সিলেটে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জামায়াতের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ জুন ২০২৪, ০২:৪১
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা প্রবল বর্ষণে সিলেট অঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দীদের দ্রুত উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দান এবং দুর্গত এলাকায় বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ শুকনো খাবার, নগদ অর্থ, ওষুধ এবং চিকিৎসাসামগ্রী ও চিকিৎসক দল পাঠানোর জন্য আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে আমি দেশবাসী সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম প্রবল বর্ষণের ফলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা অববাহিকায় কয়েক দিন আগে থেকেই বন্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যেই সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সিলেট মহানগরীতেই প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে মোট সাড়ে ১৩ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জমির ফসল, তরিতরকারি, ফলের বাগান ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। গৃহপালিত পশুপাখি রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়াও নেত্রকোনা, শেরপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা প্রভৃতি জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অধ্যাপক মুজিব বলেন, বৃহত্তর সিলেটসহ বন্যাদুর্গত এলাকার পানিবন্দী লোকদের অতি দ্রুত উদ্ধার করে নিরাপদ উঁচু স্থানে আশ্রয় দেয়া প্রয়োজন। সেই সাথে বন্যাদুর্গত লোকদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যসামগ্রীসহ শুকনো খাবার, নগদ অর্থ, চিকিৎসাসামগ্রী, ওষুধ-পথ্য এবং চিকিৎসক দল পাঠানোর জন্য আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। আমি বন্যাদুর্গতদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্ট এলাকার সব নেতাকর্মী, দানশীল ব্যক্তি, বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা ও দেশবাসী সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
দায়িত্বশীলদের দেশ পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে : গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নবী-রাসূলগণ যুগে যুগে পথহারা মানুষকে হিদায়াতের আলো পৌঁছে দিয়েছিলেন। আম্বিয়ায়ে কেরামগণ দ্বীন কায়েমকে জীবনোদ্দেশ্য বানিয়েছিলেন। আমরাও একই উদ্দেশ্যে নিজেদের জান ও মাল কোরবানি করার শপথ নিয়েছি। এই শপথের আলোকে আমাদের জীবন গঠন করতে হবে এবং দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের দেশ পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। রাসূল সা: আমাদের জ্ঞান ও হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন। এই হিকমাতের আলোকে আমাদের প্রতিটি কাজ আঞ্জাম দিতে হবে।
গতকাল নড়াইল জেলা জামায়াত আয়োজিত জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য সম্মেলন ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসাইন, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা মির্জা আশেক এলাহী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মাগুরা জেলা আমির অধ্যাপক এম বি বাকের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি আবুল বাশার, অধ্যাপক আবদুস সামাদ ও আইয়ুব হোসেন খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। দায়িত্বশীলের ব্যবহার হতে হবে প্রীতি ও ঔদার্যপূর্ণ। মেজাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে। শত্রুকেও কাছে টানার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। অশ্লীল কথা পরিহার করতে হবে। আমাদেরকে বিদ্রƒপ ও গিবত পরিহার করতে হবে। রিয়া ও অহঙ্কার পরিহার করতে হবে। আমাদেরকে উত্তম দায়ি হতে হবে। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে মানুষকে দ্বীন বোঝাতে হবে। সংগঠন পরিচালনার জন্য আমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কর্মবণ্টন সঠিকভাবে করে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে। গণভিত্তি রচনায় আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। সামাজিক অনুষ্ঠানে শামিল হতে হবে। যুব সমাজের কর্মসংস্থান তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। এতিমের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে হবে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একাগ্রচিত্তে ফরজ আদায়ের পাশাপাশি তাহাজ্জুদের নামাজও আদায় করতে হবে। রাসূল সা: ও তাঁর সাহাবিদের অনুসারী হতে হবে। আইয়ামে বীয এবং প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সার্বক্ষণিক দোয়া ও জিকির করতে হবে। ইসলামী পরিবার গঠনে যতœশীল হতে হবে। পরিবার ও সন্তানদের যৌক্তিক সময় দিতে হবে। প্রতিটি পরিবারকে ইসলামী আন্দোলনের দুর্গে পরিণত করতে হবে।’
বিশেষ অতিথি মোবারক হোসাইন বলেন, হাদিসে এসেছে ‘কোরবানির দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এই কোরবানিকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি করো।’ কোরবানির ত্যাগ-উৎসর্গ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের একটি অন্যতম মাধ্যম। পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের জন্য আমরা আমাদের প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সবচেয়ে প্রিয়। তাই কোরবানির মাধ্যমে আমার তাঁর জন্য আমাদের প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করি। ইবাদতের মূল কথা হলো আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরিয়তের নির্দেশনা মোতাবেক তা সম্পাদন করা।
সিলেট মহানগর জামায়াতের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, সম্প্রতি কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নগরীর নিম্নাঞ্চলের মানুষ। একটু ভারী বৃষ্টি হলে নগরীতে জলাবদ্ধতাজনিত বন্যা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিরীহ নাগরিকরা। নগরকে বন্যা ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষায় সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। নদী ভরাট হয়ে গেছে খননের উদ্যোগ নেই, খাল-ছড়া ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশনের অভাবে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসমূহ তলিয়ে যায়। আকস্মিক বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চলমান বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতের মতো এই দুর্যোগেও জামায়াত বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সামর্থ অনুযায়ী সবার এগিয়ে আসা উচিত।
তিনি বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের পানিবন্দী মানুষের মধ্যে সিলেট মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী (ফুডপ্যাক) বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
১০ নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি প্রভাষক দেওয়ান আসকীর আলীর সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি মিনার আহমদের পরিচালনায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল মুকিত, কোতোয়ালি পশ্চিম থানা আমির মো: আজিজুল ইসলাম, সেক্রেটারি পারভেজ আহমদ, জামায়াত নেতা ইফতেখার আহমদ, মাহমুদুল আলম, আব্দুল আহাদ ও আব্দুল্লাহ আল মারজান প্রমুখ।