১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


সোলেইমানির স্মরণ সভায় বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র দায়ী : ইরান

সোলেইমানির স্মরণ সভায় বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র দায়ী : ইরান - ছবি : সংগৃহীত

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর জেনারেল কাসেম সোলেইমানির স্মরণ অনুষ্ঠানে ভয়াবহ জোড়া বোমা বিস্ফোরণের জন্য বুধবার ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে তেহরান। দেশটির দক্ষিণে এই বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছে। চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হন।

গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এবং মঙ্গলবার লেবাননে হামাসের একজন সিনিয়র নেতার হত্যা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ভয়াবহ উত্তেজনার মধ্যে এই কেরমানে জোড়া বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে এই হামলা ওই অঞ্চলে একটি বিস্তৃত সঙ্ঘাতের আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এটি বিশ্ববাজারে ঝাঁকুনি দিয়েছে, যেখানে তেলের দাম তিন শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে।

ইরানের প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক ডেপুটি মোহাম্মদ জামশিদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘ওয়াশিংটন বলেছে যে ইরানের কেরমানে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কোনো ভূমিকা ছিল না। সত্যিই? একটি শেয়াল প্রথমে নিজের আস্তানার গন্ধ পায়।’

তিনি বলেন, ‘কোনো ভুল করবেন না। এই অপরাধের দায়ভার যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী শাসকদের (ইসরাইল) এবং সন্ত্রাসবাদ শুধুমাত্র তাদের একটি হাতিয়ার।’

যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও কোনো ঘটনায় তার মিত্র ইসরাইলের জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করেনি।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই জড়িত ছিল না, আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে এই বিস্ফোরণে ইসরাইল জড়িত ছিল।’

বিস্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘আমরা হামাসের সাথে যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করছি।’

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি হামলার জন্য দেশের ‘দুষ্ট ও অপরাধী শত্রুদের’ দায়ী করেন এবং ‘কঠোর জবাব’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এই ভয়াবহ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার তুরস্ক সফর বাতিল করেন এবং ইরান বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন।

প্রায় ১৫ মিনিটের ব্যবধানে বিস্ফোরণগুলো ঘটে। সোলেইমানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কেরমানে সাহেব আল-জামান মসজিদের শহীদ কবরস্থানের কাছে এই বোমা হামলা চালানো হয়। এই সময় সমর্থকরা বাগদাদে ২০২০ সালের মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত সোলেইমানির স্মরণ অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিল।

ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা ‘ইরনা’ জানায়, প্রাথমিকভাবে ১০৩ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে ২১১ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাহরাম ইনোল্লাহি পরে নিহতের সংখ্যা সংশোধন করে বলেন, ‘সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহতের সঠিক সংখ্যা ৯৫।’

তিনি বলেন, কিছু নাম ‘ভুলবশত দু’বার নিবন্ধিত হয়েছিল’ বলে আগে সংখ্যা ১০৩ উল্লেখ করা হয়েছিল।

ইরানের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসা তিনজন প্যারামেডিক নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।

ইরনা বলেছে, প্রথম বিস্ফোরণটি সোলেইমানির কবর থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে ঘটেছিল এবং অন্যটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল।

‘তাসনিম’ বার্তাসংস্থা এটিকে ওয়াকিবহাল সূত্র বলে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘বোমা বহনকারী দু’টি ব্যাগ ফেটে গেছে’ এবং ‘দুষ্কৃতকারীরা স্পষ্টতই রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।’

অনলাইন ফুটেজে দেখা গেছে, আতঙ্কিত জনতা পালানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কারণ নিরাপত্তাকর্মীরা এলাকাটি ঘিরে রেখেছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে রক্তাক্ত লোকদের মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে এবং তাদের সাহায্যের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকর্মীরা দৌড়ে ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে ।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তাসংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, ‘আমরা যখন কবরস্থানের দিকে হাঁটছিলাম তখন হঠাৎ একটি গাড়ি আমাদের পেছনে থামে এবং একটি বোমা আবর্জনা ফেলার জায়গায় বিস্ফোরিত হয়। আমরা শুধুমাত্র বিস্ফোরণ শুনেছি এবং লোকজনকে পড়ে থাকতে দেখেছি।’

রাতে জনতা কেরমানে শহীদ কবরস্থানে ফিরে আসে। তারা ‘ইসরাইলের ধ্বংস’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস’ হোক বলে শ্লোগান দেয়।

সোলেইমানির মেয়ে জেইনাব বলেন, ‘আমরা আজকের হিংস্র সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানাই। আমি আশা করি, অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দেয়া হবে।’

সোলেইমানি মধ্যপ্রাচ্য-জুড়ে সামরিক অভিযানের তত্ত্বাবধানে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশী অপারেশন শাখা কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দেন।

জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং সৌদি আরব, জর্ডান, জার্মানি এবং ইরাকসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়েছে।

জাতিসঙ্ঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বিস্ফোরণের ‘কঠোর নিন্দা’ করেছেন। জাতিসঙ্ঘ কার্যালয় এ কথা জানায়।

ইউরোপিয় ইউনিয়ন বলেছে, ‘এই সন্ত্রাসী হামলায় অনেক বেসামরিক লোকদের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক।’

ইউরোপিয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল জানান, তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সাথে ‘সমবেদনা জানাতে’ কথা বলেছেন এবং কঠোর ভাষায় এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করেছেন এবং ইরানি জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং খামেনিকে লিখেছেন ‘কবরস্থানে আসা শান্তিপূর্ণ লোকদের হত্যার নিষ্ঠুরতায় তিনি মর্মাহত।’

ইরানের মিত্র হামাস ‘অপরাধী হামলার’ নিন্দা করেছে, যখন রিয়াদে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘এই বেদনাদায়ক ঘটনায় ইরানের সাথে সংহতি’ প্রকাশ করেছে।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement