২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পৃথিবীকে বাঁচাতে প্রত্যেক শিশুর হাতে একটি করে গাছ তুলে দিন : ড. আব্দুর রব

-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সাবেক সভাপতি ও মানারাত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আব্দুর রব বলেছেন, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে প্রত্যেক শিশুর হাতে একটি করে গাছ তুলে দিতে হবে।

বাংলাদেশ ন্যাচার অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল কাউন্সিলের (বিএনইসি) উদ্যোগে শুক্রবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ ও আমরা’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দেশবরেণ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন এতে সভাপতিত্ব করেন।

আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক ড. রেদওয়ানুর রহমান।

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আল মুজাদ্দেদ আলফেসানী, দৈনিক দিনকাল পত্রিকার সম্পাদক রেজওয়ানুল সিদ্দিকী, বাংলাদেশ এনজিও ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এইচ এ নোমান, সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিচার্স ইন ন্যাচারাল রিচার্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রধান সমন্বয়ক ড. এস. এম. এ. রশিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো: বরকত আলী, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও মৎস্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পদ্মা ব্রিজে কর্মরত অফিসার ড. আনিসুজ্জামান খান, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো: গোলাম রহমান ভূঁইয়া, পরিবেশ সাংবাদিক এম এ নোমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম, সেভ আওয়ার সী সেক্রেটারি মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনইসি’র সমন্বয়ক মু. আব্দুল জব্বার, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল হোসেন, আতিকুর রহমান প্রমুখ।

প্রফেসর ড. আব্দুর রব বলেন, আমাদের বাসযোগ্য পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে প্রত্যেক শিশুর হাতে একটি করে গাছ তুলে দিন। ১৯৭৩ সালে প্রথম পরিবেশ দিবস উদযাপিত হওয়ার পর থেকে এটি এখন বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে বহুল স্বীকৃত একটি দিবসে পরিণত হয়েছে। পৃথিবী ও প্রকৃতি রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতি বছর ৫ জুন দিবসটি পালিত হয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের পিছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করে তা হলো, পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আল্লাহর সৃষ্টির সংরক্ষণে প্রাকৃতিক নিয়ম মানায় সকলকে বদ্ধপরিকর হতে হবে। মানুষ পরিবেশ ও এই পৃথিবীর মূল্যবান অঙ্গ। প্রকৃতি ছাড়া মানুষের জীবন অসম্ভব। তাই প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের কথাটা জানা খুবই জরুরি। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে পরিবেশ ধ্বংস করা কখনোই কল্যাণকর হবে না। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম চরম ক্ষতির সম্মুখিন হবে।

তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে এবছর ডিজিটাল মাধ্যমেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। লকডাউন মানুষের জীবন বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ঠিকই, তবে লকডাউন পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এমতাবস্থায় অবশ্যই পরিবেশের প্রতি ইনসাফ ও প্রাকৃতিক বিধানকে প্রাধান্য দিতে হবে। জলাশয়সমূহকে নিরাপদ করে তুলতে হবে। যার যেখানে অবস্থান তথা বন্যদেরকে বনে থাকতে দিন, প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করুন।

সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গুরুত্বের সাথে করোনা সংকটে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতেই পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিগত কয়েক বছর যাবৎ আমার দেখছি, শুনছি এবং পড়ছি, বিশ্বে পরিবেশ দূষণের সমস্যা ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করছিল। মানুষ তাদের বিভিন্ন সুবিধার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করেছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মূল কারণ হলো পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। পরিবেশ ধ্বংসের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়। অথচ দেখা যায় পরিবেশ রক্ষায় যাদের অগ্রণী ভুমিকা পালন করার কথা অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারতসহ পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদী সেই দেশগুলোই পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।

পরিবেশ সচেতনতা তৈরির জন্য জাতিসঙ্ঘের সবচেয়ে বড় মঞ্চ হল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। চলতি বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ভাবনা জীববৈচিত্র্য। এবছরের আয়োজক দেশ কলম্বিয়া। জার্মানির সহযোগে তারা আয়োজন করবে মূল অনুষ্ঠান। গোটা বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের ১০ শতাংশই রয়েছে কলম্বিয়ায়। অ্যামাজন রেইনফরেস্টের একটা বড় অংশ রয়েছে কলম্বিয়ায় এবং পৃথিবীর পক্ষী ও অর্কিডের বৈচিত্র্যের নিরিখে প্রথম এই দেশ। উদ্ভিদ, প্রজাপতি, স্বচ্ছ পানির মাছ এবং উভচর বৈচিত্র্যের নিরিখে কলম্বিয়ার স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। একটি গবেষণা জানা যায়, প্রায় দশ লাখ জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির পথে। আশঙ্কার বিষয় হলো, বিশ্বের মোট জীববৈচিত্র্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে খাদ্য, পানি ও খনিজ দ্রব্যাদির জোগান ঠিক রাখে জীববৈচিত্র্য। পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তন, দূষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং পৌষ্টিক উপাদানগুলো সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলায় গোটা বাস্তুতন্ত্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা ভীষণ জরুরি। এমতাবস্থায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ ও ভূমিকা পালন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল