রেস্টুরেন্ট দখলের অভিযোগ নায়িকা ববির

রাজধানীর গুলশানে চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববির রেস্টুরেন্ট ‘ববস্টার ডাইনিং’ দখল, লুটপাট, প্রতারণা, ব্যবসায়িক অংশীদারকে হত্যাচেষ্টা ও মারধর এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রেডওয়ার্কিড রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ববি এসব অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ববি বলেন, সৎভাবে জীবনযাবন অব্যাহত রেখে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় আমি গুলশান-২ এর ১১৩ নম্বর রোডের ওয়াই এন সেন্টারের একটি রেস্টুরেন্ট ক্রয় করি। রেস্টুরেন্টে অপারেশন পার্টনার হিসেবে রয়েছেন ববির পূর্বপরিচিত মির্জা বাশার। আগের রেস্টুরেন্টের মালিক আমানের সাথে তার রেস্টুরেন্টের সমুদয় আসবাবপত্র (ইন্টেরিয়র ও অন্যান্য) ৫৫ লাখ টাকা মূল্য ধরে একটি চুক্তি হয়।
একই সময়ে রেস্টুরেন্ট ভবনের (বিল্ডিং) মালিকের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন ও ছেলে জাওয়াদ আল মামুনের সাথে ভবন রেস্টুরেন্ট মালিকসহ আলোচনা করি। তখন শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ রেস্টুরেন্টটি আমাকে ভাড়া নিতে উৎসাহিত করেন এবং চলমান রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করলে তারা পরবর্তী সময়ে আমাদের নামে নতুন চুক্তিপত্র করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

তাদের প্রতিশ্রুতির পর আমরা আমানকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করি এবং টাকা পাওয়ার পর দিন আমানের সাথে আমাদের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তাকে দু’টি চেকও প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, গত এপ্রিল মাসে আমান আমাদের কাছে রেস্টুরেন্ট হস্তান্তর করেন। আমরা এপ্রিল থেকে রেস্টুরেন্টের ভাড়া প্রতি মাসে আড়াই লাখ ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধ করছি। ভবনের মালিক আমাদের নামে ভাড়া জমা নিয়ে রশিদও দেন। রেস্টুরেন্টে ওঠার পর আমরা ডেকোরেশন পরিবর্তনের কাজ শুরু করি। যাতে প্রায় এক মাস লাগে। ডেকোরেশনে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ পর্যায়ে আমরা রেস্টুরেন্ট পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করি এবং ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য আমরা ভবনের শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ আল মামুনকে চুক্তিপত্র, ফায়ার সেফটি ও বাণিজ্যিক অনুমতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেয়ার অনুরোধ করি।

তার অভিযোগ, ট্রেড লাইসেন্স করতে এসব কাগজপত্র চাওয়ার পর হঠাৎ করেই আগের রেস্টুরেন্ট মালিক আমান, ভবন মালিক শাহিনা ইয়াসমিন, তার ছেলে জাওয়াদ, ভবনের দায়িত্বে থাকা জয়, সাকিবসহ অন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাদের হয়রানি শুরু করেন। প্রথমে আমান তাকে পরিশোধ করা ১৫ লাখ টাকার বিষয় অস্বীকার করেন। যদিও তিনি ১৫ লাখ টাকা ক্যাশ বুঝে নিয়ে চাবি হস্তান্তর করেন।
অন্য দিকে শাহিনা ও জাওয়াদের নির্দেশে ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী জয়, সাকিব, হারুন ও তাদের সহযোগীরা বারবার রেস্টুরেন্টের বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে আমাকে হয়রানি শুরু করেন। এর মধ্যে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওয়ান গ্রুপ থেকে বারবার সন্ত্রাসী ও লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। ববি জানান, এ ঘটনার পর তিনি জানতে পারেন শাহিনা ইয়াসমিন গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের স্ত্রী এবং এই ভবনের মালিক গিয়াস উদ্দিন আল মামুন নিজেই।
এমন পরিস্থিতিতে বিপদের আশঙ্কা দেখে ট্রেড লাইসেন্সের বিষয়ে করণীয় কী সে পরামর্শ করতে আমরা সিটি করপোরেশনে গিয়ে জানতে পারেন, ওই বিল্ডিংয়ের কোনোরকম বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি নেই।
সর্বশেষ গত ২২ জুন রাত ১১টায় আমরা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে বেরিয়ে যাই। পরদিন ২৩ তারিখ সকালে রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা গেলে নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্যরা তাদের ঢুকতে বাধা দেয়। কেন ঢোকা যাবে না তার কোনো উত্তর দিতে পারে না। খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মির্জা বাশার সেখানে গেলে হঠাৎ করেই ১৫-২০ জনের সন্ত্রাসী দল তার ওপর আক্রমণ শুরু করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।
নিজের অর্থ খরচ করে ব্যবসা করতে নেমে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন দাবি করে চিত্রনায়িকা ববি বলেন, আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।

প্রতিপক্ষের বক্তব্য
এ দিকে চিত্রনায়িকা ববির বিরুদ্ধে চুরি ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। গত ২৩ জুন গুলশান থানায় মামলাটি করেন মুহাম্মাদ সাকিব উদ্দোজা। মামলার সত্যতা স্বীকার করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই মামলার দুই নম্বর আসামি ববি, এক নম্বর আসামি মির্জা আবুল বাশার (৩৪)।
মামলার বাদি মুহাম্মাদ সাকিব উদ্দোজা জানান, তাদের কাছ থেকে রেস্টুরেন্ট ভাড়া নেন আমান নামের একজন। এটার অবস্থান গুলশান-২ এর ১১৩ নম্বর সড়কে। আমান অর্থনৈতিকভাবে পুষিয়ে উঠতে পারছিলেন না। পরে ব্যবসায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যুক্ত করেন আবুল বাশার ও চিত্রনায়িকা ববিকে। রেস্টুরেন্টের জিনিসপত্র তারা কিনে নিয়েছেন। সেভাবেই চুক্তি করেন বলে জানান সাকিব। ব্যবসার অংশ হিসেবে চুক্তিমতো আমানকে ৫৫ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। ববি ও বাশার প্রথমে ১৫ লাখ, পরে ১০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। কিন্তু দু’টি চেকই ডিজঅনার হয়। এই টাকা চাওয়া নিয়েই আমান ও বাশার-ববির সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।