যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরাইলের জবাবের অপেক্ষায় হামাস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:৫৯
- সরকারকে চাপ দিতে ইসরাইলে বিক্ষোভ
- গাজার স্কুলে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ১৬
- বিমান থেকে খাদ্য নিক্ষেপ সৌদি-জর্দানের
গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি বিষয়ক প্রস্তাবে ইসরাইলের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। রোববার হামাসের দুই কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। মার্কিন প্রস্তাবিত এই চুক্তির শর্তগুলোতে সম্মতি জানানোর পাঁচ দিন পর এমন মন্তব্য করল হামাস। রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামাসের দুই কর্মকর্তার একজন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আমাদের জবাব জানিয়েছি। এখন আমরা দখলদারদের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছি।’ মে মাসের শেষের দিকে তিন পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এতে মধ্যস্থতা করেছে কাতার ও মিসর। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং অবশিষ্ট ১২০ ইসরাইলি বন্দীকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এই প্রস্তাব দেয়া হয়। এ বিষয়ে অবগত অপর ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরাইল কাতারের সাথে আলোচনা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ইসরাইলি প্রতিনিধিরা হামাসের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাতারি প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেছেন এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এটি কতদিন চলতে পারে সেটি নির্দিষ্ট করে জানাননি তিনি। মে মাসে বাইডেন যখন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন তখন হামাস জানায়, আগে ইসরাইলকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হবে এরপর তারা যুদ্ধবিরতির চুক্তি করবে। কিন্তু ইসরাইল এটি মানেনি। এরপর গত সপ্তাহে হামাস তাদের এই প্রধান দাবি থেকে সরে আসে। তারা এখন বলছে, প্রথমে যে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হবে; এই সময়টায় তারা ইসরাইলের সাথে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে থাকবে। তবে হামাস মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে জানিয়েছে, তারা লিখিত নিশ্চয়তা চায়, যত দিন যুদ্ধ চলবে তত দিন ইসরাইল আর যুদ্ধ শুরু করবে না।
সরকারকে চাপ দিতে ইসরাইলে বিক্ষোভ
এ দিকে হামাসের সাথে বন্দিচুক্তিতে পৌঁছাতে নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দেয়ার প্রচেষ্টায় ইসরাইলে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় সড়ক অবরোধ এবং সরকারি মন্ত্রীদের বাড়ির সামনে পিকেটিং করেন তারা। রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। ইসরাইলি মিডিয়া অনুসারে, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার সময়ের সাথে মিল রেখে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২৯ মিনিটে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ চলাকালে শহরের ব্যস্ত সময়ে সারা দেশের প্রধান প্রধান মোড়গুলোতে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। দেশটির প্রধানসড়ক তেল আবিব-জেরুসালেম মহাসড়কে কিছুক্ষণের জন্য টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। পুলিশ পৌঁছলে সেখান থেকে তারা সরে যান।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৯ মাস যুদ্ধের পর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার একটি চুক্তির প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে আরো কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। মাইক ও ব্যানার হাতে ছোট ছোট দলগুলোও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও জোটের আইনপ্রণেতাদের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ করেন। নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ জোটের সদস্য ক্যাবিনেট মন্ত্রী রন ডার্মারের বাড়ির বাইরে বিক্ষোভকারীদের একটি ছোট ভিড় চিৎকার করে বলেন, ‘পূর্ণ ব্যর্থতা! পূর্ণ ব্যর্থতা!’ গাজার সীমান্তের কাছে অর হ্যানারের কিবুতজে ৭ অক্টোবরের হামলায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি করে কালো বেলুন এবং গাজায় এখনো বন্দী রয়েছেন এমন প্রতিটি ব্যক্তির জন্য একটি করে হলুদ বেলুন ঝুলিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা।
গাজার স্কুলে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ১৬
গাজার একটি স্কুলে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ১৬ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা; এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো কয়েক ডজন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসেইরাত আশ্রয় কেন্দ্রে ওই স্কুল ভবন ছিল হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়স্থল। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা আল-জাওনি স্কুল এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। ওই ক্যাম্পের আরেক বাড়িতে পৃথক বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নুসেইরাত স্কুলে হামলার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপ ও ধূলার মধ্যে বয়স্ক ও শিশুরা চিৎকার করছে। তারা আহতদের পাশে দাঁড়াতে ছোটাছুটি করছিল। এক নারী সাংবাদিকদের বলেছেন, এমন কিছু শিশুর প্রাণ গেছে, যারা হামলার সময় ভবনটিতে কুরআন পড়ছিল। ‘কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই তারা হামলা করেছে। এ নিয়ে চতুর্থবার তারা স্কুলটিতে হামলা চালাল।’
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৮ হাজার ১৫৩ জন নিহত এবং ৮৭ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ছিটমহলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে, গত ২৪ ঘণ্টা ইসরাইলি হামলায় আরো ৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১২৩ জন আহত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় যোগ করেছে।
বিমান থেকে খাদ্য নিক্ষেপ সৌদি-জর্দানের
গাজাবাসীর জন্য বিমান থেকে খাদ্যসামগ্রী ফেলেছে সৌদি আরব ও জর্দান। সৌদি বার্তাসংস্থা কেশেরিফকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ। খবরে বলা হয়, রোববার গাজায় বিমান থেকে প্রায় ৩০ টন খাদ্যসামগ্রী ফেলা হয়েছে। যৌথ উদ্যেগে এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে সৌদি ও জর্দান সরকার। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জর্দানের হাশেমাইত দাতব্য সংস্থা এই খাদ্যসামগ্রীর জোগান দিয়েছে। পরে জর্দানের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে এয়ার ড্রপ কর্মসূচিতে অংশ নেয় ওই দাতব্য সংস্থার কর্মীরা। গাজাবাসীর জন্য উপর থেকে যেসব খাদ্যসামগ্রী ফেলা হয়েছে তা রান্না ছাড়াই গ্রহণের যোগ্য। গাজায় ক্রমাগত ইসরাইলি বাহিনীর অবরোধের কারণে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের জোগান নেই। যার ফলে দিনের বেশির ভাগ সময় অভুক্ত অবস্থাতেই পার করতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। উপত্যকায় খাদ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে না দেয়ায় আকাশ থেকে খাদ্য বিতরণের কর্মসূচি নিয়েছে এ দুই দেশ।