১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
আমি মালিক নই, ভাড়াটিয়া : ইমরান

সাদিক অ্যাগ্রোতে ডিএনসিসির অভিযান

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযান : নয়া দিগন্ত -

খাল ও সড়কের জায়গা দখল করে রাখায় মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ সময় সাদিক অ্যাগ্রোর দখল করা অবৈধ অংশ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। তবে খবর পাওয়ার পর আগের রাত থেকেই সাদিক অ্যাগ্রোর বেশ কিছু গরু সরিয়ে নেয়া হয়। এ ছাড়া খাল ও সড়কের জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে রাখা অস্থায়ী কিছু স্থাপনাও সরিয়ে নেয় সাদিক অ্যাগ্রো। এ দিকে উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন বলেন, আমি এই জমির মালিক না, একজন ভাড়াটিয়া। তাই উচ্ছেদ অভিযানে আমার কিছু যায় আসে না। আমি অন্য জায়গায় চলে যাবো।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোতে অভিযান শুরু হয়। অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসির দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ ও মাহবুব হাসান। অভিযানে ডিএনসিসির এক্সেভেটর ও বুলডুজারসহ বিশেষ যান দিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। অভিযানে ডিএনসিসির অভিযান পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পরিচ্ছন্নতা কর্মী অংশ নেন। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
অভিযানের শুরুতে খালের অংশে দখলে থাকা অস্থায়ী স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। সাদিক অ্যাগ্রো ছাড়াও বেশ কিছু অস্থায়ী স্থাপনা এখানে গড়ে উঠেছিল, সেগুলোও উচ্ছেদ করেছে ডিএনসিসি। মূলত খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল সাদিক অ্যাগ্রোর খামার। দখলের কারণে মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল সাদিক অ্যাগ্রোর অংশে একটি নালাতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সড়কের জায়গাও দখল করেছে তারা। মূলত সেই কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে ডিএনসিসি।
অভিযান প্রসঙ্গে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, খাল ও সড়কের জায়গা উদ্ধারে আমরা অভিযান শুরু করেছি। এর আগে বেশ কয়েকবার তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে,
কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, রামচন্দ্রপুর খালের দুই ধারে যারা অবৈধ দখলদার ছিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। খালের জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে এখান থেকে উত্তর সিটির মেয়র ট্রাক স্ট্যান্ড সরিয়েছেন, বহুতল ভবন ভেঙেছেন। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযান। দখলদারদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, সাদেক অ্যাগ্রোর মালিককে ঈদের আগেও আমরা নোটিশ দিয়েছি। অবৈধ স্থাপনা থাকলে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আমরা ঈদের আগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করিনি। কারণ, এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতো। আমরা এমনটা চাইনি বলে উচ্ছেদে যাইনি। সেই নোটিশের কোনো ব্যবস্থা নিইনি।
জমির মালিকের অভিযোগ, তিনি কোনো নোটিশ পাননি, তাহলে সাদিক অ্যাগ্রো ভাড়াটিয়া হিসেবে নোটিশ কিভাবে পায়? জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, খালের একটা নীতিমালা আছে। খালের পানি প্রবাহের সীমানা থেকে ৩০ ফুটের ভেতরে কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না। জমির মালিক কাগজ দেখিয়েছেন ৪ শতাংশের কিন্তু দখল করেছেন এক বিঘা। আর আমরা উচ্ছেদ করছি অবৈধ স্থাপনা, জমির মালিককে নয়। খালের ভেতরে যে অংশ আছে, সেটা আমরা উচ্ছেদ করেছি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের এ কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে একজন জমির মালিক এসেছিল। সাদেক অ্যাগ্রোর মালিক বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। আর সাদেক অ্যাগ্রোকে গত ১৮ জুন নোটিশ করা হয়েছে যেন খালে বর্জ্য না ফেলে। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরা খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করছি। এরপর আমরা খাল পরিষ্কার অভিযান চালাব।
আমি ভাড়াটিয়া, উচ্ছেদ অভিযানে আমার কিছু যায় আসে না : সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন বলেন, আমি এই জমির মালিক না, একজন ভাড়াটিয়া। তাই উচ্ছেদ অভিযানে আমার কিছু যায় আসে না। আমি অন্য জায়গায় চলে যাবো। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানকে স্বাগত জানাই এবং তা অবশ্যই হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন যে জায়গাটা খাল বলে দাবি করছে, সেটির মালিক আমি না। এই জায়গায় মালিক এই স্থাপনার দ্বিতীয়তলায় থাকেন। তিনি তার জায়গায় স্থাপনা করেছেন, আমি নিচতলা ভাড়া নিয়েছি। মালিক নিজেই দ্বিতীয়তলায় থাকেন। খাল ভরাটসহ যা কিছু বলা হচ্ছে সবই মালিকের করা। আমার কিছুই না। আমি তার জায়গা ভাড়া নিয়েছি নিচ তলায়। দ্বিতীয় তলায় যেহেতু তিনি থাকেন এবং সিটি করপোরেশন যদি মনে করে যে এটা ভেঙে দেবেন, তো ভেঙে দিতে পারে। সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক বলেন, আমি যে ভাড়া নিয়েছি এটার ডিড (চুক্তি) আমার কাছে আছে। তাই আমি এটার মালিক... বললেই হবে না। আমি খালসহ ভাড়া নেইনি। উনি স্থাপনা বানিয়েছে, সেই নিচ তলায় আমি ভাড়া নিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement