যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কায়রো যাচ্ছে হামাস প্রতিনিধিদল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ মে ২০২৪, ১৬:৩২, আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ১৭:২৪
হামাস বলেছে, তাদের প্রতিনিধি দল গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রো যাচ্ছে। এদিকে, ইসরাইল রাফাহ শহরে যে হামলার হুমকি দিয়েছে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে জাতিসঙ্ঘ বলেছে, এই হামলা হলে রাফাহ ‘রক্তস্নাত’ হবে।
বিদেশী মধ্যস্থতাকারীরা ৪০ দিনের যুদ্ধ বিরতি এবং ইসরাইলের কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দী ও গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির বিনিময় প্রস্তাবে হামাসের সাড়া দেয়ার অপেক্ষা করছে।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘গাজার জনগণ এবং যুদ্ধবিরতির মধ্যে এখন একমাত্র বাধা হামাস।’
দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের দাবি এবং রাফাতে হামাসের অবশিষ্ট যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোরালো প্রতিশ্রুতিতে কয়েক মাস ধরে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার ব্লিঙ্কেন দীর্ঘ হুমকিপূর্ণ রাফাহ আক্রমণে ওয়াশিংটনের আপত্তির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ইসরাইল সেখানে আশ্রয়দানকারী বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কোন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেনি।
তিনি বলেন, ‘সুরক্ষার পরিকল্পনা ছাড়া আমরা রাফাহতে একটি বড় সামরিক অভিযানকে সমর্থন করতে পারি না। কারণ, এতে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তা ‘গ্রহণযোগ্যতার বাইরে’।
মানবাধিকার গ্রুপ এবং জাতিসঙ্ঘও ইসরাইলকে রাফাহ আক্রমণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়েছে। রাফাহতে প্রায় ১২ লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস শুক্রবার সতর্ক করেছেন, গাজার দক্ষিণের এই শহরে ইসরাইলি অভিযান মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
টেড্রোস এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, ‘ডব্লিউএইচও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে গাজার রাফাহতে একটি পূর্ণ মাত্রার সামরিক অভিযান রক্তপাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং ইতোমধ্যে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো দুর্বল করে দিতে পারে।’
জাতিসঙ্ঘের স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে, এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও তারা জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করছে। স্বাস্থ্য সুবিধা পুনরুদ্ধার করছে এবং সরবরাহের প্রাক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এএফপি’কে নিশ্চিত করেছেন যে গাজার রাজনৈতিক শাখার উপ-প্রধান খলিল আল-হাইয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শনিবার সকালে কায়রো পৌঁছাবে।
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকায় ক্ষমতায় থাকা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, তারা ‘ইতিবাচক মনোভাব’ নিয়ে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বিবেচনা করছে।
তবে হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তিনি চুক্তির সাথে বা চুক্তি ছাড়াই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে সর্বশেষ প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতিকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা করছেন।
হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা হোসাম বদরান টেলিফোনে এএফপি’কে বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু পূর্ববর্তী সকল দফা সংলাপের বাধাদানকারী ছিলেন এবং এটা স্পষ্ট যে তিনি এখনো সেখানেই আছেন।’
মার্কিন নিউজ সাইট অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস মিসরে পৌঁছেছেন।
প্রায় সাত মাস ধরে চলা যুদ্ধে মিসর ও কাতারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার চেষ্টা করছে।
গত যুদ্ধবিরতির সময় নভেম্বরে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ৮০ জন ইসরাইলি জিম্মি এবং ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে হয়েছিল।
মিসরীয় সূত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছে, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় দেবে, যা ব্যর্থ হলে তারা তার দীর্ঘ হুমকিপূর্ণ রাফাহ আক্রমণ শুরু করবে।
গাজায় বেসামরিক লোকদের ওপর হামলায় বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা বেড়েছে। তারা হামাসকে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরাইল বলেছে, হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার সময় প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করেছিল। যাদের মধ্যে ১২৮ জন এখনো গাজায় আটক রয়েছে। তাদের ধারণা ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক প্রতিশোধমূলক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৩৪ হাজার ৬২২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার পুলিশের সাথে একাধিক সংঘর্ষ, গণগ্রেফতার এবং শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য হোয়াইট হাউসের কঠোর নির্দেশের পর এই বিক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
অনুরূপ বিক্ষোভ ব্রিটেন, ফ্রান্স, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশের বিশ্বদ্যিালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাফাহর বাসিন্দা সানা জুরোব বলেছেন, শুক্রবার তাদের পরিবারের বাড়িতে ইসরাইলি হামলায় তার বোন ও ছয় ভাগ্নী-ভাগ্নে নিহত হয়েছে।
জুরোব বলেন, দুই শিশুকে ‘মায়ের আলিঙ্গনে টুকরো টুকরো অবস্থায় পাওয়া গেছে।’
‘আমরা সাহায্য চাই না, আমরা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চাই।’
ইসরাইলের অবরোধ গাজার ২৪ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
সূত্র : এএফপি/বাসস