এমপি আজীম হত্যা : শিলাস্তির দায় স্বীকার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৩ জুন ২০২৪, ২২:০২
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শিলাস্তি রহমান।
সোমবার (৩ জুন) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো: তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এর আগে গত ২৪ মে শিলাস্তিসহ তিনজনের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে গত ৩১ মে দ্বিতীয় দফায় তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড করেন। রিমান্ড চলাকালীন আসামি শিলাস্তি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আদালত শিলাস্তির জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতে শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক জালাল।
বর্তমানে আসামি শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানউল্লাহ সাঈদ (৫৬) ও তানভীর ভূঁইয়া (৩০) রিমান্ডে রয়েছে।
গত ২২ মে (বুধবার) রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
মামলার অভিযোগে মুনতারিন ফেরদৌস ডরিন উল্লেখ করেছেন, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।
১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।’ এছাড়া আরো কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইলফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোরো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজসে বাবাকে অপহরণ করেছে।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, তিনদিন ধরে আমার বাবাকে ফোনে পাচ্ছি না। তার মোবাইলফোনটি মাঝে মাঝে খোলা পাই আবার মাঝে মাঝে বন্ধ পাই। এই বিষয়ে আমি ডিবি প্রধানের সাথে যোগাযোগ করি।
ওই দিন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, গত ১৬ মে সকালের দিকে এমপি আনারের অবস্থান ছিল বিহারের মুজফফরাবাদ। সেখান থেকে পিএস রউফ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ফোনে কল করা হয়। তবে ওই ফোন কল প্রকৃত পক্ষে এমপি আনার করেছিলেন কি না তা নিয়ে নতুন করে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনায় প্রথম থেকেই আনোয়ারুলের মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছিল। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শেষবার তার ফোনের লোকেশন ছিল ভারতের উত্তরপ্রদেশ। খুনের পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতেই তার মোবাইলটি উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সন্দেহ পুলিশের। এবার প্রকাশ্যে এসেছে আনোয়ারুলের শেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে কলকাতাভিত্কি সংবাদ প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে।
প্রতিবেদনে বল হয়, গত ১২ মে কলকাতায় এসেছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার। উঠেছিলেন বরানগরে পুরনো বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। ‘বিশেষ কাজে দিল্লি পৌঁছলাম। আমাকে তোমাদের ফোন করার দরকার নেই। আমিই ফোন করে নেব।’ গোপাল বিশ্বাস, নিজের মেয়ে ও সহকারীকে একসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে এই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন আনোয়ারুল। আর এই মেসেজ ও মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। আততায়ীদের মধ্যে একজন আনোয়ারুলকে খুনের পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতে তার মোবাইলটি উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যান বলে সন্দেহ পুলিশের। খুনের পর খুনি ওই এমপির মোবাইল থেকেই হোয়াটস অ্যাপ করেছিল। এমনই সন্দেহ পুলিশের।
পুলিশের একটি সূত্রের উদ্ধৃতি সংবাদ প্রতিদিন জানিয়েছে, গত ১৩ মে বরানগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আনোয়ারুল বলেছিলেন, তিনি ওই দিনেই বরানগরে ফিরে আসবেন। কিন্তু সেদিনই গোপালকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে তিনি জানান, বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছেন। তিনি দিল্লি পৌঁছে ফোন করবেন। তাকে ফোন করার প্রয়োজন নেই। এর দুদিন পর ১৫ মে সকাল ১১টা ২১ মিনিট নাগাদ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে আনোয়ারুল জানান , তিনি দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন। তার সঙ্গে কয়েকজন ভিআইপিও রয়েছেন। তাই তাকে ফোন করার প্রয়োজন নেই। বন্ধু গোপালের সঙ্গে ওই একই মেসেজ তিনি বাংলাদেশে তার বাড়িতে ও সহকারীকে পাঠান। পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে, উত্তরপ্রদেশের মুজফফরপুরে মোবাইলের শেষ টাওয়ার ছিল। মাঝে মাঝে মোবাইল খোলা হচ্ছিল। তবে বেশিভাগ সময়ের জন্যই বন্ধ করে রাখা হয়েছিল ফোনটি।
পত্রিকাটিতে বলা হয় যে জানা গেছে, ১৫ মের পরের দিন অর্থাৎ ১৬ মে সকালে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে একটি ফোন আসে তার সহকারীর নম্বরে। আবার অন্য ফোনটি আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মোবাইলে। কিন্তু এমন সময় ফোন করা হয়, দুজনের কেউই তা ধরতে পারেননি। এর পর যখন আনোয়ারুলের ফোনে সহায়ক রিং ব্যাক করেন, তখন আর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। তখনই সহকারী ও পরিবারের লোকেদের মনে হয়েছিল যে, কেউ তাকে ব্ল্যাকমেল করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিন্তু খুনের বিষয়টি সামনে আসার পর পুলিশের ধারণা, খুনের পর খুনিরা মোবাইলটি লুঠ করে নেয়। এর পর প্রমাণ লোপাট করতেই এক আততায়ী তার মোবাইলটি নিয়ে বিহার হয়ে উত্তরপ্রদেশে চলে যায়। সেখান থেকে সে দিল্লি পালায়, এমন সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। পুলিশের মতে, যে ব্যক্তি পুলিশ ও সাংসদের পরিবারের লোকেদের বিভ্রান্ত করতে মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে, সে বাংলাদেশিও হতে পারে। আবার বাংলাদেশি আততায়ীদের এই রাজ্যের লিঙ্কম্যানও হতে পারে সে। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিভাবে খুন করা হয় আনোয়ারুলকে, তা নিয়ে ক্রমশ জমাট বাঁধছে রহস্য। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাকে। খুনের পর টুকরা টুকরা করে কাটা হয় লাশ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিন দিন ধরে দেহাংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। লাশের কিছু অংশ ওই ফ্ল্যাটের ফ্রিজে রাখা রয়েছে বলেই খবর। এমনকি ফ্ল্যাট থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই লাশের অংশবিশেষ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে। তবে লাশের অংশগুলো কারা ফেলে রেখেছে, কোথায় ফেলা হয়েছে তা এখন স্পষ্ট নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা