ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেপরোয়া হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনের চালকরা
আতঙ্কে সময় কাটে যাত্রীদের- মনির হোসেন
- ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের হলেও কিছু বাস চালক, হেলপারের বেপোরোয়া আচরণের মাঝে মধ্যে ঘটছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। এতে যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ মুহূর্তে পরিণত হচ্ছে বিষাদে। ঘটছে হতাহতের ঘটনা।
বেপোরোয়া বাসের গতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চালকদের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেঁধে দিলেও এই নিয়ম মানছেন না হাইওয়েতে চলাচলকারী বেশির ভাগ বাসের চালক ও তাদের সহকারীরা। এদের মধ্য হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস ও সেজুতি পরিবহনের চালকরা হাইওয়েতে একটু বেশি বেপোরোয়া বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এই রুটে নেমেই গতির দিক থেকে আলোচনায় আসা মারসা পরিবহনের কোনো কোনো বাসের চালক এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থেকেই চালানোর চেষ্টা করছেন বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের রোড সেফটি শাখার পক্ষ থেকে সারা দেশে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার প্রতিদিনের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হছে, বিআরটিএ’র বিভাগীয় অফিসের মাধ্যমে সমন্বয়কৃত সংঘটিত জেলাভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র দিয়ে এসব প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে।
রোড সেফটির দেয়া সড়ক দুর্ঘটনার গতকাল ২৪ জুনের হালনাগাদ তথ্য দেখা গেছে, ২৩ জুন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বমোট ২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৮ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন।
পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই রব্বানী স্বাক্ষরিত দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পরবর্তী দিন রাত ১২টা পর্যন্ত সময়ের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনা বাদ পড়লে পরবর্তী দিনের প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত করা হয়। বর্ণিত তথ্যাদির বাইরে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে কিংবা কোনো অসংগতি থাকলে বিআরটিএ রোড সেফটি শাখার ই মেইলে পাঠানোর জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
ঢাকা থেকে মারসা পরিবহনে ১৯ জুন চট্টগ্রামে এবং ২০ জুন চট্টগ্রাম থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজে ভ্রমণ করে ঢাকায় ফেরা একাধিক যাত্রী তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, জীবনে আর কোনো দিন হানিফ পরিবহনের টিকিট কাটব না। কারণ তাদের চালক ও হেলপাররা খুবই বেপোরোয়া। হানিফ এন্টারপ্রাইজের চালক এতটাই বেপোরোয়া ছিলেন যে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের কর্নেল হাটের কাউন্টার থেকে ঢাকার পল্টনে পৌঁছে যান। ফলে সময়ের হিসাব করলেই যে কেউ বুঝতে পারবেন ওই বাসের গতি কত ছিল? শুধু তাই নয়, বাসের চালক ও হেলপারকে যাত্রীরা গতি কমানোর জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া তো দেননি, উল্টো যাত্রীদের হেলপার ইশারা দিয়ে বলেন, বাসের চালানো না দেখে ঘুমিয়ে থাকতে!
আরেক যাত্রী ইমন আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, কর্নেল হাট ২ নম্বর কাউন্টার থেকে গাড়িটি নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট পর বিলম্বে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসে। চট্টগ্রামের ভেতরেই চালকের বেপোরোয়া চালনা দেখে যাত্রীরা আস্তে আস্তে গাড়ি চালানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু চালক কুমিল্লার নুরজাহান হোটেলে বিরতি এবং সেখান থেকে ঢাকায় আসা পর্যন্ত কোনো শব্দও করেননি। তিনি ঘণ্টায় ১০০/১১০ আবার কখনো ১২০ কি. মি. পর্যন্ত গতিতে গাড়ি চালান। এর মধ্যে দুই জায়গায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় বাসটি।
শুধু হানিফ পারিবহন নয়, ২০ জুন রাতে বেপোরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস পরিবহনের একটি বাস কুমিল্লার আগে পড়ে দুর্ঘটনায় পড়তে দেখেছেন বলে জানান যাত্রী জাহিদুল ইসলাম বাবলু। পরে জানা গেছে হানিফ পরিবহনের সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে শ্যামলী পরিবহন দুর্ঘটনায় পড়েছিল। পরে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি পুলিশ রেকার দিয়ে সরিয়ে ফেলে।
যাত্রী বাবলু বলেন, আমাদের বাসের সামনের ডানপাশের সিটের একজন যুবক হানিফ পরিবহনের গাড়ির গতি দেখে ভয়ে বারবার চালকের সামনে থাকা মিটার দেখছিলেন। আর বলছিলেন এখন ১০০, এখন ১১০ এ চলছে। এসময় কেউ বলছিলেন নাহ এটার গতি এখন ১৩০ কিলোতে চলছে! তখন এক যাত্রী হেলপারকে বলতে থাকেন সরকার তো ৮০ কিলোমিটারের ওপর গাড়ি চালাতে নিষেধ করেছেন। তারপরও এত স্পিডে চালাচ্ছেন কেন? এর জবাবে হেলপার তাকে উত্তর দেন, ‘এসব আইন মানার সময় নাই’!
এভাবে প্রতিদিন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেপোরোয়া গতিতে গাড়ি চলছে জানিয়ে যাত্রীরা বলেন, তারা তো ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা করার জন্য জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমাদের মতো যাত্রীদের থাকতে হয় আতঙ্কে। বাস জোরে চালানোর কারণে সারারাত সজাগ থাকতে হয়েছে।
তবে এই যাত্রীরা ১৯ জুন বেলা ১টায় ঢাকার ফকিরাপুলের মারশা পরিবহনে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় ওই গাড়ির গতি ছিল সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার। এতে সবাই স্বস্তিতে ছিলেন বলে জানান তারা।
যদিও ১৯ জুন সারা দেশে সংগঠিত ১৮টি মহাসড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছিলেন বলে রোড সেফটি শাখার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।