১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ছাগল কাণ্ড

সোনাগাজীতে শাশুড়িকে বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়ে দেন মতিউর

সোনাগাজীতে শাশুড়িকে বানিয়ে দেয়া ডুপ্লেক্সবাড়ি। ইনসেটে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর : নয়া দিগন্ত -

দেশের আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মতিউর রহমান ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের আরু মিয়া বাড়িতে শ্বশুরের ভিটায় শাশুড়িকে ১০ বছর আগে একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে দেন। ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর অনুরোধে তিনি এ বিলাসবহুল বাড়ি শাশুড়িকে বানিয়ে দেন বলে ইতোমধ্যে লোক মুখে কথা উঠেছে।
শ্বশুরবাড়িতে মতিউরের বানিয়ে দেয়া বিলাসবহুল বাড়িটি জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এই বাড়িটি দেখাশোনা করছেন। সর্বশেষ গত দুই মাস আগেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, স্ত্রী, শাম্মী আখতার শিভলী, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। দু-এক দিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েদের বাসায় থাকেন, পাশাপাশি বাড়িতেও আসা-যাওয়া করেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি জসিম।
স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও তার শ্যালক মো: নকিবের নামে সোনাগাজীতে বেশ কিছু জমিজমা রয়েছে, যা মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জ্যাঠাতো ভাই মো: আরিফুর রহমান তাদেরকে কিনে দিয়েছেন। তিনি এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। আরিফুর রহমান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। মুশফিকুর রহমান ইফাত তাদের সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই রয়েছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মীর বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর শাম্মীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এর পর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শ্যালিকা লাভলী আক্তার ও শ্যালক মো: নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে লাভলীকে পড়ালেখা শেষে বিয়ে দেন। আর শ্যালক মো: নকিবকে বাসায় রেখে লেখাপড়া করান। সম্প্রতি নকিব চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, শ্যালক নকিব ঢাকাসহ বিদেশে মতিউরের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম দেখাশোনা করেন।
সোনাপুর এলাকায় মিয়া বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটির দরজা বন্ধ। ঘরে কেউ নেই। কথা হয় মতিউর রহমানের স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর জ্যাঠাতো ভাই ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তাদের সন্তান। শাম্মী আখতারের ছোট ভাই ঢাকাতে ব্যবসা করেন। তারা বনেদি পয়সাওয়ালা। বিভিন্ন সময়ে মতিউর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সোনাগাজীতে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসতেন। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর মিয়া বাড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে তথ্য প্রদানে বিব্রতবোধ করছেন বলে জানান।
এ দিকে ঈদুল আজহার আগে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ইফাতই মতিউর রহমানের ছেলে বলে ইফাতের একাধিক নিকটাত্মীয় নিশ্চিত করেছেন। যদিও মতিউর রহমানের দাবি, ইফাত তার ছেলে নয়। এ বিষয়ে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কারণে মতিউর রহমান ছেলেকে অস্বীকার করছেন। কারণ, ১২ লাখের ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement