নেপালে প্রচণ্ড সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে উঠেছে
- বিবিসি
- ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নেপালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সংযুক্ত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) বা সিপিএন ইউএমএল জোট বদল করে নেপালি কংগ্রেসের সাথে হাত মেলানোর কারণে সে দেশে মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ডর সরকারের পতন এখন সময়ের অপেক্ষা। সিপিএন ইউএমএলের সমর্থন নিয়েই এতদিন সরকার চালাচ্ছিলেন মাওবাদী পার্টির নেতা দাহাল। কিন্তু এখন ওলির দল সেই সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে নেপালি কংগ্রেসের সাথে নতুন জোট গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সিপিএন ইউএমএলের উপ-মহাসচিব ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ ঝাবালি নতুন জোট গড়ার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গত এক মাস ধরেই নেপালি কংগ্রেসের সাথে জাতীয় স্তরের একটি জোট গড়ার জন্য আলোচনা চালাচ্ছিলেন। অবিশ্বাসের পরিবেশটা সেখান থেকেই তৈরি হয়।’
‘নেপালি কংগ্রেস যখন প্রচণ্ডর প্রস্তাব খারিজ করে দেয়, তারপরে আমরা নেপালি কংগ্রেসের সাথে জোট নিয়ে আলোচনা শুরু করি’, জানান তিনি। নেপালের ২৭৫ আসনের ‘প্রতিনিধি সভা’ বা পার্লামেন্টে দাহালের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী সেন্টার) দলটির মাত্র ৩২ জন সদস্য আছেন। অন্যদিকে কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সিপিএন ইউএমএল দলটির হাতে আছে ৭৮টি আসন।
দাহালের মাওবাদী পার্টি ও নেপালি কংগ্রেস ২০২২ সালের সাধারণ নির্বাচনের জোট বেঁধে লড়াই করেছিল। সেই ভোটে নেপালি কংগ্রেস ৮৯টি আসনে জিতে একক সর্ববৃহৎ দল হয়েছিল।
এখন নেপালি কংগ্রেসের সাথে ওলির সিপিএন ইউএমএল জোট গড়ায় দাহালের সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। তার পদত্যাগ এখন সময়ের অপেক্ষা। ওলির দলের যে আটজন মন্ত্রী আছেন দাহালের ক্যাবিনেটে, তাদের সবাইকে পদত্যাগ করতে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সরকার গড়ার জন্য নেপালি কংগ্রেসের সাথে সিপিএন ইউএমএলের সমঝোতা অনুযায়ী প্রথমে ওলি প্রধানমন্ত্রী হবেন আর পরের পর্যায়ে নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দেউবা বসবেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে।
নেপালের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি যেদিন সচিবালয়ে জমা দেবে সিপিএন ইউএমএল, সেদিন থেকে এক মাসের মধ্যে নতুন সরকার গড়তে হবে। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে আরো আগেই নতুন সরকার গড়া সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য দাহালকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। তবে দাহাল পদত্যাগ না করে পার্লামেন্টে আস্থাভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আস্থা ভোট নেয়ার জন্য সংবিধান অনুযায়ী সব থেকে বেশি যতটা সময় পাওয়া যেতে পারে, পুষ্প কমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’ ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই আস্থাভোটের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। নেপালের সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও নেপালি কংগ্রেসের সাবেক নেতা রাধেশ্যাম অধিকারী বলেছেন, ‘ওলির ইউএমএল দল সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের নোটিশ দেয়ার দিন থেকে ৩০ দিন গোনা শুরু হয়ে যাবে। তবে দাহাল আগেও পদত্যাগ করতে পারেন।’
নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন ইউএমএলের মধ্যে সমঝোতা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের মতামত দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এর একটা কারণ এ দু’টি দলই একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আর এখন তারা সরকার গড়ার জন্য সমঝোতা করছে।
একদিকে নেপালি কংগ্রেস সে দেশের পার্লামেন্টে সবথেকে বড় দল আর সিপিএন ইউএমএল রয়েছে দুই নম্বরে।
নেপালি কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রকাশ শরণ মাহাত বলছেন, ‘দুই বড় রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই প্রধানমন্ত্রীর উচিত এখন তার চেয়ার ছেড়ে সরে যাওয়া।’ ‘নতুন জোটের প্রতি আরো বেশ কিছু সংগঠন তাদের সমর্থন জানিয়েছে। আমরাও প্রচণ্ডকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছি’, তিনি জানান।
মাওবাদীদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক সিনিয়র আইনজীবীও বলছেন যে যদিও সংবিধান অনুযায়ী আরো এক মাস দাহাল প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে যেতে পারবেন, তবে পদ আঁকড়ে থাকাটা অনৈতিক। মাওবাদী পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ওই সিনিয়র আইনজীবী রাম নারায়ণ বিদারির কথায়, ‘আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে আমার মতামত জানতে চান, তাহলে আমি বলব প্রধানমন্ত্রীর আগেই পদত্যাগ করা উচিত, কারণ আস্থা ভোটে জেতার মতো সমর্থন তার কোনোভাবেই নেই।’
আবার নেপালি কংগ্রেসের এক সাবেক নেতা ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলছেন, ‘পার্লামেন্টের সবথেকে বড় দু’টি দল যখন একসাথে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা সরকার গঠন করবে, তখনই তো বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক বৈধতা শেষ হয়ে গেছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা