গাইবান্ধার নির্জন চরে হাজার কোটি টাকার গুপ্তধন! ষ নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৫ মে ২০২৪, ০১:৫৮
গাইবান্ধা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট দাড়িয়াপুর বাজারকে পার হয়ে আরো ৭ কিলোমিটার গেলে যমুনার তীরে কামারজানী লঞ্চঘাট। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পরপরই যাত্রীবাহী নৌকা একের পর এক ছেড়ে যায় দূরের চরগুলোতে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে শ্যালো মেশিনচালিত নৌকায় যেতে হয় মোল্লারচর।
নদীপথে উজান-ভাটি মিলিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টার একটানা যাত্রা। মাঝের একটি অংশে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা মিলেছে। চার দিকে শুধু পানি। নেই বসতি, গাছপালা বা প্রাণিকুল। আরো কিছুটা এগিয়ে দেখা মিলবে বিশাল বালুচরের। বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ স্থানটি। সামনে মাত্র দুই কিলোমিটার নদীপথ গেলেই গাইবান্ধার শেষ সীমানা হাতিমারাচর। এরপর শুরু কুড়িগ্রাম জেলার সীমানা। নির্জন মোল্লারচরে নৌকা ভিড়তেই সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয়ে চোখে পড়বে সাদা বালুকণা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন জ্বলছে। দৃশ্যটি সাধারণ মনে হলেও আসলে তা নয়। কারণ নদীর এ অংশে লুকিয়ে রয়েছে হাজার কোটি টাকার ‘গুপ্তধন’; যা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণার বরাত দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখানকার বালুতে থাকা মূল্যবান খনিজ পদার্থ যথাযথভাবে উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে।
গবেষণা যা বলছে : উত্তরের জেলা জয়পুরহাটে বিভিন্ন নদ-নদীর বালু থেকে ফ্লো-শিট নিরূপণসহ মূল্যবান মিনারেল পৃথক করার জন্য একটি মিনারেল প্রসেসিং (খনিজ পৃথকীকরণ) সেন্টার স্থাপন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। সেখানে গবেষণা করে ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে ৩-৫ শতাংশ মূল্যবান খনিজ পদার্থ আছে বলে নিশ্চিত হয়েছে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি (আইএমএমএম)।
মূল্যবান এসব খনিজ আহরণের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি যাচাই করতে রয়্যাল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আরএমআইটি) ও কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (সিএসআইআর) তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে পিএইচডি গবেষণা কার্যক্রম চালায় আইএমএমএম ও বিসিএসআইআর। এ গবেষণায় প্রস্তুত করা প্রবন্ধ (থিসিস) একটি আন্তর্জাতিকমানের সমীক্ষা রিপোর্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদের ওয়েবসাইটে এ রিপোর্ট প্রকাশের কারণে গুরুত্ব বুঝে নদীর খনিজ উত্তোলনে বহুজাতিক মাইনিং কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আইএমএমএমের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের বেসিনে (বুকে) নতুন করে পাঁচ মিলিয়ন টন মূল্যবান ভারী খনিজ কণিকা জমা হয়। আর এখান থেকেই বছরে কমপক্ষে ২৫০ মিলিয়ন টন (আগে থেকেই জমে থাকা) খনিজসমৃদ্ধ বালু সংগ্রহ করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পুরনো চরে ১০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত স্থানে ৩২ বিলিয়ন টন বালু রয়েছে, যার মধ্যেও উল্লিখিত মিনারেল (খনিজ) রয়েছে। এ ছাড়া কিছু নমুনায় মহামূল্যবান প্লাটিনাম, প্যালাডিয়াম, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। অদূর ভবিষ্যতে সুযোগ তৈরি হলে বালু থেকে এসব মহামূল্যবান ধাতু পৃথকীকরণে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মিলেছে মূল্যবান খনিজ পদার্থ : গবেষণার তথ্য বলছে, উত্তরের এ বিশাল নদীর বুকে বালুর মধ্যে মূল্যবান খনিজ রয়েছে। জয়পুরহাটে অবস্থিত আইএমএমএমের গবেষণাগারে পরীক্ষাকালে ১,৫০০ মেট্রিক টন বালু উত্তোলন করে খনিজ পৃথকীকরণ করা হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি টন বালু থেকে দুই কেজি ইলমিনাইট, ২০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায়। এসব খনিজের বিষয়ে আইএমএমএমের উচ্চপদস্থ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহ আলম ও সোহেল রানা জানান, রঙ, প্লাস্টিক, ওয়েল্ডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস ও ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় রুটাইল। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবান এ খনিজ রফতানি করছে। জিরকন ব্যবহৃত হয় সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও ছাঁচনির্মাণ বালুতে (মোল্ডিং স্যান্ড)। এটি অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, চীন, ব্রাজিল, সিয়েরা লিওন ও যুক্তরাষ্ট্র রফতানি করে।
ম্যাগনেটাইট চুম্বক ও ইস্পাত উৎপাদন, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা পরিষ্কার করা এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গভীর কূপ খননে ব্যবহার হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মূল্যবান এ খনিজটি রফতানি করে থাকে। গারনেট হলো ভারী ও মূল্যবান খনিজ। এটি ব্যবহার করা হয় শিরিষ কাগজ উৎপাদন, লোহাজাতীয় পাইপ পরিষ্কার ও বালুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত রফতানি করে এ খনিজ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা