ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চাই মাদক থেকে রক্ষা করতে পারে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ জুন ২০২৪, ০০:৫৬
আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে যুব উন্নয়ন সংসদ ঢাকা আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে বক্তারা বলেছেন, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, ইয়াবা সেবনকারী শতকরা ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ! ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে মাদকের ভয়াবহতা, যুবসমাজের নৈতিক অধঃপতন ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক এ সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চাই পারে মাদকের ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আদর্শের যথাযথ অনুসরণই মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের যুবসমাজকে বাঁচাতে পারে। ইসলাম ধর্মের নৈতিক শিক্ষার পরে আমাদের সমাজকে মাদকসহ অপরাধ থেকে বাঁচাতে। কিশোর গ্যাং, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের পেছনে মাদকের অবৈধ ব্যবসা ও অপব্যবহার অন্যতম কারণ। মাদকাসক্তদের ৮০ ভাগ তরুণ-যুবসম্প্রদায়। তাই পরিবার থেকে বাবা ও মাকে সন্তানের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে মাদক থেকে দূরে থাকার জন্য।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার চিফ কোঅর্ডিনেটর মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় আরো আলোচনা করেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএসএমএমইউ বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: আতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: সাইফুর রহমান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. দেওয়ান মো: সাজ্জাদ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি প্রফেসর নূর নবী মানিক।
প্রধান অতিথি ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, সমাজ বিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশ্লেষকরা সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধ বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী করেছেন সারা দেশে মাদকের অবাধ বিস্তারকে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক শিক্ষার অপরিপূর্ণতা, আকাশ সংস্কৃতি, প্রযুক্তির অপব্যবহার, যেখানে সেখানে পর্নোগ্রাফির ছড়াছড়ি এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবেই দিন দিন এ সব অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, মাদকের ভয়াল থাবা পড়ছে তরুণ-তরুণীদের ওপর ফলে ভবিষ্যতের কারিগররা একদিকে যেমন গড়ে উঠছে অনৈতিকতা ও মাদকের ওপর ভর করে, তেমনি হ্রাস পাচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতাও।
ডা: আতিয়ার রহমান বলেন, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদ, ধূমপানসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে; তা অনেকেরই অজানা। মাদক সেবন করার কারণে স্মরণশক্তি ও মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। যৌনশক্তি নষ্ট হয় ও সেই থেকে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও যুবক সমাজের মেধা নষ্ট করে দেয়। লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। মাদকের কারণে মেধাহীন প্রজন্ম গড়ে উঠছে আমাদের দেশে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতি বছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেথামফেটামিন, হেরোইন এবং সিন্থেটিক ওপিওড যেমন বুপ্রেনরফিন এবং ফেনসিডিলের পাচার অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রতিবেশী দেশগুলোর থেকে মাদক আগ্রাসন বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রতি বছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে ২০০ মা-বাবা খুন হয়েছেন।
অতিরিক্ত সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, মাদকাসক্তি একটি রোগ। মাদকদ্রব্য, ধূমপান ও তামাক সেবন মানুষের অকালমৃত্যু এবং স্বাস্থ্যহানির অন্যতম প্রধান কারণ। বেসরকারি হিসাব মতে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, ইয়াবা সেবনকারী শতকরা ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ! ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
অ্যাডভোকেট মো: সাইফুর রহমান বলেন, পাঁচ শতাধিক মাদকাসক্তের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তাদের ১৫০ টাকার মাদক লাগে। এ হিসাবে একজন মাদকাসক্ত বছরে ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকা মাদকের জন্য ব্যয় করে। ২৫ লাখ মাদকাসক্ত বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার মাদক সেবন করে। এসব মাদকের পুরোটাই অবৈধভাবে দেশে আসছে। পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। মিয়ানমারের সাথে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমাদের দেশের চার শ্রেণির মানুষ মাদক সেবন করে। একটি হলো নিম্নবিত্তের মানুষ। যুবসমাজ যারা হতাশার থেকে মাদক সেবন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং উপরের তলার মানুষ যারা বিভিন্ন ক্লাবে বসে পার্টি করে। জেলখানায় ৯৮% মাদক মামলার আসামি। ৪০% মাদক আবার কেনাবেচা হয় জেলখানায়। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ মাদকের প্রসার আরো বাড়বে। যে সরকার বেনজীর, আজিজ, মতিউরের মতো লোক তৈরি করে, সেই সরকারের সময়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা