মধুমতি ও ঘাঘট নদীর ভাঙনে নিঃস্ব শত পরিবার
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০৫
নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতি এবং রংপুরের পীরগাছায় ঘাঘট নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি।
লোহাগড়া (নড়াইল) সংবাদদাতা জানায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামে মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালা, এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইনের খুঁটি। ভাঙনের মুখে পড়ে বাড়িঘর অনত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার।
তারা জানান, একাধিকবার মধুমতি নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড শিয়রবর গ্রামে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেললেও তা এবারের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
রামকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম, আলাউদ্দিন, বালাম, চুন্নুমিয়া, আফজাল মোল্লা, হুমায়ুন কবির, আরফিন মোল্লা, ওসমান মুন্সী জানান, ‘মধুমতি নদীর ভাঙনে তাদের বসতবাড়ি বার বার নদীতে চলে গেছে। এসব মানুষ নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। যেভাবে তীর ভাঙছে তাতে করে বসতভিটা কখন নদীর পেটে চলে যায়, তার ঠিক নেই। এবার বাড়ি ভাঙলে মাথাগোঁজার ঠাঁই থাকবে না তাদের।’
রামকান্তপুর গ্রামের তোতা মিয়া জানান, তাদের পাঁচ বিঘা জমি নদিতে চলে গেছে। এ পর্যন্ত তিনবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এবারো ভাঙনের মুখে রয়েছেন।’
বৃদ্ধ আরফিন মোল্যা জানান, বসতভিটা ছাড়াও তাদের আবাদি জমি, সুপারি বাগান, পুকুরসহ ভাঙনে পাঁচ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। সেটিও ভাঙনের মুখে রয়েছে। এরপর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবেন সে ঠিকানাও নেই। এ কথা বলতেই কেঁদে ফেলেন এই বৃদ্ধ।
বালাম মোল্লার স্ত্রী তহমিনা বেগম জানান, ইতঃপূর্বে ২ বার তাদের বসত ভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো: লাবু মিয়া জানান, মধুমতী নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, আবাদি জমি, মাদরাসা, মসজিদ ভাঙনের শিকার হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নদীতে পুরো এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। তিনি মধুমতী নদীর ভাঙন রোধে জাতীয় সংসদের হুইপ নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মর্তুজাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষেয়ে নড়াইল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, লোহাগড়া উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের ভাঙন রোধে আপাতত কোনো বরাদ্দ নেই, এ কারণে কোনো ধরনের কাজ করতে পারছি না। তবে বরাদ্দ পেলে আগামীতে ওই এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।
পীরগাছা (রংপুর) সংবাদদাতা জানান, রংপুরের পীরগাছায় ঘাঘট নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে অন্য দিকে কাউনিয়া উপজেলা ভাঙছে তিস্তা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পীরগাছা উপজেলার পারুল, পীরগাছা সদর এবং কৈকুড়ী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে ঘাঘট নদী বয়ে গেছে। বিগত ৫০ বছরে এই তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শত শত একর জমি চলে গেছে নদীতে। নদীর আশপাশের মানুষ বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করে বাড়িঘর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু এসব বাড়িঘরও রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। ভাঙন থেকে রক্ষায় অনেক স্থানে এখন পর্যন্ত ফেলা হয়নি বালুর বস্তা কিংবা পানি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা। কৈকুড়ি ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের কান্দুরা সোনারের বাড়িটি যেকোনো মুহূর্তে নদীতে চলে যেতে পারে।
স্থানীয় মাস্টার রেজাউল করিম বলেন, ঘাঘট নদীর ভাঙন চার বছর থেকে শুরু হয়েছে। আরো কমপক্ষে ১০০ ফুট জিও ব্যাগ দেয়া দরকার। সৈয়দপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, আমাদের নদীভাঙনটি অনেক আগের সমস্যা। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের ডিও লেটার দেয়ার পরেও কাজ করা হয়নি। পীরগাছা সদর ইউনিয়নের পিয়ার পাড়ার আল-আমিন ও আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় ঘাঘট নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও কুটিপাড়া গ্রামের কান্দুরা সোনারের বাড়িটি যেকোনো মুহূর্তে নদীতে চলে যেতে পারে। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ তার বাঁশ ঝাড়টি নদীতে চলে গেছে।
পারুল ইউনিয়নের সোবহানের ঘাটের ভাটিপাড়ার লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় সামান্য নদীভাঙন শুরু হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, আমার এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে আমাদের এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
কৈুকুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নুর আলম মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের কুটিপাড়া, ৬৮টি পাড়া, মোকছুদ খাঁ, শুম্লিপাড়া, মোংলাকুটি এবং কৈকুড়ী মৌজার কিছু কিছু স্থানে প্রতি বছরেই নদী ভাঙে। এবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন, ঘাঘট নদীর আশপাশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মাসিক সমন্বয়ক সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পীরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন বলেন, ওই সব এলাকার মানুষ খুবই কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমরা অবগতি করেছি। নদীর আশপাশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা