যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্কের পরীক্ষা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৩৪, আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:৪১
দায় থেকে সম্পদ, আবার সম্পদ থেকে দায়; যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরাইল কয়েক দশক ধরে ঘনিষ্ঠ, কিন্তু কঠিন এক মিত্র। সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধ দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যমান কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্ষমতার পালাবদল চলতে থাকলেও ডেমোক্র্যাটস ও রিপাবলিকানদের সবসময় একটি ইস্যুতে এক থাকতে দেখা গেছে। সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্কের পবিত্রতা। দু’দলের নেতারা সবসময় এই মনোভাব দেখিয়ে এসেছেন যে ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র নেই এবং ইসরাইলের নিরাপত্তার বিষয়টি সবসময় আলোচনার ঊর্ধ্বে।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের হিসাব বলছে, ১৯৪৮ সাল থেকে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে, যার বেশিভাগই সামরিক সহায়তা। এই সংখ্যা মার্কিন সহায়তা পাওয়া দেশের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিসরের প্রায় দ্বিগুণ। যদিও মিসরের জনসংখ্যা ১১১ মিলিয়ন, আর ইসরাইলের সাড়ে নয় মিলিয়ন।
ইসরাইলের একজন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চাক ফ্রাইলিশ বলেন, ‘এটা একটা অবিশ্বাস্য সম্পর্ক।
তিনি বর্তমানে কলম্বিয়া, নিউইয়র্ক ও তেল আভিভের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন।
ফ্রাইলিশ বলেন, ‘একই মূল্যবোধ, কৌশলগত স্বার্থ এবং একটি শক্তিশালী লবি যা ইসরাইলকে ওয়াশিংটনের ভালো অনুগ্রহে রাখে, এই সম্পর্কের স্তম্ভ।’
ওয়াশিংটনের সবচেয়ে কার্যকর লবি গ্রুপগুলোর মধ্যে একটি ‘আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক)। যুক্তরাষ্ট্রে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন আইপ্যাক সবসময় দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে লবি করে থাকে।
‘একটি কৌশলগত সম্পদ’
ইউরোপে ইহুদিদের রক্ষায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমালোচনার শিকার হয়েছিল। তাই ১৯৪৮ সাল ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল।
ফ্রাইলিশ বলেন, ‘একসময় ইসরাইলকে শুধু একটি দায় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কারণ স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইসরাইলের সোভিয়েত-ঘেঁষা আরব প্রতিবেশীদের সাথে আঞ্চলিক বিরোধ পারমাণবিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি করেছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে পেন্টাগন একে একটি কৌশলগত সম্পদ হিসেবে দেখছে।’
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরান ও তার প্রক্সিদের মতো কম শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি উপায় হয়ে উঠেছে।
এই দায়িত্ব ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল ইতিহাসে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সহযোগিতার’ সূত্রপাত করেছে বলে মনে করেন ফ্রাইলিশ।
৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে অস্ত্র পাঠিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে শুরুর দিকে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে।
ফ্রাইলিশ বলেন, ‘ইসরাইলের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাইডেন দারুণভাবে এগিয়ে এসেছে বলে আমার মনে হয়।’
ইসরাইলকে রক্ষায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে মতবিরোধকে একপাশে সরিয়ে রেখেছেন।
ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। ফলে বিশ্বজুড়ে এর নিন্দা জানানো হচ্ছে।
পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ইসরাইল বিশেষজ্ঞ ইয়ান লাস্টিক মনে করেন, ইসরাইলকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্র খুব ধীরে এগোচ্ছে। ফলে নির্বাচনি বছরে বাইডেনের ওপর এর প্রভাব পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
ইসরাইল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে জনমতের বিকাশ শেষ পর্যন্ত দু’দেশের সম্পর্কের গতিপথ সংশোধন করতে বাধ্য করতে পারে। বিভিন্ন জরিপে বয়স্ক ও তরুণ ভোটারদের জনমতে পার্থক্য দেখা গেছে। বয়স্ক বলতে তারা, যারা ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তি দেখেছে। এই চুক্তির পর অনেকেই দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
আর তরুণ বলতে তারা, যারা ইসরাইল বলতে সেই দেশকে চেনেন যারা শুধু ফিলিস্তিনের সাথে রাজনৈতিক মীমাংসা এড়াতে তাদের সামরিক সুবিধাকে ব্যবহার করে।
এই তরুণদের মধ্যে মার্কিন ইহুদিরাও আছে, যারা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারপন্থী হিসেবে দেখে। এ কারণে তারা সেই ইসরাইল থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করেন এবং ইসরাইল অন্য পথে যাচ্ছে বলে তারা ধারণা করেন।
লাস্টিক বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে তরুণ প্রজন্ম যে মূল্যবোধগুলো গ্রহণ করবে তা যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন আরো শক্তিশালী হবে। তখন মার্কিন রাজনীতিবিদেরা মনে করবেন, এক মিনিট অপেক্ষা করুন, যদিও ২৫ বছর আগে এটি কাজ করত, আমরা আসলে আইপ্যাকের কথা শোনার চেষ্টা করলে এখন আরো বেশি সমস্যায় পড়ব।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা