আলোচিত ডা: সাবরিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে সেই আলোচিত জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা: সাবরিনা শারমিন হুসেন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আত্মসাৎ এবং করোনার পরীক্ষা না করেই ভুয়া ও জাল রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর গতকাল বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিও সার্জারি বিভাগের সাবেক রেজিস্ট্রার ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা: সাবরিনা শারমিনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, ডা: সাবরিনার স্বামী জেকেজি হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল চৌধুরী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্মচারী আ স ম সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির, তানজিনা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেসা রিমা।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি সাবরিনা শারমিন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশ্য এবং কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে একটি লাভজনক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও অন্যদের যোগসাজশে অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন, ট্রেড লাইসেন্স বিহীন ওভাল গ্রুপের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কোভিড-১৯-এর নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার স্বামী আরিফুল চৌধুরী।
মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, করোনা মহামারির সময় বুথ থেকে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর জেকেজি হেলথ কেয়ারকে অনুমোদন দেয়। কিন্তু বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহ না করে আসামি সাবরিনা শারমিন ও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর নির্দেশে জেকেজির কর্মচারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি পরীক্ষার জন্য পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা করে নেয়। তদুপরি যথাযথভাবে করোনার পরীক্ষা না করে আনুমানিক ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া ও জাল রিপোর্ট তৈরি করে তা সেবাগ্রহীতাদের সরবরাহ করে। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তারা অর্থ সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেন।
দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে, করোনা মহামারীর সময় যখন সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি এবং লকডাউন চলছিল (১ এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২০), তখন মাত্র তিন মাসে ডা: সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর ওভাল গ্রুপ এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ভেলবিল সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার সাত টাকা জমা হয়, যা করোনার নমুনা পরীক্ষার টাকা বলে দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
মামলায় করোনার নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ছাড়াও ডা: সাবরিনার বিরুদ্ধে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দু’টি ভিন্ন টিআইএন নম্বর খোলার অভিযোগ আনা হয়। তাতে বলা হয়, ডা: সাবরিনা শারমিন প্রকৃত জন্মতারিখ ১৯৭৮ সালকে ১৯৮৩ সাল বানিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ান।
মামলায় বলা হয়, আসামিরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে কর্মরত থেকে বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। করোনা মহামারীর সময় জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভুয়া ও জাল রিপোর্ট দিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন।
এর আগেও করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই সাবরিনা, তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৮ জনকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড হয়। জালিয়াতির ঘটনায় কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বাদি হয়ে তেজগাঁও থানায় ওই মামলা দায়ের করেন।
২০২০ সালে স্বামী আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রস্তুত ও সরবরাহ করে আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার (ডা: সাবরিনা চৌধুরী) বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা