ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক নেয়ার শর্তে ইম্পেরিয়ালকে ২০০ কর্মীর নিয়োগ অনুমতি
- মনির হোসেন
- ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ডাটাবেজ থেকে কর্মী নির্বাচন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রসেস ফলো চার্ট অনুসরণসহ বেশ কিছু শর্তে রিক্রুটিং এজেন্সি ইম্পেরিয়াল রিসোর্সেস লিমিটেডকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ট্যাক্সি কোম্পানিতে ২০০ কর্মী প্রেরণের জন্য নিয়োগানুমতি দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের (কর্মসংস্থান-শাখা-২) তথ্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সিস্টেম এনালিস্ট শাখা থেকে অবহিত করা হয়। শুধু মেসার্স ইম্পেরিয়াল রিসোর্সেস লিমিটেড নয় এমন আরো বেশ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিএমইটি এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে নিয়োগানুমতি দেয়া হয়েছে।
অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্সি ইম্পেরিয়াল রিসোর্সেস লিমিটেডের (আরএল-১৮৭৪) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ট্যাক্সি কোম্পানিতে মোটরসাইকেল ড্রাইভার পদে ২০০ জন কর্মীর নিয়োগানুমতি ও প্রচারের অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো। এতে বলা হয়েছে, কর্মীর মাসিক বেতন হবে ২৬০০ দুবাই দিরহাম। অন্যান্য সুবিধাদি চাহিদাপত্র, ক্ষমতাপত্র, নমুনা চুক্তিপত্র ও অঙ্গীকারনামা অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ হবে ২ বছর। প্রবেশন পিরিয়ড হবে ৬ মাস। দৈনিক কর্মঘণ্টা হবে ১২ ঘণ্টা (সপ্তাহে ৬ দিন)। বাসস্থান চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবীমা, ইন্স্যুরেন্স, লিভ বেনিফিট, রেসিডেনসিয়াল পারমিট, যাতায়াত, এয়ার টিকিট, জীবনযাপন ভাতা, কর্মীর পাসপোর্ট ধরে রাখার অধিকার ইত্যাদি দুবাই ট্যাক্সি কোম্পানির নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হবে বলে নিয়োগানুমতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কমসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান শাখা ২ থেকে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।
নিয়োগানুমতির ১৬টি শর্তের মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ এর ১৯ (৩) ধারা অনুযায়ী রিক্রুটিং এজেন্সিকে বিএমইটির চলমান ডাটাবেজ থেকে কর্মী নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিএমইটি কর্তৃক জারিকৃত প্রসেস ফলো চার্ট অনুসরণ করতে হবে। ডাটাবেজ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়টি মহাপরিচালক বিএমইটি নিশ্চিত করবেন এবং ডাটাবেজবহির্ভূত কোনো কর্মীর অনুকূলে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স প্রদান করবেন না। শর্তের মধ্যে আরো বলা হয়েছে, বহির্গমন ছাড়পত্রের পূর্বে নির্বাচিত প্রত্যেক কর্মীর সাথে নিয়োগচুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। বিষয়টি রিক্রুটিং এজেন্সি নিশ্চিত করবে। বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দুবাই প্রান্তের সকল ব্যয় বাবদ (লেভি, বিমানভাড়া ইত্যাদি) নিয়োগকারী বহন করবেন। কর্মীর ভিসা এবং ফ্লাইট নিশ্চিত হওয়ার পর রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক অভিবাসন ব্যয় বাবদ কর্মীর কাছ থেকে এক লাখ দুই হাজার ২১০ টাকা চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবেন। যার প্রমাণপত্র মহাপরিচালক, বিএমইটি বরাবর উপস্থাপন করতে হবে। চুক্তিপত্রের কোনো শর্ত লঙ্ঘন হবে না, অনুমোদিত কর্মীরা উক্ত কোম্পানিতে অবশ্যই চাকরি পাবেন, প্রত্যেক কর্মীকে প্রস্তাবিত বেতন, ভাতা আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে এবং কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মীর থাকা খাওয়ার খরচ ও প্রত্যাবর্তন ব্যয়সহ কর্তৃপক্ষের আরোপিত ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকবে মর্মে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দাখিল করতে হবে।
ডাটাবেজ থেকে কর্মী সংগ্রহে মন্ত্রণালয়ের শর্তাদি পূরণ করা হবে কি-না তা জানতে গতকাল সন্ধ্যার আগে রিক্রুটিং এজেন্সি ইম্পেরিয়াল রিসোর্সেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেও কথা না বলে সাথে সাথে কেটে দেন। পরবর্তীতে আবার টেলিফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত বায়রার একাধিক নেতার সাথে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তারা এই বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, নিয়োগানুমতি প্রদানের সময় মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নিয়ম ও শর্ত জুড়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে এগুলো যদি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মেনে চলেন তাহলে কর্মীদের অভিবাসন নিরাপদ হবে। তবে অনেকে মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনা নানা অজুহাতে মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সব এজেন্সিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা। অনেকে আবার সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের ৬-৭ গুণ টাকা বেশি নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মস্থলে গিয়ে সমস্যায় পড়লে বা কোনো কারণে দেশে ফিরে লিখিত অভিযোগ দিলে তখন ওই কর্মীকে ঢাকায় রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া সরকার নির্ধারিত টাকাই আমলে নিয়ে তদন্তের শুনানিতে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ধরা হয় এবং একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ধার্য করে কর্মীকে ফেরত দেয়া হয়। এতে ওই শ্রমিক আর্থিক ও মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়েন। এই বিষয়গুলোও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং করা উচিত বলে তারা মনে করেন। তাহলেই অভিবাসন ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফিরবে বলে তাদের ধারণা। তাদের কেউ কেউ এ-ও বলছেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরে আসলে অভিবাসন ব্যয় আরো কমে আসবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা