০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার ইরানের

মোহসেন ফখরিযাদে ছিলেন ইরানের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান - ছবি - সংগৃহীত

ইরান দেশটির সবচেয়ে সিনিয়র পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিযাদেকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকারের ঘোষণা দিয়েছে।

ফখরিযাদে, শুক্রবার তেহরানের কাছে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্ড এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলেও, তিনি মারা যান।

দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেঘান বলেছেন, এই হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর বজ্রের মত 'আঘাত হানা' হবে।

পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা যে ফখরিযাদে ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির পেছনে ছিলেন।

ইরান সবসময়ই বলে আসছে, এই পারমাণবিক কর্মসূচি তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই করেছে।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি একটি টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীরা আজ এক বিশিষ্ট ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে।’

জাতিসঙ্ঘের ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভঞ্চি বলেছেন যে, এই হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ, যা এই অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য করা হয়েছে।

জাভাদ জারিফ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দোষারোপ করে বলেছেন, ‘ইসরাইলের এতে জড়িত থাকার গুরুতর ইঙ্গিত’ রয়েছে।

২০১৮ সালের এপ্রিলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু, ফখরিযাদের নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন।

হত্যার ব্যাপারে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এই হত্যার খবর এলো।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সামরিক পরমাণু অস্ত্র তৈরি দুটি কাজের জন্যই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

২০১৫ সালে ছয়টি বিশ্বশক্তির সাথে এক চুক্তিতে ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের উৎপাদনের সীমাবদ্ধ করার কথা বলেছিল।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে চুক্তির শর্তগুলোর বরখেলাপ করে আসছিল।

ইসরাইলের দীর্ঘদিনের বিরোধিতা সত্ত্বেও জো বাইডেন জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইরানের সাথে পুনরায় যুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক প্রধান জন ব্রেনান বলেছেন, ওই বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ড ছিল একইসাথে ‘অপরাধমূলক’ এবং ‘অত্যন্ত বেপরোয়া’ কাজ, যা ওই অঞ্চলে সঙ্ঘাতের ঝুঁকি তৈরি করেছে।

একাধিক টুইটে তিনি বলেছেন, ফখরিযাদের মৃত্যু ‘নতুন করে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব উস্কে দেয়ার পাশাপাশি প্রাণঘাতী লড়াইয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।’

ব্রেনান আরো বলেন, ‘তিনি জানেন না কোনো বিদেশী সরকার ফখরিযাদেকে হত্যার অনুমতি দিয়েছিল কি না।।’

মোহসেন ফখরিযাদের সাথে কী হয়েছিল?

শুক্রবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফখরিযাদেকে বহনকারী গাড়িকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল। ফখরিজাদেহ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান ছিলেন।’

‘সন্ত্রাসীদের সাথে তার দেহরক্ষীদের সংঘর্ষ হলে ফখরিযাদেকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েও দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ব্যর্থ হন। তিনি মারা যান।’

ইরানি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে হামলাকারীরা ওই বিজ্ঞানীর গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল।

ফার্স নিউজ এজেন্সি এর আগে খবর পেয়েছিল যে অ্যাবসার্ড শহরে একটি গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে যে ‘তিন থেকে চারজন ব্যক্তি, যাদেরকে সেখানে সন্ত্রাসী বলা হয়েছে, তারা মারা যায়।’

মোহসেন ফখরিযাদেহ কে ছিলেন?

ফখরিযাদেহ ছিলেন সর্বাধিক খ্যাতিমান ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অভিজাত ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের সিনিয়র অফিসার।

তার ব্যাপারে পশ্চিমা সুরক্ষা সূত্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, ফখরিযাদেহ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সহায়ক একজন ব্যক্তি।

২০১৮ সালে ইসরাইলের থেকে পাওয়া গোপন নথি অনুসারে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একটি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সে সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিনি ফখরিযাদেকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী বলে মনে করেন এবং তার ‘এ নামটি মনে রাখার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৫ সালে, নিউইয়র্ক টাইমস তাকে তুলনা করেছিলেন জে রবার্ট ওপেনহেইমারের সাথে, এই পদার্থবিজ্ঞানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ম্যানহাটন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তৈরি করেছিলেন প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র।

পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ফখরিযাদেহ ‘আমাদ’ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এটি ছিল ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি গোপন কর্মসূচি যেখানে পারমাণবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা হতো।

আইএইএর মতে এটি ২০০৩ সালে বন্ধ করা হয়, যদিও বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে ২০১৮ সালে প্রাপ্ত নথিগুলোতে দেখা গেছে যে ফখরিযাদেহ গোপনে 'আমাদ' প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে।

আইএইএ দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তদন্তের অংশ হিসাবে ফখরিযাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল।

ইরান এই কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে সন্দেহ করা হয়।

যার কারণে ২০১০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসঙ্ঘের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানির সাথে ইরান ২০১৫ সালে চুক্তি করে যে তারা তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে তাদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসায় সেটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।

এ মাসের শুরুর দিকে আইএইএ জানিয়েছিল যে চুক্তির আওতায় ইরানকে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমোদন দিয়েছিল তারা সেটার চাইতে ১২ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।

এদিকে, জানুয়ারিতে ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কুদস বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি মার্কিন হামলায় নিহত হন। এরপর থেকে আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির নির্বাচন ঘিওরে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপির ২ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জিম্বাবুয়েকে লজ্জার রেকর্ডের দিকে ঠেলে দিচ্ছে টাইগাররা জনগণের কাছে হেরে যাওয়ার আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিন : ফারুক আলমডাঙ্গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নয়টি বাড়ি পুড়ে ছাই গৌরনদীতে আ’লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষ, ইউপি চেয়ারম্যানসহ রক্তাক্ত জখম ৫ টাঙ্গাইলে তৃষ্ণার্ত মানুষের পাশে সোনালি সূর্য শুরুতেই উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ নারী কর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ : যা বললেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল মিয়ানমারের পুরুষদের বিদেশে কাজের আবেদন নিষিদ্ধ করল জান্তা সরকার তানজিদ-সাইফুদ্দীনকে নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ

সকল