১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাশিয়াকে প্রতিরোধ ও ইউক্রেনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ ন্যাটোর

-

- ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান
- জার্মানিতে দীর্ঘ পাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটের তিন দিনের সম্মেলনের প্রথম দুই দিনে রাশিয়াকে প্রতিরোধ ও ইউক্রেনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, তারা ২০২৬ সালে জার্মানিতে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন শুরু করবে। রাশিয়া ইউরোপের জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ করেছে ন্যাটো। রাশিয়ার এই হুমকি মোকাবেলায় জার্মানিতে দীর্ঘ পাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বড় ধরনের একটি পদক্ষেপ বলে মনে করছে তারা। রয়টার্স।
তা ছাড়া ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতিসহ দেশটিতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ শুরুর কথা জানিয়েছে জোটের মিত্র দেশগুলো। ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতিসহ দেশটিতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ শুরুর কথা জানিয়েছে জোটের মিত্র দেশগুলো। বাইডেন ঘোষণা করেন, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানোর কাজ শুরু করেছে ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস। কিয়েভের প্রতি এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে সমরাস্ত্রের ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে।
ন্যাটোর এই সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তিনি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে জেলনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘নতুন এসব যুদ্ধবিমান ন্যায্যতা ও শান্তিকে আরো কাছে নিয়ে আসবে এবং প্রমাণ করবে যে, সন্ত্রাস সব সময় পরাজিত হয়।’ ন্যাটো নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন, আগামী বছরের মধ্যে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা হিসেবে ৪০ বিলিয়ন ইউরো দেয়া হবে। ইউক্রেনকে স্থিতিশীল করতে এই অর্থ সাহায্য করবে বলে তারা মনে করেন।
জার্মানিতে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্তের ফলে স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের কোনো দেশে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র যা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, বিভিন্ন পর্বে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ইউরোপে বড় পরিসরে এসএম-৬, টমাহক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার প্রস্তুতি চলছে।
১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত মধ্যবর্তী পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির আওতায় এই পদক্ষেপটি নিষিদ্ধ হয়ে যেত; কিন্তু ২০১৯ সালে চুক্তিটি ভেঙে যায়। বুধবার ন্যাটো মিত্রদের প্রকাশ করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আমরা মিত্রদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে হামলার সম্ভাবনা বাদ দিতে পারি না।’
সম্মেলনে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি আরো সমর্থন জুগিয়ে ইউক্রেনকে আরো সামরিক সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো আগামী বছরের মধ্যে ইউক্রেনকে অন্তত চার হাজার কোটি ইউরোর সমমূল্যের সামরিক সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বহু বছর ধরে ইউক্রেনকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়ার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি ন্যাটোর সদস্যরা।
চীনের বিষয়ে ন্যাটোর আগের ভাষ্য এবার আরো জোরালো হয়েছে। সম্মেলনের নথিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে চীনকে ‘নির্ণায়ক সক্ষমকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেইজিং ইউরো-আটলান্টিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করে চলেছে বলে এতে মন্তব্য করা হয়েছে। স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের জানান, এই প্রথমবারের মতো ন্যাটোর ৩২ সদস্য রাষ্ট্রের সবাই যৌথভাবে চীনকে রাশিয়ার যুদ্ধের নির্ণায়ক সক্ষমকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তিনি জানান, ন্যাটো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সংগঠন নয়, এটি এর মিত্র রাষ্ট্রগুলোর যার যার সিদ্ধোন্তের ব্যাপার। তিনি বলেছেন, ‘কিন্তু আমার মনে হয়, ন্যাটোর এই সম্মেলনে থেকে আমরা যে বার্তা দিয়েছি তা খুব পরিষ্কার’। ওই প্রজ্ঞাপনে চীনকে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক ও বস্তুগত সমর্থন দেয়া বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। চীনের মহাকাশ সক্ষমতা ও তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডারের দ্রুত সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আর সবশেষে বেইজিংকে কৌশলগত ঝুঁকি হ্রাস আলোচনায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বুধবার রাতে বাইডেন তার ন্যাটো মিত্র ও অংশীদারদের হোয়াইট হাউজে এক নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন। ন্যাটো জোটকে ‘বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জোট’ বলে অভিহিত করেছেন বাইডেন।


আরো সংবাদ



premium cement