁয়ের মসজিদের করিম মোল্লার চালপড়া। ‘শতভাগ নির্ভুল’। সেরখানেক আকাড়া চাল মোল্লা দাদার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। সারা বাড়িতে টান টান উত্তেজনা। ঠাকুরবাড়ির হাইস্কুলের প্রথম ব্যাচের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আমি। ভূতপেত্নী, জাদুটোনা, জিনধরা, ভাড়াম (জিন-পরীর মালিক কর্তৃক গভীর অন্ধকারে জিন-পরী হাজির করে তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া মালামাল, দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তিসহ যেকোনো সমস্যার সমাধান জেনে নেয়ার পদ্ধতি) ইত্যাদি কিছুই বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস করতাম না চালপড়া দিয়ে চোর ধরাও। আমার মতে, এসব কুসংস্কার। কুসংস্কার ক্ষতি করে বিজ্ঞানমনস্কের। তাই যেখানে কুসংস্কার সেখানেই আমি, সাধ্যমতো এতে বাধা দিই। চালপড়া দিয়ে চোর ধরার সংবাদ পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাজির হই। মাস্টার চাচা ঘড়ি খোয়া যাওয়ার বর্ণনা করে চলছেন অবিরাম। সব শুনে -ঘড়ি নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কাউকে সন্দেহ হয়? -সন্দেহ হয় না, আবার হয়ও। -মানে? -বালিশের পাশে ঘড়ি রেখে শোয়ার পর সন্ধিগ্ধ কোনো লোকই ঘরে প্রবেশ করেনি। -এখানেই ত সমস্যা, চালপড়া দিয়ে চোর ধরতে হলে সন্দেহের তালিকায় অবশ্যই চোর থাকতে হয়। কাঁচা চোর। চোর যদি কাঁচা হয় ভয়ে মুখের পানি শুকিয়ে যায়। শত চর্বণের পরও মুখের চাল থাকে শুকনো। পাতলা চাপেই কাঁচা চোরেরা ঘটনা স্বীকার করে ফেলে। -মানলাম তোমার কথা, ঘড়ির তো আর পাখা গজায়নি! দরজা-জানালা বন্ধ, ঘর থেকে ঘড়িটা গেল কোথায়?

চাচার কথাও সত্য। সব কিছুতেই রহস্যের গন্ধ খুঁজি। রহস্যের নজর নিয়ে ঘরের ভেতর-বাইরে ভালোভাবে পরীক্ষা করি। কাঁচাভিটির ঘর। ঘরের বাইরে কয়েক ফুট দূরে ইঁদুরের গর্ত ছাড়া আর কিছুই সন্দেহের মধ্যে পড়েনি। গর্তের মুখে খড়কুটো টেনে নেয়ার লক্ষণ সুস্পষ্ট। ইঁদুর বাচ্চা দেয়ার সময় যা পায়, তাই টেনে নিয়ে যায় গর্তে। ইঁদুরের পছন্দ থেকে বাদ পড়ে না ছোট খেলনা, গলার চেইন, কানের দুলও। গর্ত একটু খুঁড়তেই চকচক করে উঠে ঘড়ির চেইন। ঘটনার আকস্মিকতায় সবার প্রশ্ন, ইঁদুরের গর্তে ঘড়ি থাকার বিষয়টি তুমি কি আগে থেকেই জানতে?

কাঁচাচোরের যম চালপড়া, নাম শুনলেই ঘাম বের হতে শুরু করে। আমরা তখন সোনারগাঁওয়ের বাড়িতে। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখোমুখি আমাদের দু’টি ঘর। একটি সেমিপাকা, আরেকটি চৌচালা। মাঝে ছোট্ট একটি উঠান। রান্নাবান্না ও খানাপিনা চৌচালা ঘরে। বাড়িতে আছে ৮-১০ বছর বয়সের একটি কাজের মেয়েও। কোর্টের কাছেই বাড়ি। আসা-যাওয়া পাঁচ মিনিটের পথ। সেমিপাকা ঘরের উত্তর দিকে আলনা। আলনার কাছে ঘরের মানুষ ছাড়া গমনাগমন সহজ নয়। বিকেলে বাসায় এসে আটপৌরে পরিচ্ছদ পরি। দু-এক দিন পর্যন্ত পকেটের টাকা পকেটেই থাকে। উকিলদের পকেটের টাকা মুদি-মনোহারি দোকানের টাকার মতো, শুমার না করে পরিমাণ বলা যায় না। একরাতে বাইরে যাওয়ার আগে শার্ট গায়ে পরে দেখি, পকেট শূন্য। সালমার কাছে জানতে চাই? -টাকা কোথায়? -কোন টাকা? -পকেটের টাকা। -আপনার পকেটের টাকা কোথায় আমি কী করে বলব? -ঘণ্টা দেড়েক আগেই তো জামাটা খুলেছিলাম, এর মধ্যেই মিসিং! আমি এখনই চালপড়া আনব। ঘরের সবাইকে খাওয়াবো চালপড়া।

আমার কথায় সুর মিলিয়ে সালমা, -আপনি আসার পর থেকে বাড়িতে বাইরের কোনো লোক আসেনি। কাপড়ের কাছে বাইরের লোকজন যায়ও না কখনো। জামা রাখতে রাখতে টাকাটা কি হাওয়া হয়ে গেল? কত টাকা ছিল? -শ’ পাঁচেকের মতো। -যে নিয়েছ, ভালোয় ভালোয় দিয়ে দাও। হাতে হাতে দিতে লজ্জা করলে ঘরের কোথাও ফেলে রাখলেও চলবে। না দিলে এই ৫০০ টাকার জন্য দরকার হয় পাঁচ হাজার টাকা খরচ করব, চাল পড়া দেবো, পানি পড়া দেবো, আয়না পড়া দেবো, শুঁটকি পড়া দেবো, ছাই পড়া দেবো, বাটি চালান করব, দরকার হয় পাঁচরুখি থেকে গুড় পড়া এনে খাওয়াব, টাকা বের না করে ছাড়ব না।

-ওসব পড়া আবার কী রকম? -আয়নায় চোরের ছবি দেখা যায়। ‘পড়া’ আয়নায় কাজল মেখে সামনে ধরলে আয়নায় চোরের মুখ সবাই দেখতে পায়। শুঁটকি পড়া একটু জটিল। চোরের পেটে পড়া শুঁটকি একটু পড়লেই হলো। শুকাতে শুরু করে চোরের শরীর। ডাক্তার বদ্যি কিচ্ছুটি করতে পারে না। চোরাই মাল ফেরত না দেয়া পর্যন্ত শুকাতে শুকাতে শুঁটকি হয়ে একদিন মরেই যায়। শুঁটকি পরীক্ষার অ্যাকশন আস্তে ধীরে হলেও উত্তম। চোর শুঁটকি হওয়ার আগেই মান-সম্মানের ভয়ে গোপনে চোরাই দ্রব্য ফেরত রেখে যায়। ছাই পরীক্ষা নিজে দেখেছি। যাদের সন্দেহ হয় তাদের নাম পরিষ্কার কাপড়ের টুকরায় লিখে টুকরাগুলো একটা একটা করে শুকনো পাটকাঠিতে পেঁচানো হয়। পেঁচানো পাটকাঠিগুলো একটার পর একটা সাজিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হয়। পোড়ানো ছাই হাতে নিয়ে সূরা-কালাম মন্ত্রপাঠসহ দু’হাতের তালু দিয়ে সজোরে পিষলে চোরের নাম হাতের তালুতে লেখা হয়ে যায়। ছাইমাখা তালু থেকে ফুঁ দিয়ে বা ঝেড়ে ছাই সরালেও হাতের তালুর লেখা সরে না। একদম টাটকা পরীক্ষা। পানিপড়া তো আরো টাটকা। পড়া পানি চোরের গায়ে পড়লে সাথে সাথে ফোস্কা পড়ে যায়। ফুটন্ত পানি গায়ে লাগলে যেভাবে সাথে সাথে ফোস্কা পড়ে, সেভাবে পড়াপানি গায়ে লাগলেও সাথে সাথে ফোস্কা পড়ে। বাটিচালান জটিল হলেও ফল টাটকা। প্রয়োজন পিতলের জামবাটি ও তুলারাশির জাতক। তুলারাশির জাতক ছাড়া বাটিচালান শুরুই করা যায় না। পড়াবাটি সে জাতক ভূমিতে সজোরে চেপে ধরেন। মাল যেখানে, বাটি সেখানেই টেনে নিয়ে যায় জাতককে।

গুড় পড়া তো আরো ভয়ঙ্কর। বাজার থেকে ঘটির উপরের প্রথম গুড়টা একদামে কিনে আনতে হয়। খাওয়াতে হয় সন্ধিগ্ধদের। পড়া গুড় চোরের পেটে পড়লে আর রক্ষা নেই। শুরু হয় দাস্ত ও রক্তবমি। চোর দোষ স্বীকার না করা পর্যন্ত দাস্ত ও রক্তবমি বন্ধ হয় না। তবে গুড় পড়া ব্যবহারের আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। কারণ কখনো কখনো সমাজ ও লোকলজ্জার ভয়ে চোর রক্তবমি ঢাকতে চেষ্টা করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাই থানাসহ মেম্বার-চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে পড়া গুড় ব্যবহার করতে হয়। টাকার উদ্ধারের জন্য প্রথমে চাল পড়া আনব, কাজ না হলে একে একে সব পরীক্ষা করাব।

পরদিন ভোরে ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে, -মামা টাকা পাইছি। -কই পাইলি টাকা? -আলনার পেছনে পইড়া রইছে।

দুর্লোভ অনেককেই হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে ফেলে। বছর দেড়েক আগে, ঠিক এমনই এক ঘটনা। চোরা পকেটের টাকাসহ প্যান্ট ধৌত করে রোদে শুকোতে দেয়ার পর মনে পড়েছিল টাকার কথা। কাজের বুয়াকে চার্জ করতেই টাকা প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে কোমরে গোঁজা আঁচল থেকে বের করে দেয়। বুয়ার বাড়ি বরিশাল। সদিচ্ছা থাকলে তো কাপড় কাচার সময়ই বলতে পারত। বরিশালের বুয়া কথা বেশি বলত। মধ্যে, সব কথাই বলেছে টাকা প্রাপ্তির কথা ছাড়া। বর্তমান বুয়ার বাড়ি সিলেট, বোমা মারার আগে কথাই বলে না।

এখন বাটি চালান, চাল পড়া প্রভৃতি পদ্ধতির গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। এসব টোটকা পদ্ধতি প্রয়োগ করে চোর ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি। উল্টো মানহানির কেস খেতে হয়। এ রকম সাক্ষ্য-প্রমাণহীন ঘটনার জন্য রয়েছে পুলিশ রিমান্ড। ৫৪ ধারার ক্ষমতাবলে পুলিশ যখন-তখন যাকে তাকে গ্রেফতার করতে পরে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার ক্ষমতাবলে রিমান্ডেও নিতে পারে। দু’টি ধারাই মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। তা ছাড়া ধারা দু’টির রয়েছে ব্যাপক অপপ্রয়োগও। কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার ঘটনা। ‘গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার’। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আসামিরা স্বেচ্ছায় হত্যার কথা স্বীকার করার পর জীবিত কিশোরী ফিরে আসার ঘটনায় সবাই নড়েচড়ে বসেন। এ বিষয়ে আদালতপাড়ায়, ‘জনৈক মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে এমপির ঘুম হারাম। কারণ মন্ত্রীর রাজি-খুশির ওপর নির্ভর করে এমপির উন্নতি-অবনতি ও ভূত-ভবিষ্যৎ। তাই নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ রাজসিক সংবর্ধনার আয়োজন। মন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্য দানকালে লক্ষ করেন, গলায় চেইন নেই। বিদেশ থেকে আনা ২২ ক্যারেটের আড়াই ভরি ওজনের খাঁটি স্বর্ণের চেইন। মঞ্চে প্রবেশের আগে যেসব ভক্ত মন্ত্রীর গলায় গণহারে মাল্যদান করেছিলেন সে ভক্তদের মধ্যেই ছিল ছিনতাইকারী। কিসের বক্তব্য, কিসের কী? এমপি সাহেবকে ডেকে, ‘এই বেটা এমপির পো এমপি, কুল্লে চোর-ছ্যাঁচড় নিয়ে চলিস, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমার চেইন উদ্ধার না হলে তোর এমপিগিরি খতমসহ এলাকার সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ।’
এরকম চরম ঘোষণা দিয়েই হনহন করে সভা ত্যাগ করেন মন্ত্রী। এসপিসহ জরুরি সভায় বসেন এমপি সাহেব। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চোর ধরাসহ মন্ত্রীর স্বর্ণের চেইন উদ্ধার চাই। ব্যর্থ হলে আইন রক্ষাবাহিনীর সব সুবিধা বন্ধ করে সবাইকে বান্দরবান পাঠানো হবে। শুরু হয় চিরুনি অভিযান। এলাকার সব দুষ্কৃতকারী বরাবর এই মর্মে রেড অ্যালার্ট জারি হলো যে, ‘স্বেচ্ছায় স্বীকারসহ ছিনতাইকৃত চেইন ফিরিয়ে না দিলে পুলিশের এনকাউন্টার থেকে একজনও বাঁচবে না।’

৭২ ঘণ্টার আগেই চোরসহ গোটা পাঁচেক স্বর্ণের চেইন নিয়ে মন্ত্রীর বাসায় হাজির হন এমপি ও এসপি সাহেব। গর্বিত এসপি ও এমপি মন্ত্রী সমীপে পাঁচটি চেইনসহ চোরদের হাজির করে,

-এদের সবাই দক্ষ ছিনতাইকারী ও চোর। এর মধ্যে পাঁচজন স্বীকারোক্তিসহ চেইন ফেরত দিয়েছে। আপনার চেইনের আইডেন্টিফিকেশন না থাকায় পাঁচটি চেইনই নিয়ে এসেছি। আপনার চেইন ফিরিয়ে নেয়াসহ চোরদের বিচার আপনার নিজ হাতে করুন।

স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিসহ চেইন উদ্ধারের কৃতিত্ব ও মহিমা শ্রবণ করার পর মন্ত্রী মহোদয়, -স্যরি, সেদিন চেইনটা ভুল করে বাসায়ই ফেলে গিয়েছিলাম।’
এ গল্পটি প্রায়ই শোনা যায়।

প্যান্টের টাকা খোয়া যাওয়ার তালিকায় কাজের বুয়া, কেয়ারটেকার ও লন্ড্রি দোকানদার তিনজনই সন্দেহভাজন। তিনজনেরই কেউ না কেউ টাকাটা মেরে দিয়েছে। টাকা ফেরত না পেলে কাল থেকে এই লন্ড্রিতে কাপড় ইস্ত্রি করা বন্ধ। তাড়িয়ে দেবো বুয়াকেও। সবার সাথে যখন সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছি তখন সহাস্যে সালমা, ‘এই নিন আপনার টাকা, গুনে দেখেন ঠিক আছে কি না।’

বিস্মিত হয়ে উঠে বসি। টাকা হাতে নিয়ে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, এগুলো খোয়া যাওয়া টাকা। ঘটনা এই যে, যখন তর্জন-গর্জন শুরু করি সালমা তখন ছেলের কাছে। আমার তর্জন-গর্জনে কান না দিয়ে, টাকাটা এখন কার হাতে? এ বিষয়ে মা ও ছেলে অঙ্ক কষতে শুরু করেছিল। তাই আমার তর্জন-গর্জনে কান দিতে পারেনি। সাথে সাথে ঈশা খাঁকে পাঠানো হয় লন্ড্রি দোকানে। তাকে এই বলে পাঠানো হয় যে, ইস্ত্রি না হয়ে থাকলে কাপড়গুলো যে অবস্থায় রেখে এসেছিল সে অবস্থায়ই যেন ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ফিরিয়ে আনার পর প্যান্ট হাতে নিয়ে দেখা গেল, টাকা যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানেই আছে, একটুও নড়েনি। মাঝখানে নড়তে শুরু করেছিল আমার ঈমান।

দুই কাঠুরিয়া। গলায় গলায় ভাব। গভীর বন্ধুত্ব দুই কাঠুরিয়া পরিবারের মধ্যেও। এক পরিবার আরেক পরিবার ছাড়া ভালো সালনটাও পেটে যায় না। এক সাথে বনে যায়, এক সাথে কাঠ কাটে, বিক্রি করে, বাজার করে বাড়ি ফিরে এক সাথে। তাদের ধনের অভাব থাকলেও সুখ-স্বস্তির অভাব ছিল না। এর মধ্যে একদিন জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে কুঠার হারিয়ে যায় এক বন্ধুর। সন্দেহ শুরু হয় অপর বন্ধুকে। সময় যত বাড়ে, সন্দেহ তত বাড়ে। বন্ধুর দৈনন্দিন কাজকর্ম, চালচলন, কথাবার্তা, রীতিনীতি সবই চোরের মতো। দুশ্চরিত্র বন্ধুর মুখ দেখাও বন্ধ। অশান্তি আর অশান্তি। অশান্তির চরম অবস্থায় একদিন ফিরে পায় কুঠারটি। পাল্টে যায় ভাবনা। আবার আগের মতো বন্ধুর সুচরিত্র ফিরে আসে বন্ধুর মাঝে।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
adv.zainulabedin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
মাথাপিছু আয় এখন ২৭৮৪ মার্কিন ডলার : বিবিএস কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী রিমার্ক-হারল্যানের নতুন পরিচালক ইউনিলিভারের সামি সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে বার্তা দিচ্ছে চুয়াডাঙ্গায় বিএন‌পি নেতার লাশ মিল‌ল পাটক্ষেতে কক্সবাজারে ভোট শেষে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত ভোটার উপস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক : ওবায়দুল কাদের চকরিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান হলেন ফজলুল করিম এ বছর রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার পাচ্ছেন ২০ শিল্প প্রতিষ্ঠান জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারসহ ১১ জনের কারাদণ্ড শিয়ালের টানাহেঁচড়া দেখে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল এক নারী ও দুই শিশুর লাশ

সকল