গাজায় জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান আরব লিগের
এবারই প্রথম আরব লিগ লিখিত আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানাল- খালিজ টাইমস
- ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
গাজা উপত্যকা ও পশ্চিমতীরে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে আরব লিগ। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কটের অবসানে দ্বিরাষ্ট্র তত্ত্ব বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি বর্বরতায় ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়া গাজা ও পশ্চিমতীরে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি এ নিয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অবলম্বনের একটি সীমারেখা বেঁধে দেয়ার জন্যও নিরাপত্তা পরিষদকে বৃহস্পতিবার আহ্বান জানিয়েছে আরব লিগ। উল্লেখ্য, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ঘিরে এর আগেও কূটনীতিকরা জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী নিয়োগের কথা বলেছেন। কিন্তু এবারই প্রথম আরব লিগের মত একটি বহুজাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে লিখিতাকারে জাতিসঙ্ঘ সমীপে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হলো বলে মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক জানান।
প্রসঙ্গত, গাজা এবং পশ্চিমতীরে শান্তিরক্ষী নিয়োগের এ অনুরোধ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কারণ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ব্যতীত দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতপূর্ণ কোনো এলাকাতেই শান্তিরক্ষী প্রেরণ করা যায় না। এ ছাড়া শান্তিরক্ষীরা কখনোই যুদ্ধরত অঞ্চলে প্রবেশ করে না কিংবা নিজেরা যুদ্ধেও লিপ্ত হয় না। এ অবস্থায় হামাস ও ইসরাইল উভয়কেই সম্মত হতে হবে সেখানে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী প্রেরণের ব্যাপারে।
ফারহান হক বলেন, প্রথমে সেখানে শান্তি বজায় রাখতে হবে। কারণ আমরা কখনো যুদ্ধ চলছে এমন রণাঙ্গনে যাই না। সঙ্ঘাতরত পক্ষগুলোকে সেখানে শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতির সম্মতি দিতে হবে। আমরা কখনো শত্রুবাহিনী বা দখলদার বাহিনী হিসেবে কোথাও যাই না। গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বাহরাইনের মানামায় বৃহস্পতিবার ২২ সদস্যবিশিষ্ট আরব লিগের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে প্রদত্ত বিবৃতির পরই জাতিসঙ্ঘ সমীপে উপরোক্ত অনুরোধ জানানো হয়।
নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে ফারহান হক আরো বলেন, শান্তিরক্ষী মোতায়েনের অনুরোধের সাথে আরব লিগের পক্ষ থেকে একটি সম্মেলন আহবানের অনুরোধ জানানো হয়েছে যুদ্ধ বিরতির মধ্যদিয়ে ঐ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে। তবে সেই সম্মেলন কিভাবে কোথায় করা উচিত তা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। আরব লিগের এ অনুরোধে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাইডেন প্রশাসনের সাপোর্ট থাকবে কি না জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের জানান, অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ফলে হামাস নিধনে ইসরাইলের অভিযানের সাথে আপসকামিতা হতে পারে।
আলব লিগের এই সম্মেলনে বক্তব্যকালে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্র তত্ত্ব বাস্তবায়নই কেবলমাত্র চলমান দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের স্থায়ী অবসান ঘটাতে পারে। মহাসচিব উল্লেখ করেছেন, গাজা যুদ্ধকে চলতে দেয়ার অর্থ হবে পুরো অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়ার হুমকি। ৭ অক্টোবর হামাস কর্তৃক ইসরাইলিদের ওপর আক্রমণ অথবা গণহারে ফিলিস্তিনিদের শাস্তি প্রদান, কোনোটিই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
পাশাপাশি দুই-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসঙ্ঘের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহ্বান জানান বাহরাইনের রাজা হামাদ এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে এই জোট। মাহমুদ আব্বাস হামাসকে ইসরাইলি আগ্রাসনের জন্য হামাসকে দায়ী করে বলেন, হামাসই ৭ অক্টোবর হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনে হামলার ন্যায্যতা দিয়েছে। এ ছাড়া এই সম্মেলন থেকে ফিলিস্তিনের সব পক্ষকে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) অধীনে আসার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ফিলিস্তিনের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে তারা শুধুমাত্র পিএলওকে স্বীকৃতি দেয়। পিএলও গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এতে ক্ষমতাসীন ফাতাহ পার্টির আধিপত্য রয়েছে।
যুদ্ধ শেষে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র গাজায় চলমান সঙ্ঘাত শেষে ফিলিস্তিন উপত্যকাটিতে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে। ওয়াশিংটন ওই শান্তিরক্ষী বাহিনীতে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও মরক্কোকে সেনা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য, সঙ্ঘাত শেষে গাজায় আবার হামাসের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ঠেকাতে এবং উপত্যকাটিকে নিরাপদ করতেই এমন পদক্ষেপ চায় তারা।
মিসর, ইউএই ও মরক্কো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের একটি শর্ত রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এমন কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়নের আগে দেশ তিনটি চায়, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিক যুক্তরাষ্ট্র।
ওই খবরে আরো বলা হয়েছে, গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিজেদের সেনাদের যুক্ত করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলো। যদিও গাজায় কোনো এক ধরনের শান্তিরক্ষী বাহিনীর মোতায়েনের পক্ষে সায় দিয়েছে তারা। কারণ সঙ্ঘাত শেষে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অবস্থানের বিকল্প কোনো বাহিনী আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিরোধিতা করে আসছেন। পশ্চিমা এক কর্মকর্তা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন, এটি নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে চায় না ইসরাইল। আর আরব দেশগুলো পশ্চিমাদের কাছে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে পশ্চিমাদের মধ্যে খুব কম দেশই এই স্বীকৃতি দেয়ার কাছাকাছি রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা