১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অনুপস্থিতদের জন্য মার্কিন নির্বাচন কেন্দ্র পরিচালনা করবে ইরান

- ছবি : সংগৃহীত

বাইডেন প্রশাসন আবারো ইরানকে আগামী সপ্তাহের ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুপস্থিত ভোটার কেন্দ্র পরিচালনার অনুমতি দেবে বলে জানা গেছে। এর ফলে ওই ইরানের শাসনতন্ত্রের সমালোচকদের পরিকল্পনাটিকে অযৌক্তিক এবং লজ্জাজনক বলে নিন্দা করতে প্ররোচিত করেছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আলিরেজা মাহমুদি রোববার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, তেহরান গত মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির স্থলাভিষিক্ত করতে ২৮ জুন ভোটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ৩০টিরও বেশি ভোট কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

মাহমুদি বলেন, ইরানি অনুপস্থিত ভোটারদের জন্য ব্যালট বাক্স ওয়াশিংটন এবং নিউইয়র্কে পাকিস্তানি দূতাবাসের ইরানি স্বার্থ সম্পর্কিত বিভাগে স্থাপন করা হবে। তবে তিনি অন্য স্থানগুলো চিহ্নিত করে কিছু বলেননি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ইরানিদের সবচেয়ে বড় অংশ ৩০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর মার্কিন কমিউনিটি সমীক্ষা অনুমান করে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ইরানে বা যুক্তরাষ্ট্রে ইরানি বংশোদ্ভূত হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে। ইরানি আমেরিকান অলাভজনক গোষ্ঠী ন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর ডেমোক্রেসি ইন ইরান (এনইউএফডিআই) বলছে, তারা এ সংখ্যাকে ১০ লাখেরও বেশি বলে অনুমান করে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুসারে, কানাডা এবং তুরস্ক ইরানি প্রবাসীদের ১২ শতাংশ নিয়ে এর পরে অবস্থান করছে।

মাহমুদি বলেন, ইরান অন্যান্য প্রবাসী স্থানেও অনুপস্থিতদের ভোটদানের ব্যবস্থা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যে অবাধ বা সুষ্ঠু হবে তাদের এমন কোনো প্রত্যাশা নেই। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শাসক আলেমরা শুধুমাত্র সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অনুগতদের প্রেসিডেন্ট এবং সংসদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেয়, যা মূল নীতির বিষয়ে তার অধীনস্থ।

ইরানের শেষ সংসদীয় এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যথাক্রমে মার্চ এবং ২০২১ সালে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, রেকর্ডে সর্বনিম্ন সংখ্যক ভোটার ভোট দেয়। কারণ বিকল্প বাছাইয়ের অভাবের কারণে বেশিভাগ ভোটারদের ভোটে আগ্রহ ছিল না।

দেশ-বিদেশে ইরানের শাসকদের বিরোধীরা বারবার ইরানের নির্বাচন বয়কটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেটিকে তারা ভুয়া বলে মনে করে এবং ২৮ জুনের ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা আরো উল্লেখ করে যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র এই ধরনের নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি বাড়ানোর চেষ্টা করে দেশটির ৪৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বৈধতা নিশ্চিত করতে চায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে ইরানের নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু নয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে কিভাবে ইরানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন কেন্দ্র অনুমোদন করা সামঞ্জস্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে।

একজন মুখপাত্র বলেন, ইরান যথাক্রমে বাইডেন প্রশাসন এবং তার পূর্বসূরি ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে ২০২১ এবং ২০১৭ সালে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচন কেন্দ্র স্থাপন করেছিল।

রিচার্ড গোল্ডবার্গ, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিসের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা, পাল্টা বলেন, ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনুপস্থিত ভোটের আরেকবার অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়া একটি ‘হাস্যকর নাটক’।

এক বিবৃতিতে গোল্ডবার্গ লেখেন, ‘আমরা কিভাবে এবং কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের জন্য এমন একটি নাটককে সহজতর করে তুলব যা যুক্তরাষ্ট্রবাসীদের প্রতিদিন হুমকির মুখে ফেলছে তা আমার বোঝার বাইরে।’

তিনি আরো প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইরানের নির্বাচন কেন্দ্রগুলো কারা পরিচালনা করবে এবং ইরান সরকারের সাথে তাদের কী সম্পর্ক রয়েছে।

ইরানের জাতিসঙ্ঘ মিশনের কাছে এই প্রশ্নগুলো করা হয়। তারা মন্তব্য করতে অস্বীকার করছে বলে এর প্রতিক্রিয়া জানায়, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে সমস্যাটি মার্কিন দর্শকদের কোনো আগ্রহের বিষয় নয়।

ইরানের ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক দিন আগে, ওয়াশিংটনের ইরানি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগ একটি অনলাইন চার্ট প্রকাশ করে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ২৯টি শহরের নির্বাচন কেন্দ্রের ঠিকানা দেখানো হয়েছে। যেখানে ইরানি নাগরিকরা ভোট দিতে পারে। ইরানি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ছাড়াও অন্যান্য তালিকাভুক্ত স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ হোটেল কোম্পানির ২০টি সম্পত্তি এবং আটটি ইসলামিক সেন্টার। এই কেন্দ্রগুলো কারা পরিচালনা করেছিল তার কোনো ইঙ্গিত ছিল না।

শুক্রবার ২০২১ সালের নির্বাচন কেন্দ্রগুলোর আয়োজন করেছে এমন তিনটি হোটেলের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয় যে তারা আগামী সপ্তাহে আবার এই জাতীয় কেন্দ্রগুলো আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে কিনা। মেরিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গে ম্যারিয়ট স্প্রিং হিল স্যুট এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টি বিমানবন্দরে হিলটন গার্ডেন ইন আরভাইন- ফোনের উত্তর দেয়া স্টাফ সদস্যরা বলেন, তাদের সময়সূচিতে এই ধরনের ঘটনার কোনো রেকর্ড নেই।

জর্জিয়ার আটলান্টার কমফোর্ট ইন স্যান্ডি স্প্রিংসে ফোনের উত্তর দেয়া এক নারী পরের শুক্রবার কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করছে কিনা জানতে চাইলে বারবার ফোন কেটে দেন।

ইরানি মার্কিন গ্রুপ এনইউএফডিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যামেরন খানসারিনিয়া বলেন, প্রবাসী ইরানিদের একটি দায়িত্ব আছে যে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ‘লজ্জাজনক’ অনুপস্থিত ভোটারদের জন্য কেন্দ্র যেখানেই স্থাপন করা হোক না কেন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

যারা পরিকল্পিত নির্বাচন কেন্দ্রে কাজ করে এবং ভোট দেয় তাদের প্রসঙ্গে খানসারিনিয়া বলেন, ‘যদিও আমাদের এই ব্যক্তিদের শারীরিক নিরাপত্তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইনকে সম্মান করা উচিত, তারা তাদের ভয়াবহ অনৈতিকতার জন্য প্রকাশ্যে লজ্জিত হওয়ার যোগ্য।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জিজ্ঞাসা করা হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ইরানের নির্বাচন কেন্দ্রগুলোকে আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে এমন কোনো ব্যবসায়িক এবং অলাভজনক গোষ্ঠীকে লাইসেন্স দিয়েছে কিনা যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাগুলো থেকে অব্যাহতি পেতে পারে। এ নিষেধাজ্ঞাগুলো সাধারণত ইরানে বাণিজ্যিক সেবা ব্যবস্থার বিধান নিষিদ্ধ করে।

মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন-সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশী সরকারগুলোকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও বিধিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তা করতে হবে।’

ইরানি নির্বাচন কেন্দ্রের লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে মঙ্গলবার পাঠানো অনুরূপ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রণালয়ের বিদেশী সম্পদ নিয়ন্ত্রণ অফিসের (ওএফএসি) সাবেক সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রায়ান ও’টুল বলেন, এটি একটি অস্পষ্ট বিষয়।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের একজন অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো ও’টুল, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি আইন চিহ্নিত করেছেন যা ইরানে সম্ভাব্য নির্বাচনী কার্যকলাপ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়। এই আইন দু’টি হলো ওএফএসি-এর জেনারেল লাইসেন্স ই এবং কোড অফ ফেডারেল রেগুলেশন সেকশন ৫৬০.৫৪৫।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের সময় ওএফএসি-এর নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচি পরিচালনাকারী ও’টুল বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ইরান সরকারের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, গণতন্ত্রের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট আগ্রহ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রশাসন সম্ভবত যে নীতির দিকে ঝুঁকবে তা হল যে সকল মানুষ (ইরানের নির্বাচনে) ভোট দেয়ার যোগ্য, তাদের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যে তাদের কি করা উচিত বা উচিত নয়।’
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement