১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বেনজীরের গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট পরিদর্শনে দুদক টিম

-

পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের পরিবারের মালিকানাধীন গুলশানের ১২৬ নম্বর সড়কের র‌্যাংকন আইকন টাওয়ারের চারটি ফ্ল্যাট পরিদর্শন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ টিম।
গতকাল সোমবার দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে একটি টিম ওই বাড়ি পরিদর্শনে যায়।
মঞ্জুর মোর্শেদ সাংবাদিকদের জানান, আদালত যেহেতু আমাদের রিসিভার নিয়োগ দিয়েছেন, তার ধারাবাহিকতায় রিসিভার কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমি, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলীরা বাড়িটি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। এখন থেকে ওই ফ্ল্যাট চারটির দেখভাল করার দায়িত্ব রিসিভার কমিটির। গত ২৭ জুন আদালতের নির্দেশনায় দুদককে রিসিভার নিয়োগ দেয়া হয়।
রাজধানীর গুলশানের ১২৬ নম্বর সড়কের এক নম্বর বাড়ি র‌্যাংকন আইকন টাওয়ার। ১৯ দশমিক ৭৫ কাঠা জমির ওপর তৈরি ১৫তলা এই ভবনটিতে রয়েছে ২৫টি অ্যাপার্টমেন্ট। দু’টি বেজমেন্ট। ৩৭টি কার পার্কিং। ভবনে ২০২৩ সালের ৫ মার্চ একসাথে চারটি ফ্ল্যাট কেনেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। নিজের অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই দুই হাজার ২৪২ বর্গফুটের দু’টি ও দুই হাজার ৩৫৩ বর্গফুট আয়তনের দু’টি মোট চারটি ফ্ল্যাট কিনেন তিনি। র‌্যাংকন আইকন টাওয়ারে এই চারটি ফ্ল্যাটের তিনটি সাভান্না ইকো রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিসান মির্জার নামে কেনা। অপর ফ্ল্যাটটি বেনজীর আহমেদের ছোট মেয়ের হয়ে তিনি নিজের নামে কেনেন।

গত ২৩ ও ২৬ মে দুদকের দুই দফায় করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। ২৩ মে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া ২০৫ একর সম্পদের মধ্যে ১৪২ একর (৪৬৮ বিঘা) রয়েছে স্ত্রী জিসান মির্জার নামে। গত ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি ছাড়াও মাদারীপুরের ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি রয়েছে।

সেই সাথে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুই দফা মিলিয়ে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬২১ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিকস শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) ফ্রিজ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে।
গত ২ জুলাই বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, জ্যেষ্ঠ কন্যা ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং মেজো কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের সম্পদের হিসাব চেয়ে পৃথক পৃথক সম্পদবিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক।
গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করে।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন ও স্ত্রী জিসান মির্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। তবে হাজির না হওয়ায় তাদের দ্বিতীয় দফায় ২৩ ও ২৪ জুন তলব করা হলেও হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেন বেনজীর ও তার পরিবার।
অন্য দিকে বেনজীরের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতির আরো একটি অভিযোগ দুদকে চলমান রয়েছে। গত ২৫ জুন এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে পাসপোর্ট অধিদফতরের দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও দুই পরিচালকসহ ১৫ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement