জালিয়াতির অভিযোগ ডিএসসিসির
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অনুমতি না নিয়ে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে রাস্তা খুঁড়েছে ঢাকা ওয়াসা। রাজধানীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগ শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তায় এ খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। এ ঘটনায় থানায় জিডি ও ঢাকা ওয়াসাকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। এ দিকে গত মাসে যাত্রাবাড়ী এলাকায়ও এভাবে অনুমতি না নিয়ে ডিএসসিসির সড়ক খনন করেছিল ওয়াসা।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের আওতাধীন লালবাগ খেলার মাঠ (শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ) সংলগ্ন পানির মেইন লাইনে ইলেকট্রনিক প্রেসার রিডিউসিং ভাল্ভ (ই-পিআরডি) স্থাপন কাজের জন্য রাস্তা খননের অনুমতি চায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। করপোরেশনের ওয়ান স্টপ সেল থেকে এই খনন কাজের অনুমতি দেয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল স্বাক্ষরিত একটি অনুমতিপত্র ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের (রক্ষণাবেক্ষণ) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাকিম হোসেন বরাবর পাঠানো হয়। অনুমতিপত্রে ২৪ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ওই রাস্তা খনন করতে হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খননের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল ওয়াসা ২৩ মে পর্যন্ত খনন কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে। ৩০ এপ্রিল করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী চিঠিটি পান। তবে ঈদুল আজহা ও করপোরেশন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় তুলে ধরে এ সময় রাস্তা খনন করলে জনভোগান্তি হবে জানিয়ে অনুমতি দেয়া যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মৌখিকভাবে জানিয়ে দেয় ডিএসসিসি। কিন্তু এরপরেও অনুমতি ছাড়া রাস্তা খোঁড়ার জন্য ঢাকা ওয়াসা থেকে দুইবার উদ্যোগ নেয়া হলে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী গত ২০ মে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খোঁড়া করা যাবে না মর্মে চিঠি দেয়।
এ অবস্থায় গত সোমবার বেলা আড়াইটায় করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবারো খবর আসে, ওয়াসা ওই রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি করছে। বিষয়টি নজরে এলে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খননকৃত এলাকায় যান। সেখানে খনন কাজে নিয়োজিত লোকজনের কাছে রাস্তা খননের অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তারা অনুমতিপত্রও দেখায়! পরে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে খনন কাজের অনুমতি সম্পর্কে অবগত করা হলে তিনি অনুমতিপত্র দেখতে চান। তখনই বেরিয়ে আসে ঢাকা ওয়াসার জালিয়াতি! সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেখেন যে, তার স্বাক্ষর জাল করে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভুয়া অনুমতিপত্র দেখিয়ে সেখানে রাস্তা খনন করছিল। ততক্ষণে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে সটকে পড়ে খনন কাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার কর্মী ও তদারকিতে থাকা লোকজন। পরে এই খনন কাজে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। জব্দকৃত মালামালের মধ্যে দুইটি জেনারেটর, একটি ড্রিল মেশিন, দুইটি অ্যালুমিনিয়াম বোল, দুইটি সাবল, একটি কোদাল, একটি এলইডি লাইট ও পাঁচটি হেলমেট রয়েছে।
ডিএসসিসি জানিয়েছে, ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ৪.৬০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২.৭০ মিটার প্রস্থ অর্থাৎ ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি চাওয়া হয় এবং ২১ এপ্রিল খননের অনুমতি দেয়া পত্রে ওয়াসার চাওয়া ১২.৪২ বর্গমিটার সড়ক খননের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গতকাল ঢাকা ওয়াসা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে এবং অনুমতি না নিয়ে উল্লিখিত সড়কের দুইটি স্থানে ১৩.২৯ বর্গমিটার (৪.৪৩´৩ মিটার) ও ২.০৪ বর্গমিটার (১.৭´১.২ মিটার) সড়ক খনন করে। অর্থাৎ অনুমতি চাওয়া হয়েছিল একটি স্থানে কিন্তু খনন করেছে দু’টি স্থানে। এ ছাড়াও অনুমতি চাওয়া বর্গমিটারের সাথে খননকৃত অংশেরও ফারাক রয়েছে।
এভাবে স্বাক্ষর জাল করে লালবাগে সড়ক খননের ঘটনায় ওয়াসা নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং লি.-এর প্রকৌশলী সৈয়দ আবু জাফরের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৩ এর কার্য সহকারী মো: মাহবুবুর রহমান লালবাগ থানায় জিডি করেন। এ ছাড়া বিনা অনুমতিতে সড়ক খননের ঘটনায় ওয়াসাকে ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৯২ টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯ এর ১.৩.৫ ধারা অনুযায়ী এই জরিমানা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী মিঠুন চন্দ্র শীল জরিমানা আরোপ সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবার রাতেই ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পত্র দেয়। ঢাকা ওয়াসা গতকাল দক্ষিণ সিটির সে পত্র গ্রহণ করে। বিনা অনুমতিতে সড়ক খনন ফি ৫ গুণ জরিমানা বাবদ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৫১৫ টাকা এবং ১৫% ভ্যাট বাবদ এক লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৭ টাকাসহ সর্বমোট ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৯২ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে চালান/পে-অর্ডারের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খনন তহবিলে জরিমানার টাকা জমা দিতে পত্রে অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকা ওয়াসা অনুমতি না নিয়ে লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ সংলগ্ন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছিল। এ বিষয়ে অবগত হলে আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে যান। আমি তখন নগর ভবনে দাফতরিক বৈঠকে ছিলাম। এ সময় সেখানে থাকা ঢাকা ওয়াসার লোকজন আমাদের কর্মকর্তাদের আমার স্বাক্ষরিত সড়ক খননের একটি অনুমতিপত্র দেখান। এ বিষয়ে সন্দেহ হলে তারা অনুমতিপত্রটি আমাকে পাঠায়। সেটি দেখেই আমি নিশ্চিত হই, আমার স্বাক্ষর জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের লোকজন সেখান থেকে সরে যায়। এরপর খনন কাজে ব্যবহৃত সেসব মালামাল আমরা জব্দ করি। আর যেহেতু আমার স্বাক্ষর জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।
এ দিকে জানা যায়, গত মাসের ২৩ জুন যাত্রবাড়ী এলাকায় ডিএসসিসির অনুমিত না নিয়েই রাস্তা খুঁড়ে ফেলে ঢাকা ওয়াসা। এ ঘটনায় ওয়াসার উপ-প্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে গতকালের ঘটনায় মোস্তফা তারেক কিছুই জানেন না বলে নয়া দিগন্তকে জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা