১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিনটি উপগ্রহে প্রাণের সন্ধান

তিনটি উপগ্রহে প্রাণের সন্ধান - সংগৃহীত

পৃথিবীর বাইরে কোথাও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায় কি-না তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। এজন্য সৌরজগতের বাইরের দিকের তিনটি উপগ্রহকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে নাসা। আজ এ সম্পর্কে জানবো...

নজর তিনটি চাঁদে
বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৬২.৭ কোটি কিলোমিটার। ১২০ কোটি কিলোমিটার দূরে আছে শনির চাঁদ এনসেলাডাস। আর নেপচুনের ট্রাইটনের অবস্থান ৪৪০ কোটি কিলোমিটার দূরে। সৌরজগতের দুই শতাধিক চাঁদের মধ্যে এই তিনটিতে প্রাণের সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

পানির প্রবাহ
নাসার বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই তিনটি উপগ্রহের ভূপৃষ্ঠের নিচে পানির প্রবাহ আছে, যেমনটা আছে পৃথিবীতেও। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের সূচনার জন্য যে পরিবেশ তেমনটা আছে ছিল সেখানেও।

হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট
পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের ছয় হাজার কিলোমিটার নিচে পর্যন্ত হাইড্রোথার্মাল ভেন্টসের অস্তিত্ব পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে একটা সময়ে এমনটা অবিশ্বাস্যই ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। সমুদ্রবিজ্ঞান আর খনিজ গবেষণায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসংখ্য অনুজীবের সন্ধান মিলেছে ভূগর্ভের এই সমুদ্রে। একইভাবে বৃহস্পতি, শনি আর নেপচুনের তিনটি উপগ্রহেও প্রাণের দেখা মিলতে পারে বলে ধারণা করছেন নাসার গবেষকেরা।

পৃথিবীর বাইরে প্রাণ
এই উপগ্রহগুলোতে প্রাণের অস্তিত্ব যে মিলতেই পারে এমনটা অবশ্য নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছে না। সেখানকার ভূগর্ভে যদি কোন অনুজীবের দেখা মিলে তা হবে পৃথিবীর থেকে আলাদা। কিন্তু এর মাধ্যমে গোটা মহাবিশ্বেই প্রাণ নিয়ে গবেষণার নতুন এক দ্বার উন্মোচিত হতে পারে, বলছেন নাসার ওশান ওয়ার্ল্ডস ল্যাবের প্রধান কেভিন পিটার হ্যান্ড।

ইউরোপা ক্লিপার
হ্যান্ডের মূল মনযোগ এখন বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপাতে। তাদের চলমান একটি প্রকল্পের নাম ‘ইউরোপা ক্লিপার’ মিশন। যার অংশ হিসেবে উপগ্রহটির উদ্দেশ্যে একটি মহাকাশযান পাঠাবে নাসা। সেটি উচ্চ রেজ্যুলেশনের কিছু ছবি তুলে পাঠাবে। সেগুলো থেকে বিজ্ঞানীরা সেখানকার ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন বস্তু সম্পর্কে ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবেন।

ডিসকভারি
সৌরজগতের বাইরের দিকে গ্রহগুলো নিয়ে নাসার আরো একটি প্রকল্পের নাম ডিসোকভারি। তবে এটি এখনও পরিকল্পনার পর্যায়েই রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ট্রাইডেন্ট নামের একটি অভিযান পরিচালনার কথা রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে নেপচুনের চাঁদ ট্রাইটন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।

১২ বছরের যাত্রা
২০২৬ সালে ট্রাইডেন্ট পৃথিবী থেকে যাত্রার করার কথা। ট্রাইটন উপগ্রহটিতে পৌঁছাতে তার সময় লাগবে ১২ বছর। এর আগে ১৯৭৭ সালে সবশেষ ‘ভয়েজার টু’ মহাকাশযান ট্রাইটানের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল। সেটি পৌঁছাতে পেরেছিল উপগ্রহটির ৪০ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে। অন্যদিকে ট্রাইডেন্ট যাবে ৫০০ কিলোমিটার নিকটে।

বায়ুমণ্ডল
ট্রাইডেন্টের মূল উদ্দেশ্য হবে ট্রাইটান উপগ্রহটির বায়ুমণ্ডলের গভীরতা পরিমাপ এবং তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা নেয়া। ট্রাইটানের বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা থাকলেও এনক্লেডাস আর ইউরোপাতে সেই সম্ভাবনা নগণ্য। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতো না হলেও এই তিনটির মধ্যে ট্রাইটানের পরিবেশ নিয়েই বেশি উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলের ভাইজমান ইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক ইয়োহাই কাসপি। কারণ সেখানে বায়ু প্রবাহ আছে বলে মনে করেন তিনি।

কত সময় লাগবে
কিন্তু এসব গবেষণার সুফল কবে মিলবে? কাসপি মনে করেন ভবিষ্যত প্রজন্ম ৪০০ বছর পর হয়তো প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানের এই প্রচেষ্টা আর উদ্ভাবনগুলোর গুরুত্ব আর প্রয়োগের জায়গাটি ঠিকঠাক বুঝতে পারবে। ঠিক যেমন বিশ্বব্রম্মাণ্ড নিয়ে পুরনো ধারণা বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে গ্যালিলিওর অবদানকে আমরা এখন স্মরণ করি। সূত্র: ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement