২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ভালুকায় গৃহবধূকে হত্যা : স্বামী গ্রেফতার

ভালুকায় গৃহবধূকে হত্যা : স্বামী গ্রেফতার - নয়া দিগন্ত

ময়মনসিংহের ভালুকায় স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার মামলার প্রধান আসামি গৃহবধূর স্বামী সোহেল মিয়াকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে, প্রধান আসামির মা সুফিয়া খাতুনকে (৫৭) গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

বুধবার (৮ মে) সন্ধ্যায় মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকার একটি গেস্টহাউজ থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

মামলার অপর দুই আসামি সোহেলের খালা মিনারা খাতুন (৬০) ও ভাই দোয়েল মিয়াকে (৩৭) গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মো: শাহ্ কামাল আকন্দ গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিরুপম নাগ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনার পর থেকেই প্রধান আসামিসহ অপরাপরদের গ্রেফতার অভিযানে নামেন। বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকার একটি গেস্টহাউজ থেকে সোহেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে সোহেলকে প্রথমে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ঘটনাস্থলের পাশে একটি ডোবা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, ঘাতক সোহেল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এবং সে জানিয়েছেন যে তার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িত থাকায় তাকে চাকরি করতে নিষেধ করা হলেও সে তার কথা শুনেননি। এর আগেও সে তার স্ত্রীকে বেশ কয়েকবার হত্যার পরিকল্পনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তাই স্ত্রীকে হত্যার আগেরদিন তার ছোট ছেলে সাব্বিরকে তার নানা বাড়ি পাঠিয়ে দেন এবং হেফজ পড়ুয়া বড় ছেলে সানি মাদরাসায় থাকায় স্ত্রীকে খুন করতে তেমন সমস্যা হয়নি।

ওসি আরো বলেন, ঘাতক সোহেল তার স্ত্রীকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে প্রথম শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে ঘর থেকে লাশটি বের করে নিয়ে প্রথম পুকুরপাড়ে নিয়ে রাখেন এবং বাড়ি থেকে একটি ছুরি নিয়ে আবার লাশটি নিয়ে যান বাড়ি থেকে ৩০০ গজ দূরে শামিম হোসেনের একটি ধানক্ষেতে। পরে ভোররাতে তার মৃত স্ত্রীর গলা কেটে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

ওসি জানান, সোহেলের মুখে দাড়ি থাকলেও পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য তা ফেলে প্রথম চলে যান খুলনায় এক বন্ধুর বাড়ি। কিন্তু তার বন্ধুকে না পেয়ে চলে যান ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলায়। ওই স্থান থেকে খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে মঙ্গলবার মধ্যরাতে যান ঢাকার গুলশানে। পরে সাভার ও আশুলিয়ায় যান এবং বুধবার দুপুরে সে টঙ্গীর রেলস্টেশন এলাকার একটি গেস্টহাউজে উঠলে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৭-১৮ বছর আগে উপজেলার পশ্চিম পশ্চিমকাচিনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আজহার আলীর ছেলে সোহেল রানার সাথে পালগাঁও গ্রামের হাছেন আলীর মেয়ে হাজেরা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে পারিবারিক কলহ লেগে থাকত। স্বামী সোহেল রানা তার ছোট ভাই দোয়েলের সাথে ঢাকায় বাসের হেলপারি করতেন। স্ত্রী হাজেরা খাতুন উপজেলার কাশর এলাকায় টিএম টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে পরকীয়া নিয়ে সন্দেহ করতেন। ধারণা করা হয়, পরকীয়া সন্দেহেই সোমবার (৬ মে) রাতের কোনো এক সময় সোহেল তার স্ত্রীকে ধারল অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে রাখেন। ঘটনা পর থেকেই পলাতক সোহেল।

এ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা মেয়ে হাছেন আলী জামাইসহ চারজনকে আসামি করে মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন নিহতের স্বামী সোহেল রানা (৪০), তার শাশুড়ি সুফিয়া খাতুন (৫৭), দেবর দোয়েল মিয়া (৩৭) ও খালা শাশুড়ি মিনারা খাতুন (৬০)। তাদের সবার বাড়ি উপজেলা পশ্চিম কাচিনা গ্রামে।


আরো সংবাদ



premium cement