৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক হামলায় যোগ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি - ছবি : সংগৃহীত

হোয়াইট হাউস ইসরাইলকে সতর্ক করেছে, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা এই সতর্কতার কথা জানিয়েছেন।

১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরাইলে রাতারাতি তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে তেহরান।

তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্রই ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রবাহিনী ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এক্ষেত্রে ইসরাইলকে যে কোনো পাল্টা জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

রোববার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘খুব সাবধানে এবং কৌশলীভাবে চিন্তা করতে’ বলেছেন।

কর্মকর্তারা আরো বলেন, বাইডেন প্রশাসন বিশ্বাস করে যে ইসরাইল এর বিনিময়ে ‘সেরাটাই পেয়েছে’, যার শুরু হয়েছিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলায় সিনিয়র ইরানি সামরিক কমান্ডারদের হত্যার মাধ্যমে।

ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সময় তাদের প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত হয়েছিল বা বাধা দেয়া হয়েছিল। যা মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের ওপর ইসরাইলি সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের চিহ্ন হিসেবে দেখছে।

ইরান হামলার চালানোর সময় মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনী বেশ কয়েকটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে।

ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) রোববার এক আপডেটে জানায়, ৮০টিরও বেশি ড্রোন এবং কমপক্ষে ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইরাকের ওপর দিয়ে ভূপাতিত করে মার্কিন বিমান ও জাহাজ বা বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।

এর মধ্যে সাতটি ড্রোন এবং একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। যেগুলো তারা ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করেছিল।

যে হামলায় ইসরাইলের দিকে যখন একযোগে প্রায় ১০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে আসছিল সে তুমুল উত্তেজনার মাঝেই বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে কথোপকথন হয়।

ওই টেলিফোন আলাপে দুই নেতা ‘কিভাবে পরিস্থিতি প্রশমন করা যায় এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে ভাবা যায়, সে সম্পর্কে’ আলোচনা করেন।

বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন যে ইসরাইল ‘এর সেরাটি পেয়েছে’।

এই কর্মকর্তা অবশ্য বলতে রাজি হননি যে হোয়াইট হাউস ইরানের এই প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে কিনা। তারা শুধুমাত্র জানিয়েছে, ইসরাইলিদের এই হিসাব-নিকাশ করতে হবে।

দিনের প্রথম দিকে মার্কিন টেলিভিশনে নেটওয়ার্কগুলোয় দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বারবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে তারা বড় ধরনে সঙ্ঘাত এড়াতে চায়।

প্রশাসনের শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানে একই বার্তা পাঠানো হয়েছে।

কারবি এবং এর কর্মকর্তা উভয়েই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে রক্ষা করতে থাকবে, তবে ইসরাইলের কোনো প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

তাদের এই অবস্থান নিয়ে কিছু মার্কিন আইন প্রণেতা এবং উভয় রাজনৈতিক দলের সাবেক কর্মকর্তারা সমালোচনার করেছেন।

ওহাইও রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইক টার্নার হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, কারবি সঙ্ঘাত কমিয়ে আনার বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা ‘ভুল’।

তিনি এনবিসিতে বলেন, ‘এটি ইতোমধ্যেই ক্রমে বাড়ছে এবং প্রশাসনকে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’

জন বোল্টন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বলেন, ইসরাইল যদি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ শুরু করে তবে যুক্তরাষ্ট্রের এর সাথে যোগ দেয়া উচিত।

তিনি নিউজ ন্যাশনকে বলেন, ‘আমি মনে করি তারা (ইসরাইল) পুরোটা না হলেও খুব উল্লেখযোগ্য অংশ (ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি) ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছে। সত্যি বলতে ইসরাইল যদি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের সাথে যোগ দেয়া উচিত হবে।’

ইসরাইলে ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, তারা ইসরাইলের জন্য সামরিক সহায়তা পাস করতে ‘আবারো চেষ্টা করবেন’।

ইসরাইলে আরো সাহায্য পাঠানোর পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা ডেমোক্রেটদের আহ্বানের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল।

ডেমোক্রেটরা আহ্বান জানিয়েছিল যে ওই সহায়তা প্যাকেজে তাইওয়ান এবং ইউক্রেনের জন্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষা সচিব মিক মুলরয় বিবিসিকে বলেন, ইসরাইলের জন্য সাহায্য ‘বিলম্ব না করে’ পাস করা উচিত।

তিনি বলেন, ‘মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার জন্য যদি এটি না হয়, তবে আমরা একটি বড় আঞ্চলিক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই সহায়তা এবং এর সাথে ইউক্রেন ও তাইওয়ানের জন্য সহায়তা দেয়া আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের মধ্যে পড়ে। এটি কোনো দান নয়। এটি মার্কিন জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement