সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের সক্ষমতা বাড়াতে ৩,৮০২ কোটি টাকার প্রকল্প
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৩২
এবার সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের সক্ষমতা বাড়াতে একটি ‘ডাউস’ সাইজের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’। আর এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নের সম্ভাব্যতা রয়েছে। প্রকল্পে এডিবির অর্থায়ন নিশ্চিত করা এবং প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রকল্প ছক (ডিপিপি) প্রণয়নে এডিবির মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে অতি সম্প্রতি প্রকল্পের একটি প্রাথমিক প্রস্তাবনা নীতিগত অনুমোদনে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
উল্লেখ্য, এই পেনশন কর্মসূচি ঘিরে ইতোমধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের জন্য করা পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ এর বিরোধিতা করে ইতোমধ্যে আন্দোলনে নেমেছেন এবং লাগাতার ক্লাস বর্জন করে চলেছেন।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে তিন বছর আট মাস (চলতি বছরের নভেম্বর থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত)।
এ সম্পর্কে অর্থ বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসিীম। সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমকে টেকসই ও ফলপ্রসূ করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। এ লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি। দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাদের বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা- এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা নির্ধারণ, অবকাঠামো স্থাপন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও আর্থিক বিশ্লেষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন করা সহজ হবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এডিবির অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সংস্থাটির সাথে একটি প্রাথমিক বৈঠক করেছে এবং প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে এডিবির অনানুষ্ঠানিক সম্মতি পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় (১ ডলার = ১১৭ টাকা হিসাবে) মোট ব্যয় হবে তিন হাজার ৮০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবির অর্থায়নের পরিমাণ প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৫ কোটি ডলার এবং অবশিষ্ট সাড়ে সাত কোটি ডলার ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়সীমা ধরা হয়েছে তিন বছর আট মাস (চলতি বছরের নভেম্বর থেকে আগামী ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত)।
উল্লেখ্য, দেশের জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাদের বৃদ্ধকালীন জীবন-জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু করতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’ প্রণয়ন করেছে সরকার। আইনের আওতায় ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং ওই বছরই ১৭ আগস্ট থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়। শুরুতেই সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিম (প্রগতি, সমতা, প্রবাস ও সুরক্ষা) চালু করা হয় এবং সম্প্রতি গত ১ জুলাই থেকে ‘প্রত্যয়’ নামে আরো একটি স্কিম চালু করা হয়েছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের ১ জুলাই বা তৎপরবর্তীতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলক প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, ২০২৪ সালের ১০ জুন পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। পেনশন স্কিমের চার ক্যাটাগরির স্কিমে মোট নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ তিন হাজার ১৭৬ জন এবং সাবস্ক্রিপশন বাবদ মোট জমা হয়েছে ৮৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে সমতা স্কিমে দুই লাখ ২৪ হাজার ১৬৪ জন, প্রগতি স্কিমে ২১ হাজার ২৯৪ জন, সুরক্ষা স্কিমে ৫৬ হাজার ৯১৯ জন এবং প্রবাস স্কিমে ৭৯৯ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। নিবন্ধনকারীদের অর্থ থেকে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা