ইসরাইলকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জবাব দেয়ার হুমকি ইরানের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
- দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনায় পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
- ইরানে ইসরাইলের হামলার ঘটনায় বাইডেন প্রশাসনের মুখে কুলুপ
- ইস্পাহানে হামলার পাল্টা জবাব না দেয়ার ইঙ্গিত তেহরানের
হামলা-পাল্টা হামলা ঘিরে তৈরি হওয়া চরম উত্তেজনার মাঝে আবারো ইসরাইলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান। গত শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইসরাইল তেহরানের স্বার্থবিরোধী কাজ করলে ইরান তাৎক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জবাব দেবে। একই সাথে শুক্রবার ইরানের ইস্পাহান শহরে হওয়া হামলার ঘটনায় তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। খবর : রয়টার্স, এনবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্ট।
আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, শুক্রবারের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ইসরাইলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এনবিসি নিউজকে তিনি বলেছেন, ড্রোনগুলো ইরানের ভেতর থেকে ছোড়া হয়েছে এবং কয়েক শ’ মিটার উড়ে যাওয়ার পর সেগুলো ভূপাতিত হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এগুলো ড্রোন নয়; তবে খেলনার মতো। যা দিয়ে আমাদের শিশুরা খেলাধুলা করে। আর এসবের সাথে ইসরাইলের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ এখনো আমরা পাইনি। ইরান বিষয়টি তদন্ত করছে। তেহরানের তথ্য অনুযায়ী, গণমাধ্যমে আসা তথ্য সঠিক নয়।
ইরানের সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম বলছে, শুক্রবার ভোরের দিকে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইস্পাহান শহরে তিনটি ড্রোন আঘাত হেনেছে। এর ফলে সেখানে ছোট বিস্ফোরণ ঘটেছে। তারা এই ঘটনাকে ইসরাইলের পরিবর্তে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ আক্রমণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে গেছেন।
ইসরাইল যদি প্রতিশোধ নেয় এবং ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাহলে তেহরানের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কঠোর হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তিনি বলেন, ‘যদি ইসরাইল আরেকবার দুঃসাহসিকতা দেখায় এবং ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করতে চায়, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক এবং সর্বোচ্চ স্তরের হবে।’ শুক্রবার গভীর রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলের ইস্পাহান শহরের কাছের একটি বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে কৌশলগত কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়েছে এসব ড্রোন। এ ছাড়া এই হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি।
ইসরাইল এই হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিøঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো আক্রমণাত্মক অভিযান চালায়নি। যদিও হোয়াইট হাউজ বলেছে, এই বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই।
বাইডেন প্রশাসনের মুখে কুলুপ : যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরাইলের হামলার ঘটনায় তাদের প্রকাশ্যে মন্তব্য না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন থেকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে যেন সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদেরও চুপ থাকার খবরটিও সামনে এলো।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা দফতর, পররাষ্ট্র দফতর এবং অন্য সংস্থার কর্মকর্তারা এ অভিযান নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, এ প্রসঙ্গে কথা না বলার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশ পেয়েছেন তারা। এ মার্কিন কর্মকর্তারা আশা করছেন, ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ হামলা-পাল্টা হামলার চক্রটি গত শুক্রবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল : ইরানের বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ঠেকাতে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্রে সহযোগিতা ইঙ্গিত দিতে পারে যে, ইরান ও ইসরাইল ছায়াযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার ফলে আগামীতে যা-ই ঘটুক না কেন ওয়াশিংটনের খুব ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের ও দীর্ঘমেয়াদি সঙ্ঘাতের জন্য প্রস্তুত নয় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
সঙ্কট আরো তীব্র হলে পেন্টাগনকে হয়তো অঞ্চলটিতে নিজেদের সামরিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা লাগবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে দায়িত্ব পালন করা সাবেক মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব মাইকেল মুলরয় বলেছেন, যদি ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ হয়, আর আমরা ইসরাইলিদের সমর্থন দিতে চাই, তাহলে সেটির জন্য প্রয়োজনীয় সব বাহিনী রয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
অবশ্য তেহরান ইঙ্গিত দিয়েছে, শুক্রবার ইসরাইলি হামলার জবাব দেয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের তাদের নেই। গত কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। যে যুদ্ধ প্রতিহত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। অক্টোবরে ইসরাইলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতা উসকে দিয়েছে। অঞ্চলটিতে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ গত কয়েক বছরে অঞ্চলটিতে ধীরে ধীরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমে আসছিল।
কিন্তু যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানে থাকা নতুন এসব মার্কিন সেনারা আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন এবং তাদের এই মোতায়েন সাময়িক। ইরান ও ইসরাইল ছায়াযুদ্ধের আড়াল থেকে প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সেনা বাড়ানোর কৌশলের ওপর নির্ভরতার মার্কিন কৌশলটি পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাদের নেতৃত্ব দেয়া অবসরপ্রাপ্ত চার তারকা জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলেছেন, আমার মনে হয় মার্কিন সেনাবাহিনীর এই পরিস্থিতির অর্থ হলো, অঞ্চলটিতে আমাদের প্রয়োজনীয় ও দীর্ঘমেয়াদে সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখার ধারণাটি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা