জামালপুর পাঁচ উপজেলায় ভাঙন, আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ
- খাদেমুল বাবুল, জামালপুর
- ২৪ জুন ২০২৪, ১৮:২৬
জাতীয় নদী যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও স্থানীয় নদী ঝিনাই, জিনজিরাম ও দশাআনিসহ জামালপুরের নদীগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন।
জেলার অন্তত পাঁচটি উপজেলার অর্ধশত স্পষ্টে চলছে নদী ভাঙনের এই খেলা। এসব উপজেলার মধ্যে রয়েছে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী। উজানের পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর শুরু হয় এই নদী ভাঙন। তবে গতকাল থেকে নদনদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, নদীর পানি কমার সাথে সাথে নদীর পাড় জেগে ওঠতে শুরু করেছে। সাথে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
গত তিন সপ্তাহে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নে তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক শ’ একর ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে অন্তত দেড় হাজারেও অধিক পরিবার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি- ভাঙন ঠেকাতে সমন্বিত সমীক্ষা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, দুই সপ্তাহ আগেও এখানে ছিল একটি সড়ক ও অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর। ছিলো কয়েক শ’ একর ফসলি জমিও। নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনা নদী রাক্ষসী রূপ ধারণ করে। একের পর এক গ্রাস করতে থাকে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বর্তমানে এর কিছুই নেই এখানে। শুধু অথই পানি আর পানি।
তারা বলেন, গত তিন সপ্তাহে অর্শতাধিক ঘরবাড়ি গ্রাস করেছে যমুনা নদী। ঘরবাড়ি-ভিটামাটি ও ফসিল জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। যমুনার তীব্র স্রোতে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের চর ডাতাকিয়া, কাজলাপাড়া, মণ্ডল বাজার, বরখাল, হাজারীগ্রাম, খানপাড়া, পলাশপুর, জালিপাড়া ও মাঝিপাড়া গ্রামে ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে যমুনার তীব্র ভাঙন। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
ইতোমধ্যে একটি প্রাইমারি স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, ডাকাতিয়া গুচ্ছগ্রাম, আদর্শ গ্রামসহ ১০টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এছাড়া ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দী, বেলগাছা, নোয়ারপাড়া, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নে পাকরুল, সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনার চর, আওনা ইউনিয়নের বনছার চর, নিলকুটির ও পিকনা ইউনিয়নের নলসন্ধা এলাকায় যমুনার তীব্র ভাঙন চলছে।
জিনজিরাম, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর গাজীরপাড়া, কতুবের চর, শেকপাড়া, আইরমারী খান পাড়া, কতুবের চর, বাংগালপাড়া, পূর্ব কলকিহারা গ্রাম। এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কুতুবের চর জামে মসজিদ, বসতভিটা, ফসলি জমি, গ্রামীণ রাস্তাঘাট। নদী হুমকির মধ্যে পড়েছে কুতুবের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেকোনো সময় নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে বিদ্যালয়টি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: মজনুর রহমান জানান, নদী ভাঙনে ভিটামাটিহারা পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আড়াই টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অহনা জিন্নাত বলেন, ‘কুতুবের চরে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে ৫০০ জিও ব্যাগ ড্রাম্পিং -এর কাজ শুরু করা হবে।’
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বরখাল গ্রামের মফিজ উদ্দিন বলেন, বরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেলোয়ার হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় আমাদের গর্ব ও স্মৃতি। আমাদের ঘরবাড়ি, জমিজিরাত তো গেছেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি রক্ষা করা না হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
এলাকাবাসী জানান, কয়েক ধরে বছরে এই অঞ্চলে নদী ভাঙন চললেও ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে সরকার এটাই দাবি তাদের।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন রোধে সমীক্ষা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, বরখাল এলকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেলোয়ার হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু স্থাপনা নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ২০০ মিটার এলাকা তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ড্রম্পিং -এর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সার্বিকভাবে যমুনার বামতীর সংরক্ষণের জন্য সমন্বিত একটি সমীক্ষা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা