অ্যাফিলিয়েট সদস্যদের জন্য কাজ করতে চাই তাদের একজন হয়ে-লুৎফি হায়দার চৌধুরী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০২ মে ২০২৪, ১৪:৪৭
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর নির্বাচনে পরিচালক পদে নির্বাচন করছেন অ্যাডফিনিক্স লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফি হায়দার চৌধুরী। ‘টিম স্মার্ট’ থেকে অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরিতে পরিচালক পদে নির্বাচন করছেন লুৎফি।
নির্বাচিত হলে বেসিসের অ্যাফিলিয়েট সদস্যদের প্রতি সব সময় বিশেষ মনোযোগী থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বেসিসের স্ট্যান্ডিং কমিটিকেও আরো শক্তিশালি করার লক্ষ্যও তার। স্থানীয় বাজার সুরক্ষা ও সম্প্রসারণ এবং গ্লোবাল অ্যাডটেক প্ল্যাটফর্ম পেমেন্ট প্রক্রিয়া সহজতর করার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিচ্ছেন লুৎফি হায়দার চৌধুরী।
লুৎফি হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘স্মার্ট বেসিস গঠনে টিম স্মার্ট প্যানেলের পক্ষ থেকে আমি চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। আইটিইএস পরিষেবার ওপর জোর দেয়া, ডোমেইন নির্দিষ্ট পলিসি তৈরি, স্থানীয় বাজার সুরক্ষা ও সম্প্রসারণ ও গ্লোবাল অ্যাডটেক প্ল্যাটর্ফম পেমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করা। নির্বাচিত হলে আমি এই বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেবো। টেকওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের সাথে বেসিস নির্বাচন বিষয়ে আলোচনায় তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে কথা বলেন লুৎফি হায়দার চৌধুরী।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ইনফরমেশন টেকনোলজি পরিষেবার (আইটিএস) বাজার ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দেবার পর সারাদেশে ব্যক্তি পর্যায় হতে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ক্ষেত্রেই বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা বা ইনফরমেশন টেকনোলজি পরিষেবার (আইটিএস) ব্যবহার এবং চাহিদা।
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী আইটি পরিষেবা বাজারের আকার ছিল ১ দশমিক ২২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি যা ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশে বর্তমানে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার প্রায় দেড় শ’ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। পাশাপাশি রফতানি প্রায় ১৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। সুতরাং দেশে এবং বিশ্ববাজারে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার চাহিদা বাড়ছে। এই পরিষেবা খাতের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে ম্যানেজ সার্ভিস, অ্যাডেটেক, ফিনট্যাক, অ্যাজেন্সি, ট্রেনিং, হেলথটেক, মিডয়া অ্যান্টারটেইমেন্ট, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং পরিষেবা, সার্পোট অ্যান্ড হেল্প ডেস্কসহ আউটসোসিংয়ের মতো প্রযুক্তি ব্যবসাগুলো।
বেসিস সেই গুরুত্ব বুঝেই সদস্যদের জন্য আলাদা এই অ্যাফিলিয়েট ক্যাটাগরিটি তৈরি করেছে। কিন্তু আমরা কতটুকুই এই খাতের সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারছি, সেটা দেখার বিষয়। আমাদের মোট রফতানি আয়ের বড় একটা অংশ আসে আউটসোর্সিং হতে। বিশ্ব বাজারে চাহিদা আছে আমাদের সার্পোট সেবা বা হেল্প ডেস্ক সার্ভিসের। এই বিষয়গুলো সদস্যদের সাথে কাজ করবার সুযোগ আছে। আমি আমাদের এই ইনফরমেশন টেকনোলজি পরিষেবার (আইটিএস) বাজার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। কারণ ইনফরমেশন টেকনোলজি সেবাপণ্যের তুলনায় আইটিএস বাজার নেহায়েতই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এই খাতের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি।
এবারে আসি, এই ভিন্ন ভিন্ন পরিষেবার বাজার চাহিদা এবং সমস্যার বিষয়ে। প্রতিটি পরিষেবাই আলাদা করে এক একটা ডোমেইন হিসাবে যদি বিবেচনা করি, তাহলে সহজেই আমরা বুঝতে পারবো যে, প্রতিটি ডোমেইনেরই রয়েছে আলাদা আলাদা সুযোগ এবং আলাদা আলাদা সমস্যা। এক যদি আমরা তথ্যপ্রযুক্তি সেবাপণ্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এর নিরাপত্তা সেবা বা সিকিউরিটির কথা বলি কিংবা ফ্রিল্যান্সারদের অর্থ উর্পাজন এবং তা দেশের ব্যাকিং সেবার মাধ্যমে গ্রহণ করার কথা বলি, তাহলে দেখা যাবে, আমাদের সুযোগ গ্রহণের সাথে কত সমস্যা জড়িয়ে আছে। আর বিদ্যমান এই সমস্যাগুলো কোন জেনারেল পলিসি বা নীতিমালার আওতায় এনে সমাধান করা অনেকটাই জটিল। তাই আমি বেসিসের অ্যাফিলিয়েট সদস্যদের ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধানে প্রতিটি ডোমেইনের জন্য আলাদা আলাদা পলিসি ডেভেলপম্যান্টে কাজ করতে চাই।
আমরা যারা স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশে ইনফরমেশন টেকনোলজি পরিষেবার (আইটিএস) সরবরাহ করে আসছি তাদেরকে কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই প্রতিযোগিতা করতে হয় আর্ন্তজাতিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে। স্থানীয় বাজারে পরিষেবার প্রতি ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনায় রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। যা মোকাবেলা করতে না পারায় অনেক প্রতিষ্ঠানই আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়। তাই নির্বাচিত হলে আমার আগ্রহ আছে স্থানীয় বাজার সংরক্ষণ এবং এর প্রসারে কাজ করবার। কারণ আমরা মেধাবী এবং পরিশ্রমী। প্রয়োজন কেবল সঠিক কর্মপরিকল্পনা এবং মেন্টরশিপ।
ব্যবসার প্রসার এবং প্রচারে সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং যেখানে অ্যাডটেক (অ্যাডভারটাইজিং টেকনোলজি) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা ডিজিটাল মার্কেটিং করে তারা সাধারণত অ্যাডটেকের মাধ্যমেই ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ক্রয়-বিক্রয় এবং এর ব্যবস্থাপনা করে। এর দ্বারা বাজেটের সর্বোত্তম ব্যবহার করে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব। সারা বিশ্বে অ্যাডটেকের বাজার এখন ৯৮৭ দশমিক ৫২ মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং এর প্রবৃদ্ধির হার ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সেবার সাথে জড়িত আছে অ্যাড অ্যাজেন্সি, ডিমান্ড সাইট প্ল্যাটফর্ম, সাপ্লাই সাইট প্ল্যাটফর্ম, অ্যাড নেটওয়ার্ক, অ্যাড একচেঞ্জসহ অনেকগুলো বিষয়। এখানে পেমেন্ট প্রসেস বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাফিলিয়েট মেম্বারদের বড় একটি অংশ কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে। যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েট করছেন তারা কিন্তু দেশে বসেই রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তারা বিদেশ থেকে টাকা আনছে। তাদের প্রণোদনা যাতে আরো দ্রুত ত্বরান্বিত করা যায়, সে উদ্যোগ নেবো। এরমধ্যে ১০ থেকে কমিয়ে প্রণোদনা ৮ শতাংশ করা হয়েছে, প্রণোদনা পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়, আমরা বেসিস থেকে নজর রাখবো যাতে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। গুগল, ফেসবুকের পেমেন্ট নিয়ে এখনো যে ধোঁয়াশা রয়েছে, তাতে আমরা বিশেষ মনোযোগ দেবো। গ্লোবাল অ্যাডটেক প্ল্যাটফর্ম পেমেন্ট প্রক্রিয়া সহজতর করার বিষয়টিতে আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে চাই বেসিস সদস্যদের জন্য।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বেসিসের স্ট্যান্ডিং কমিটি হচ্ছে বেসিসের কার্যনির্বাহী কমিটির সহযোগী চালিকা শক্তি। আমি নির্বাচিত হলে যোগ্যতা অনুযায়ী এবং প্রত্যেক ডোমেইন স্পেসিফিকভাবে ধরে ধরে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাবো, যাতে তারা আমাদের সাথে একত্রে কাজ করেন। কারণ একজন পরিচালকের পক্ষে সবগুলো ব্যবসার সমস্যা বুঝা এবং সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠনে যোগ্য ও কাজ করতে আগ্রহীদের অগ্রাধিকার দেয়া সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
উল্লেখ্য, লুৎফির আইসিটি সেক্টরে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রায় ১৯ বছরের। প্রায় ১৪ বছর ইউরোপীয় ও দেশীয় স্টার্টআপ শিল্পে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ক্লিক বিডি, জিঅ্যান্ডআর, কিউবেক্স লিমিটেড ও ইউরোপীয়ান স্টার্টআপ এসকিমিসহ নানা প্রতিষ্ঠানে। ২০২০ সালে নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাডফিনিক্স লিমিটেড।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি