আইএসের দায় স্বীকার নিয়ে সন্দিহান রাশিয়া
- রয়টার্স
- ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
মস্কোতে কনসার্টে হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাবিতে সন্দেহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। সোমবার দেশটি বলেছে, মস্কোর বাইরে একটি কনসার্ট হলে বন্দুক হামলায় আইএসের দায় স্বীকার নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে তাদের।
শুক্রবার রাতের ওই হামলায় ১৩৭ জন নিহত এবং আরো ১৮২ জন আহত হন। গত দুই দশকের মধ্যে রাশিয়ায় হওয়া সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ছিল এটি। ওই দিন রাতে ক্রোকাস সিটি হলে সোভিয়েত-যুগের রক গ্রুপ পিকনিক এর হিট গান ‘অ্যাফ্রেড অব নাথিং’ গাওয়ার কথা ছিল। এর ঠিক আগে, চার বন্দুকধারী কনসার্ট হলে এলোপাতাড়ি গুলি চালানোর পর বিস্ফোরণ ঘটায়।
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে চারজনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে রাশিয়া। রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত একজন তাজিকস্তানের নাগরিক। মস্কোর বাসমানি জেলা আদালতে তাদের প্রত্যেককে খাঁচায় বন্দী করে আলাদাভাবে হাজির করেছিলেন ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস অফিসাররা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে বলেছে, তাদের বিশ্বাস আইএস এই হামলা চালিয়েছে। এমনকি এই ঘটনার দায় স্বীকার করে হামলার কয়েকটি ফুটেজও প্রকাশ করেছে গোষ্ঠীটি। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি মাসের শুরুতেই একটি আসন্ন হামলার বিষয়ে রাশিয়াকে গোয়েন্দাদের সতর্ক করেছিলেন তারা।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন প্রকাশ্যে হামলাকারীদের সাথে আইএসের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেননি। তিনি জোর দাবি করেছেন, গ্রেফতার করা সন্দেহভাজনরা ইউক্রেনে পালানোর চেষ্টা করছিল।
পুতিন বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষের’ কিছু ব্যক্তি সীমান্তের ওপারে বন্দুকধারীদের আত্মগোপনে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
এই হামলায় যেকোনো ধরনের ভূমিকার কথা অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। বরং পুতিনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিন বারবার ইউক্রেনের নাম উল্লেখ করে দেশটির ওপর এ হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।
ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাওয়া ইসলামিক স্টেট আইএস কনসার্ট হলে হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। কমসোমলস্কায়া প্রাভদা সংবাদপত্রের একটি আর্টিকেলের জন্য দেয়া সাক্ষাৎকারে জাখারোভা বলেছেন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন। হোয়াইট হাউজের কাছে একটি প্রশ্ন রাখছি : আপনি কি নিশ্চিত এটি আইএস ঘটিয়েছে? এ নিয়ে আপনার কি আরেকটু ভাবা উচিত না?
জাখারোভা বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভে তাদের অবস্থান লুকানোর জন্য ইসলামিক স্টেটের একটি ভয়ঙ্কর গল্পের সংস্করণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাঠকদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর সাথে লড়াই করা ‘মুজাহিদিন’ যোদ্ধাদের সমর্থন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দুই মার্কিন কর্মকর্তা শুক্রবার বলেছেন, ইসলামিক স্টেটের দায় স্বীকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য।
পুতিন বলেন, ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চার সন্দেহভাজন বন্দুকধারী রয়েছে। তারা কনসার্ট হল থেকে পালিয়ে মস্কো থেকে প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার (২১০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেনের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করার ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সেগুলো যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
একটি ভিডিওতে সন্দেহভাজনদের মধ্যে একজনকে তার কানের কিছু কাটা অংশ মুখে ঢোকানো অবস্থায় দেখা গেছে। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ পড়ে শোনানোর সময় দালেরদজন মিরজোয়েভ নামে এক তাজিক ব্যক্তি কাচের খাঁচার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। এ সময় সাইদক্রমী রচবলীজোদা নামে আরেক ব্যক্তি কানে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে পড়েন।
মুহম্মদসবির ফয়জভ নামে আরেকজন হাসপাতালের পোশাক পরিহিত অবস্থায় হাজির হয়েছিলেন। তিনি একটি মেডিক্যাল চেয়ারে বসেছিলেন। তার মুখ ভর্তি কাটা দাগ ছিল। আর থেঁতলানো মুখ নিয়ে শামসিদ্দিন ফরিদুনি দাঁড়িয়েছিলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন। এর মধ্য দিয়ে পূর্ব ইউক্রেনে আট বছরের সঙ্ঘাতের পর একটি বড় ইউরোপীয় যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। একদিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী এবং অন্য দিকে রাশিয়াপন্থী ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ার প্রক্সি যোদ্ধারা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। রাশিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য দেশটিকে কোটি কোটি ডলারের অর্থ, সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা প্রসারিত করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা