১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সালের স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও বিপুল সম্পদ

-


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিজের পাশাপাশি এসব সম্পদ ফয়সালের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাইসহ আত্মীয়স্বজনের নামে দেখানো হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
ফয়সালের সম্পদের বিবরণী বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতের কাছে তুলে ধরেছে দুদক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠা প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।

এ ছাড়া ফয়সাল ও তার আত্মীয়স্বজনের নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের আদেশে বলা হয়, এই জব্দের আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় এসব সম্পদ হস্তান্তর বা বিনিময় করা যাবে না।
এর আগে এনবিআরের সদস্য মো: মতিউর রহমান ও তার পরিবারের নামে বিপুল সম্পদ থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ছাড়া পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদ থাকার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বিষয়টি অনুসন্ধান করছে দুদক। বেনজীর ও মো: মতিউর কিভাবে এত বিপুল সম্পদের মালিক হলেন, তা নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্যরাও। তারা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন পর‌্যায়ে এ রকম কর্মকর্তা বর্তমানে আরো থাকতে পারেন।

অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক।
এনবিআরের কর্মকর্তা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে গতকাল ফয়সাল ও তার আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদের বিবরণী আদালতের কাছে তুলে ধরে।
দুদক আদালতকে বলেছে, ২০০৫ সালে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে এনবিআরের আয়কর বিভাগের প্রথম সচিব (ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট)। থাকেন রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ফ্ল্যাটে। তার স্থায়ী ঠিকানা খুলনার খান এ সবুর রোডের মুজগন্নি এলাকায়।

ফ্ল্যাট, প্লট ও সঞ্চয়পত্র
আদালতে জমা দেয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুনে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ফয়সালের নামে পাঁচ কাঠার একটি প্লট কেনা হয়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তার নামে আলাদা চারটি দলিলে জমি কেনা হয়। এসব সম্পদের দলিল মূল্য দেখানো হয় ৪০ লাখ টাকার বেশি।
গত বছর রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে কেনা হয় পাঁচ কাঠার প্লট। প্লট কেনার অর্থ (৭৫ লাখ টাকা) পরিশোধ করা হয়েছে মাহমুদা হাসানের নামে থাকা একটি ব্যাংক হিসাব থেকে। এর চার বছর আগে স্ত্রীর নামে একই এলাকায় আরো পাঁচ কাঠার একটি প্লট কেনা হয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে। এসব সম্পদের দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ টাকা।
ফয়সালের শ্বশুর আহমেদ আলীর নামে রাজধানীর রমনা এলাকায় গত বছর অক্টোবরে একটি ফ্ল্যাট কেনা হয়, যার মূল্য দেখানো হয় ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ২০২২ সালে খিলগাঁওয়ে ১০ কাঠার একটি প্লট কেনা হয়। দলিল মূল্য ৫২ লাখ টাকা।
ফয়সাল ও তার পরিবারের সদস্যের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের বিবরণও আদালতে জমা দিয়েছে দুদক। এতে দেখা যায়, ফয়সাল, তার স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে ৫০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর বাইরে তার স্বজনদের নামেও সঞ্চয়পত্র রয়েছে। দুদক বলেছে, তাদের নামে থাকা সঞ্চয়পত্রের মোট অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ফয়সাল, তার স্ত্রী, শ্বশুর ও তার স্বজনদের ১৯টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আদালতকে জানিয়েছেন, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে বদলি বাণিজ্য ও আয়করদাতাদের ভয় দেখিয়ে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধলব্ধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা গোপন করে মানি লন্ডারিং অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো: মোস্তাফিজ আদালতকে লিখিতভাবে জানান, এনবিআর কর্মকর্তা আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন করেছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের জন্য নিজের নামসহ তার আত্মীয়স্বজনের নামে ৭০০টির বেশি হিসাব খোলেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস গোপন করা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল