১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান মান্নার

জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চের আলোচনা সভায় রাজনৈতিক নেতারা : নয়া দিগন্ত -

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা যেসব রাজনৈতিক দল সরকারবিরোধী আন্দোলন করছি তাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের সবাই মিলে একটি কাজই করতে হবে, এই সরকারের পতন। আমরা যদি অতীত দেখি, তাহলে দেখা যাবে কেউ কেউ আলাদা হয়ে গেছি। কিন্তু আমাদের আরো বেশি যুক্ত হতে হবে। অন্যদেরও যুক্ত করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে যুগপৎ আন্দোলনের ৩১ দফা ও এক দফা ঘোষণার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, আমরা এখন এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আমাদের পেছনে ১৫ বছর আছে। এই ১৫ বছরে আমাদের সাফল্য কতটুকু ব্যর্থতা কতটুকু সেটা ভাবতে হবে। আমাদেরকে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। প্রয়োজনে এই কোটা সংস্কারের দাবিও আমাদের ৩১ দফার মধ্যে আনতে হবে, যাতে আমরা ছাত্রদেরও আমাদের আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি এবং বড় আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে পারি। সবাই মিলে লড়াইটা করতে হবে।
মান্না বলেন, মানুষ তখনই লড়াই করতে আসে, যখন সে মনে করে এই লড়াই তাকে কিছু দেবে। এই যে ছাত্ররা হুলুস্থুল করে দিয়েছে। এমন হুলুস্থুল আমরাও তো করতে পারিনি। কালকে যখন পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করেছে, এই ব্যারিকেড যে ভাঙা যাবে এই কথা আমরা ভাবতেও পারিনি। আমাকে অন্তত তিনজন ফোন করে বলল, দেখেন কীভাবে ছাত্ররা ব্যারিকেড ভাঙছে। পুলিশ প্রচণ্ড নির্যাতন করেছে কুমিল্লাতে, হামলা করেছে চট্টগ্রামে, বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড দিয়েছে, ছাত্রলীগ পাল্টা মিছিল করেছে। তারপরও ছাত্ররা জানবাজি রেখে লড়াই করেছে, পুলিশ পরাজিত হয়েছে। এই ছাত্রদের মুখে আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, সেই সংস্কারের দাবি নেই। ওই ছাত্রদের কর্মসূচির মধ্যে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি নেই। কেন নেই বলেন তো? ওরা ছাত্র রাজনীতি জাতীয় রাজনীতি থেকে আলাদা দেখতে চায়?
আলোচনায় অংশ নিয়ে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার যেভাবে রাষ্ট্র চালাচ্ছে, এতে আগামী দিনে মেধাবী বাংলাদেশের কোনো সুযোগ নেই, বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমার মনে হয় না বাংলাদেশকে তারা মেধাবী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। কারণ মেধাবীরা সত্যি কথা বলে, সত্যের পথে চলে, প্রতিবাদ করে, প্রতিরোধ করে।
সকালের টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ডুবে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ঢাকা শহর তো ডুববেই। কারণ মেধাবী লোকজন তো কোথাও নেই। যারা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে, সেখানে মেধাবীদের নিয়ে আসতে হবে। দলীয় লোকজন দিয়ে যদি চালানো হয় তাহলে ঢাকা ডুববে, সারা বাংলাদেশ ডুববে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তো এমনিতেই ডুবে গেছে, এখন শুধু পানির ডুবা দেখতে পাচ্ছেন। সবদিক থেকে বাংলাদেশ ডুবে গেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে। এই মালিকানা কেউ কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মূল মালিকানা ফিরিয়ে আনতে একটি বড় বিষয় ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় ঐক্য। কোন প্রক্রিয়ায় এই মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া হবে তা আমাদের ৩১ দফায় ছিল। মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হলে সংবিধানে কী কী পরিবর্তন করতে হবে, বিচারব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনতে হবে, সংসদের মধ্যে কী পরিবর্তন আনতে হবে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনতে হবে, সামাজিক ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনতে হবে।
আমির খসরু বলেন, জাতীয় ঐক্য ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। এই ঐক্য শুধু এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনের নয়, আমরা এই সরকারকে বিদায় করে আগামী দিনের বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে পরিবর্তনের প্রত্যাশা তুলে ধরতে পেরেছি কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি ৩১ দফা বিশদভাবেই সেই কাজটি করতে পেরেছে। তবে যেটি করতে পারিনি, এই ৩১ দফা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় স্পর্শ করাতে পারিনি। এটা আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সহ-সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।


আরো সংবাদ



premium cement