ঝিনাই নদীতে ঝিনাই নেই এখন সবুজ ফসলের মাঠ
- খাদেমুল বাবুল, জামালপুর
- ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
ঝিনাই নদী জামালপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ছোট্ট নদী। মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের জঙ্গলদি এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ঝিনাই নদীর উৎপত্তি। উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের জঙ্গলদি নামক এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী উপজেলার উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত সরিষাবাড়ী উপজেলার জগন্নাথগঞ্জঘাট এলাকায় যমুনা নদীতে এসে পড়েছে ঝিনাই নদীটি।
জানা যায়, নয়ানগর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রাম ছাড়িয়ে সাধুপুর ভাঙা ব্রিজ পেরিয়ে ঝিনাই নদীর উৎসমুখ জঙ্গলদি বহিরচড় বা মেলান্দহ উপজেলা (৫নং চর)। উত্তরের দিগন্ত ছুঁয়ে দেখা যায় মেঘালয়ের গারো পাহাড়। উত্তরের গাড়ো পাহাড় থেকে দশআনী নদী এসে মিলিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে। আর ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণপাড় ভেঙে এখানেই উৎপত্তি হয়েছে ঝিনাই নদীর।
জনশ্রুতি আছে অতীতের কোনো এক সময় এ নদীতে প্রচুর ঝিনাই (ঝিনুক) পাওয়া যেত। আর এ নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে মুক্তা আহরণ করতেন জহুরিরা। সে অনুসারেই এ নদীর নামকরণই হয়ে যায় ঝিনাই নদী।
সাধুপুর এলাকার শামছুল আলম বলেন, এ নদী দিয়ে কোনো এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে হাজার মন মাল বোঝাই করে পালতোলা নৌকা জগন্নাথগঞ্জঘাট এলাকায় আনা-নেয়া করা হতো। এমন বিশাল নদীতে এখন পশু-পাখির পান করার মতো পানিটুকুও নেই। এক সময়ের গভীর ঝিনাই নদী এখন সবুজ ফসলের মাঠ।
জামালপুর সদর উপজেলার কম্পপুর এলাকার সহিদুর রহমান বলেন, ঝিনাই নদীর পানি দিয়ে এক সময় মেলান্দহ, জামালপুর এবং সরিষাবাড়ী উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ দেয়া হতো। মানুষের সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ, অপরিকল্পিত মাটি উত্তোলন ও দখলদারিত্বের কারণে মরে গেছে নদীটি।
কারো কারো মতে, ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের গতি পরিবর্তন হওয়ায় ঝিনাই নদীর মোহনা বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে মরে গেছে ঐতিহাসিক ঝিনাই নদীটি। ঝিনাই নদীর ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটার এখন মরা খাল আর ফসলের মাঠ।
মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ঝিনাই নদীটি খনন করা হলে এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা পেতো। পাশাপাশি পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হলে ফসলি জমিতে সেচ দেয়া সহজ হতো।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ঝিনাই নদীটি সংস্কারের বিষয়টি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনাধীন রয়েছে।