২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তাবলিগ থেকে ফিরে একই পরিবারে ৫ জন আক্রান্ত

বিদেশে করোনায় আক্রান্ত ৬৫, মারা গেছে ৫ জন

বিদেশে করোনায় আক্রান্ত ৬৫, মারা গেছে ৫ জন - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের প্রায় ১৮৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন এই রোগে। বাংলাদেশে মারা গেছেন ৫ জন। করোনাভাইরাসের এই প্রভাব পড়েছে কোটি বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যেও। বিভিন্ন দেশে থাকা ৬৫ জন বাংলাদেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে ৫ জন বাংলাদেশী।

গত বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদেও সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার তথ্যানুযায়ী প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোতে থাকা লেবার উইংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও প্রবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থার প্রতিবেদন আসছে। বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করায় বিধিনিষেধ থাকায় বর্তমানে ঠিক কতজন প্রবাসী আক্রান্ত হয়েছেন তার সঠিক তথ্য জানা সম্ভব নয়। তবে মিশনসমূহের প্রাপ্ত তথ্য ও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে বিদেশে অন্তত ৬৫ জন বাংলাদেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদেও মধ্যে অধিকাংশই আছেন ইতালি ও স্পেনে। সিঙ্গাপুওে ৫ জন বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই সুস্থ্য হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। ওই একজন এখনো নিবিড় পরিচর্যায় আছেন বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। জানা যায়, প্রবাসী কর্মীদের প্রধান গন্তব্য দেশের মধ্যে সৌদি আরবে ১ জন, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩ জন বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার, ইরাক, গ্রিস, লেবানন, জাপান, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, হংকং ও বাহরাইনে এখ নপর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশীর আক্রান্ত খবর পায়নি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসীদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এই মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালিসহ ৪ দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৫ জন বাংলাদেশী মারা গেছেন।

কী পদক্ষেপ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়?
করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার প্রেক্ষিতে সবচাইতে অসুবিধায় আছেন বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা। তাদের ভালমন্দ দেখভাল করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রবাসীদের জন্য ১২টি কার্যক্রম বা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে গত ২৫ বুধবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভায় উল্লেখ করা হয়। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো-
প্রবাসী ও বিদেশগামী কর্মীদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায়র বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জিসিসিভুক্ত (মধ্যপ্রাচ্যের) দেশগুলোর দূতালয় প্রধানদের সাথে বৈঠক করে ভিসার মেয়াদ বর্ধিত করার আশ্বাস দেন; সকল শ্রম কল্যাণ উইংকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির বিষয়ে নিয়মিত আপডেট প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদেও চাহিদা অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগীতা প্রদানের নির্দেশ; অতিরিক্ত সচিবকে (মিশন ও কল্যাণ) করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কার্যক্রমের ফোকাল পারসন মনোনয়ন এবং তার নেতৃত্বে বিবিন্ন অংশীজনের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন। মিশন ও কল্যাণ অনুবিভাগ কর্র্তৃক সংশ্লিস্ট সকল অংশীজনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, বায়রা ও এনজিওসমূহের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচারণা এবং শ্রম কল্যাণ উইং, টিটিসি,আইএমটি, সাপোর্ট সেন্টারকে সচেতনতা বৃদ্ধিও লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ; করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গন্তব্য দেশে বাংলাদেশী কর্মী এবং দেশে ফেরত আসা কর্মীদের সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় কীভাবে কী ধরনের সহযোগীতা প্রদান করা যায় এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের (প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ সংস্থা) সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং মিশনের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সব রকম সহযোগিতার জন্য আর্থিক বরাদ্ধ করবে।

এছাড়া প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ গত ২৩ মার্চ আইওএম-এর মিশন চিফের নেতৃত্বে একটি টিমের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গন্তব্য দেশে বাংলাদেশী কর্মীদের সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রদানের বিষয়ে আইওএম প্রস্তুত আছে বলে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন আইওএম-এর বাংলাদেশ মিশন চিফ।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশস্থ মিশনগুলো করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবেলা বিষয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থারত বাংলাদেশীদের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও গ্লাভস বিতরণ করছে। এছাড়া কাতার, ইরাক, হংকংসহ বিভিন্ন দূতাবাসে এ বিষয়ে হটলাইনসেবা চালু করা হয়েছে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

ব্রুনাইয়ে তাবলিগ থেকে ফিরে একই পরিবারে ৫ জন আক্রান্ত
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি জিলাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ব্রুনাইয়ে এখন পর্যন্ত ৭ জন বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন প্রবাসী শ্রমিক। বাকীদের মধ্যে একজন বিজনেস ফ্যামিলির ৫জন রয়েছেন। বাংলাদেশী ওই বিজনেসম্যান মালয়েশিয়ায় তাবলীগে থেকে ব্রুনাইয়ে ফিরেই করোনায় আক্রান্ত হন। পরে তার দ্বারাই পরিবারের বাকী ৪ জন (স্ত্রী-সন্তান) আক্রান্ত। ওই ব্যক্তি হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। বর্তমানে তাকে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। বাকীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে। বাকী আরেকজনও ব্যবসায়ী।

স্পেন প্রবাসীদের সহায়তায় ১০ লাখ টাকার মানবিক সহায়তা

এদিকে করোনাভাইরাসে যে কয়েকটি দেশ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত তার মধ্যে অন্যতম স্পেন। দেশটিতে ইতিধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ মারা গেছে। স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত প্রথম সচিব মুহাম্মদ মুতাসিমুল ইসলাম সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে গত ২৩ মার্চ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে চিঠি লেখেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, স্পেনে ৩২ জন বাংলাদেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন সুস্থ্য হয়েছেন। গত ১৪ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত স্পেন সরকার পুরো দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। দেশটিতে ৩০ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। যাদের অধিকাংশই পর্যটন নির্ভর ছোট ব্যবসা, দিনমজুরি ইত্যাদি করে জীবিকা নির্বাহ করে। লকডাউনের ফলে এদের অধিকাংশই আয় রোজগার বঞ্চিত হয়ে সপরিবারে দুর্বিষহ অবস্থায় দিনযাপন করছেন। স্থানীয় বাংলাদেশ এসোসিয়েশন এবং সামাজিক/রাজনৈতিক সংস্থা প্রায় ২ হাজার অসহায় ব্যক্তিকে চিহিৃত করে চাল, ডাল, তেলসহ অতিপ্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে। এ অবস্থায় তারা দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কামনা করেছে। প্রবাসীদের সহায়তা এ জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চান স্পেনে নিযুক্ত এই প্রথম সচিব (শ্রম)।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সন্ধায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক মো. জাহিদ আনোয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, স্পেন প্রবাসীদের সহায়তায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্ধ প্রদান করা হয়েছে। আমাদের (ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড) নীতিগত সিদ্ধান্ত হলো কোনো দূতাবাস প্রবাসীদের জন্য মানবিক সহায়তা চাইলে আমরা তা করবো। এছাড়া অসুস্থজনিত চিকিৎসা সেবার জন্য তো কল্যাণ বোর্ড সহযোগিতা করেই থাকে। তিনি বলেন, হংকংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং মাস্ক বাবদ অর্থ বরাদ্ধ চেয়েছিল। তাদেরকে আমরা এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বার বার ফোন দিলেও রিসিভ করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (মিশন ও কল্যাণ) ড. আহমেদ মুনিরস সালেহীন। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদও ফোন রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement