বিশ্ব শরণার্থী দিবসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচনা ও র্যালি
- কক্সবাজার অফিস
- ২১ জুন ২০২৪, ০২:৩৬
বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচনা সভা ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উখিয়া কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সকালে বিভিন্ন স্লোগানে একটি র্যালি ক্যাম্পের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শতাধিক সাধারণ রোহিঙ্গা অংশ নেন। প্রায় দুই ঘণ্টার এ আয়োজনে রোহিঙ্গারা জাতিসঙ্ঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে অতিরিক্ত ইনচার্জ হাবিবুর রহমান। এ সময় রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মাজেদ আবদুল্লাহসহ নেতারা ও বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারে তারা যেকোনো মূল্যে ফিরে যাবে। ক্যাম্পের বন্দীজীবন তাদের আর ভালো লাগে না। এর জন্য জাতিসঙ্ঘের কাছে মিয়ানমারের চলমান সংঘাত সমাধানের আহ্বান জানান। তারা বলেন, মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতি ঠিক হলে মিয়ানমার সরকার যদি তাদের নিরাপত্তা, ভিটেমাটি ফেরত দেয় তারা অবশ্যই ফিরে যাবে। দিতে হবে তাদের একমাত্র অধিকার নাগরিকত্ব। তাহলে তারা যেকোনো মূল্যে ফিরে যাবে।
সাত বছরেও ফিরতে পারেননি রোহিঙ্গারা
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গতকাল সরেজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ব শরণার্থী দিবসটি পালনে রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের আয়োজন ছিল না। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবন গন্তব্যহীন, একুল-ওকুল কিছুই নেই। ক্যাম্পের জীবন দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। একদিকে সন্ত্রাসী গ্রুপের কর্মকাণ্ডে আমরা রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের নিয়ে খুব চিন্তিত। অন্যদিকে ক্যাম্পে কিছুদিন পরপর আগুন লাগা, পাহাড়ধসে নিহত হওয়া ইত্যাদি কারণে রোহিঙ্গারা ভালো নেই।
এদিকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এসব বাসিন্দা এখন বাংলাদেশের বোঝা হয়ে উঠেছে। পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাছে সাধারণ রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ রাতের বেলায় স্থানীয় গ্রামে ঘুরাঘুরি করে। এতে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই শঙ্কিত অবস্থায় আছি।
এদিকে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নিজ দেশে ফেরার সুযোগ পাননি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত বছরের ১৮ এপ্রিল কুনমিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে এক হাজার ১৭৬ রোহিঙ্গার পাশাপাশি আরো ছয় হাজারজনকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হলেও মৌলিক কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মতপার্থক্য থেকে যায়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ জন করে সপ্তাহের পাঁচ দিনে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে পাঠানোর কথা। কুনমিংয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখাইনে আমন্ত্রণ জানায় মিয়ানমার। গত বছরের ৫ মে রাখাইনের মংডু পরিদর্শন করে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল। তারা ফিরে এসে বেশ কিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে প্রত্যাবাসন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখা দেয়। কিন্তু এরপরও একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা চাই স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন। যতদিন পর্যন্ত তারা ফেরত যাচ্ছে না। তাদের দেখাশোনা আমরা করব। রোহিঙ্গা সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা