পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবা হত্যাকাণ্ডে তদন্তে প্রাধান্য পাচ্ছে ‘জমির বিরোধ’
খুনি শনাক্ত হয়নি এখনো- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২২ জুন ২০২৪, ০৩:১৬
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ কর্মকর্তার মা-বাবা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি ঘটনার সাথে কারা জড়িত সে ব্যাপারেও কোনো ধরনের অগ্রগতি হয়নি তদন্তে। তবে হত্যাকাণ্ডটি ডাকাতি বা সম্পদ লুটের জন্য হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বাড়ির ভেতরে সবকিছু এলোমেলো করা হলেও তেমন কিছু খোয়া যায়নি। এমনকি নিহত ফরিদার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইনটিও নেয়নি তারা। পুলিশ ধারণা করছে, জমির বিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। স্বজনরাও পুলিশকে গ্রামের বাড়িতে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের কথা বলেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে পুরনো বিরোধের মতো কোনো কারণ আছে কি না সেসব বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা।
এ দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করা হয়েছে। নিহত দম্পতির ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন বাদি হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। আবদুল্লাহ আল মামুন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত বুধবার রাত ১টা থেকে পরদিন ভোর ৬টার মধ্যে তাদের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে তার মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কারা কেন তার মা-বাবাকে হত্যা করল, এর কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। গ্রামের বাড়িতে শুধু জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণেই তার মা-বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, তা তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রাতে তার মা-বাবার লাশ রাজধানীর মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, পারিবারিক বিরোধের জেরে শফিকুর-ফরিদা দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে।
মামলার ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ বিভাগ। পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু কী কারণে, কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত দম্পতির বাড়ির কাছে কোনো ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা নেই। এ কারণে খুনি শনাক্তে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার ইকবাল হোসাইন বলেন, এটিকে ডাকাতি বা চুরির ঘটনা বলা যাচ্ছে না। কারণ ওই নারীর গলায় স্বর্ণের চেইনটি নেয়নি খুনিরা। তার মোবাইল ফোনটিও সেখানে পাওয়া গেছে। তবে বাসার ভেতর সব আলমারি খোলা পাওয়া গেছে। এ দম্পতির স্বজনরা গ্রামের বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধের কথা বলেছেন, সেগুলোসহ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে।
নিহত শফিকুরের ভাই মফিজুর রহমান পুলিশকে বলেছেন, তাদের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁঞায়। সেখানে শরিকদের সাথে জমি নিয়ে তার ভাইয়ের বিরোধ রয়েছে, যার জেরে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলাও দেয় প্রতিপক্ষ।
বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মোমেনবাগ বটতলা এলাকায় নিজের চারতলা বাড়িতে খুন হন জনতা ব্যাংকের সাবেক গাড়িচালক শফিকুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন (৫০)। পুলিশ বলছে, এ দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মামুন পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই। মামুন ও তার স্ত্রী বাবা-মায়ের সাথে একই ভবনে দোতলায় থাকেন। ঈদে মামুন ফেনীতে তার দাদাবাড়ি এবং তার স্ত্রী বাবার বাড়ি যান। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থাকেন। ছুটির ক’দিন শুধু শফিকুর ও ফরিদা বাড়িতে ছিলেন।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, তারা জানতে পেরেছেন শফিকুর রহমান প্রতিদিন সকালে উঠে বাড়ির পানির মোটর ছাড়তেন এবং বাসায় ফজরের সুন্নত নামাজ পড়ে মসজিদে যেতেন জামাত পড়তে। ‘ধারণা করছি, পানির মোটর ছাড়ার জন্য তিনি ঘর থেকে বের হলে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যার পর দোতলায় উঠে তার স্ত্রীকে হত্যা করে।’ শফিকুরের যাত্রাবাড়ীর বাড়িটির চারতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ অতি সম্প্রতি শেষ হয়েছে। আরো কিছু কাজ চলমান রয়েছে। ভবনের দোতলায় শফিকুর ও তার ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন। উপরের দুই তলার পুরোটা এবং নিচতলার একপাশ ভাড়া দেয়া।
যাত্রাবাড়ী থানার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, শফিকুরের বাড়ির পাশে যে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনটি রয়েছে, সেটির দেয়ালে রক্তের ছাপ পাওয়া গেছে। তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা শফিকুরের ভবনের ছাদ দিয়ে সেই ভবনে হয়ে পালিয়েছে। কিন্তু যারাই এই ঘটনা ঘটাক তারা শফিকুরের বাড়ি ও তার গতিবিধি সম্পর্কে আগেই ভালোভাবেই জানত। স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, জমির বিরোধের দিক ছাড়াও খুনিদের আসা-যাওয়ার এসব বিষয়ও বিশেষভাবে আমলে নেয়া হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা