ইসরাইলে হামলার বিষয়ে ইরানকে হুঁশিয়ার বাইডেনের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪
বিমান হামলা করে এক শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার শোধ নিতে হামলার ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, দ্রুতই ইসরাইলে হামলা করতে পারে ইরান।
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ওই হামলার ইসরাইল বিষয়টি স্বীকার না করলেও ব্যাপকভাবে এই ধারণাই তৈরি হয়েছে যে ওই হামলার পেছনে তাদেরই হাত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সিবিএস নিউজকে জানান, ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের হামলা শিগগিরই হতে পারে।
ইসরাইল বলেছে, দেশটি নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
ইরানের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, ‘হামলা করো না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরাইলের সুরক্ষায় নিবেদিত। আমরা ইসরাইলকে সমর্থন করব। ইসরাইলের সুরক্ষায় সহায়তা করব এবং ইরান সফল হবে না।’
ইরান হামাসকে সমর্থন যোগায়, যারা গাজায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এছাড়া পুরো অঞ্চল জুড়েই প্রক্সি গ্রুপকে সহায়তা করে দেশটি। এর মধ্যে আছে লেবাননের হেজবুল্লাহ, যারা প্রায়ই ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা করে।
শুক্রবার হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা লেবানন থেকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে অনেকগুলো রকেট নিক্ষেপ করেছে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এক মুখপাত্র বলেন, প্রায় ৪০ মতো ক্ষেপণাস্ত্র ও দু’টি বিস্ফোরক ড্রোন ছোঁড়া হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি এবং পাল্টা কোনো পদক্ষেপের ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা সিবিএস টেলিভিশনকে বলেন, ইরানের দিক থেকে যেকোনো হামলা থেকে আত্মরক্ষায় আলাদা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার জানান, ইরান ইচ্ছে করেই মধ্যপ্রাচ্য ও ওয়াশিংটনকে অনুমানের মধ্যে রাখছে।
গত ১ এপ্রিল দামেস্কে কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী হামলার পর ইরানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ইসরাইল মনে করে, লেবানন ও সিরিয়ায় নিজেরা আড়ালে থেকে ইরান যে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের সমর্থিত গ্রুপগুলো সেটি ওই কনস্যুলেট ভবন থেকেই পরিচালিত হতো।
এটা একটি অ্যাকশন বা অবস্থান ধরে রাখার প্রক্রিয়া। শক্ত করে আঘাত করো এবং ইসরাইল তার বিধ্বংসী শক্তি দিয়ে তার জবাব দেবে।
কৌশলগত দিক থেকে যখন পুরো অঞ্চলের সবাই সতর্ক এবং কী ঘটতে পারে তা যখন যুক্তরাষ্ট্র বলেই যাচ্ছে তখন এখনি কোনো জবাব দেয়াটা ইরানের জন্য অর্থ বহন করে না।
তেহরান ও কোম (ইরানের শিয়া মুসলিমদের পবিত্র শহর)-এর বাস্তববাদীরা ধৈর্য ধরতে আহ্বান জানাবেন। কিন্তু সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির মতো বাজপাখি চাইবেন দৃঢ় জবাব দিতে।
তবে ইরান একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চায় না। উপসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রতিবেশীরাও তা চায় না। সেখানকার সরকারগুলো ইতোমধ্যেই ইরানকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো কাদের চাওয়া পূর্ণ হবে- বাজপাখি নাকি ঘুঘু।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ইসরাইলে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। জার্মানি তাদের নাগরিকদের ইরান ছাড়তে বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর তাদের কূটনীতিক ও পরিবারবর্গকে তেল আবিব, জেরুসালেম ও বিরসেবা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
এসব সতর্কতার মধ্যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন।
কিছু ইসরাইলি বলেছেন, ইরানের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নন।
জেরুসালেমের একটি মার্কেটে বার্তাসংস্থা এএফপিকে ড্যানিয়েল কসম্যান বলেন, ‘আমরা জানি যে আমরা শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত- উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে ও পশ্চিমে। আমরা ভীতু নই, আমি তোমাকে বলতে পারি। দেখো মানুষজন বাইরে বের হচ্ছে।’
তিন দিনের পানি ও খাদ্য এবং দরকারি ওষুধ সঞ্চিত রাখার যে নির্দেশনা তার বাইরে ইসরাইল সরকার জনগণের উদ্দেশে নতুন কোনো নির্দেশ জারি করেনি।
তবে ইসরাইলের বেতার খবর দিয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করাসহ সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে দেশটির সেনা সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আরো জোরদার করা হয়েছে।
দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছিল। এর মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন। তিনি সিরিয়া ও লেবাননে সক্রিয় ইরানের কুদস ফোর্সের সিনিয়র একজন কমান্ডার।
ইসরাইল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারাই এ হামলার পেছনে রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।
বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা হামলা থেকে ইরানকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের এ আশঙ্কা এ হামলা আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চীন, সৌদি আরব ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে কথা বলেছেন ইরানের ওপর তাদের প্রভাব কাজে লাগাতে রাজি করানোর জন্য।
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডারের সাথে আলোচনার পর শুক্রবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট হুমকি দু‘দেশের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করেছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি কিভাবে জবাব দিতে হয়।’
ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে হামাস পণবন্দী করে।
ইসরাইল বলছে, এখনো ১৩০ জন পণবন্দী হয়ে আছে এবং এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৩৩ হাজার ৬০০ মানুষ গাজায় ইসরাইলের অভিযানে নিহত হয়েছে। যাদের বেশিভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এ সঙ্ঘোতের মধ্যে ইসরাইলকে তার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই গুলি বিনিময় করতে হচ্ছে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে। ইরান সমর্থিত এই গ্রুপটি ইরাক ও ইয়েমেন থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে এবং ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে হামলার চেষ্টা করে।
ইয়েমেনের হাউছি যোদ্ধারা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা চালিয়েছে। একটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনাও দেখা গেছে। এর জেরে ইয়েমেনে হাউছি অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা