লেবাননে ইসরাইলের সর্বাত্মক হামলা শুরুর আশঙ্কা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২০ জুন ২০২৪, ০০:৩৮
- মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টায় বাইডেন
- গাজার মানবিক অঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৭
- মানসিক শক্তি ধরে রাখতে পারছে না ইসরাইলি বাহিনী
লেবানন যুদ্ধের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন ইসরাইলি বাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল ওরি গর্ডিন এবং অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের প্রধান মেজর জেনারেল ওদেদ বাসিউক। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি বাহিনী জানায়, জেনারেলরা মূল্যায়ন করে লেবাননে হামলার অপারেশনাল পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। এদিকে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজার মানবিক অঞ্চলে গতকাল বুধবার ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় কমপক্ষে ৭ জন নিহত হয়েছে। আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল, আল আরাবিয়া ও মিডলইস্ট মনিটর।
ইসরাইলের শীর্ষ কমান্ডাররা স্থলবাহিনীকে দ্রুত প্রস্তুত করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছেন। ইসরাইল-হিজবুল্লাহ উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কার মধ্যেই ইসরাইল এই ঘোষণা দিল। ইসরাইল সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার পর তারা আর তাদের সীমান্তে হিজবুল্লাহর উপস্থিতি বরদাস্ত করবে না। তারা জানিয়েছে, কূটনৈতিক সমাধান না হলে সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে উত্তর দিকে ঠেলে দেয়া হবে। এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গেশার জাহিব উপকূলে একটি সন্দেহজনক ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো দক্ষিণ লেবাননে বেশ কয়েকটি হিজবুল্লাহ টার্গেটে হামলা চালিয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার হিজবুল্লাহ একটি ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, হিজবুল্লাহর একটি পর্যবেক্ষণ ড্রোন হাইফা বন্দরসহ উত্তর ইসরাইলের ওপর দিয়ে ওড়ে গেছে। এই ফুটেজ কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে ইসরাইলি বাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘হিজবুল্লাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে খেলার নিয়ম পরিবর্তনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। একটি সামগ্রিক যুদ্ধ হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করবে, লেবাননকে কঠোরভাবে আঘাত হানবে।’ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সমর্থনে ৮ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ নিয়মিতভাবে ইসরাইলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলও পাল্টা আঘাত করে যাচ্ছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চলতি মাসে বলেছিলেন, প্রয়োজনে তাদের সামরিক বাহিনী লেবাননে তীব্র হামলা চালাতে প্রস্তুত। তিনি দেশের উত্তর সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বলেও জানান।
মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে চান বাইডেন
এদিকে ডয়েচে ভেলে জানায়, মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বাড়তি উত্তেজনা এড়াতে জোরালো উদ্যোগ নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত অ্যামস হোখস্টাইন লেবানন সফর করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন। গত প্রায় আট মাস ধরে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহ গোলাগুলি চালানোর পর ইসরাইলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফার ওপর হামলার হুমকি দিচ্ছে। চীনা ও ভারতীয় কোম্পানি সেই শহরের বন্দর পরিচালনা করে। গত সপ্তাহে লেবানন সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বিশাল সংখ্যায় রকেট ও ড্রোন হামলা ঘটেছে। তার আগে ইসরাইলের এক হামলায় হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছিল। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, গাজায় অস্ত্রবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরাইলের ওপর হামলা চালিয়ে যাবে।
গত প্রায় আট মাস ধরে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহ গোলাগুলি চালানোর পর ইসরাইলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফার ওপর হামলার হুমকি দিচ্ছে। চীনা ও ভারতীয় কোম্পানি সেই শহরের বন্দর পরিচালনা করে। গত সপ্তাহে লেবানন সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বিশাল সংখ্যায় রকেট ও ড্রোন হামলা ঘটেছে। তার আগে ইসরাইলের এক হামলায় হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বড় কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছিল। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, গাজায় অস্ত্রবিরতি হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরাইলের উপর হামলা চালিয়ে যাবে।
মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বাড়তি উত্তেজনা এড়াতে জোরালো উদ্যোগ নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত অ্যামস হোখস্টাইন লেবানন সফর করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন। মার্কিন দূত অ্যামস হোখস্টাইন মঙ্গলবার বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে বদ্ধপরিকর। তিনি মঙ্গলবারই লেবাননের সেনাবাহিনীর প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। হিজবুল্লাহর সহযোগী বলে পরিচিত সশস্ত্র আমাল বাহিনীর প্রধান ও পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বারির সাথেও আলোচনা করেন তিনি। হোখস্টাইন হামাসের উদ্দেশ্যে গাজায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়ার ডাক দেন। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি তাকে বলেন, তার দেশ উত্তেজনা বাড়াতে চায় না।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণে গাজার পাশাপাশি তারা উত্তরে লেবানন সীমান্তেও অভিযান চালাতে প্রস্তুত। সরকারের পক্ষ থেকে সেই অভিযানের ছাড়পত্র ও প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। গাজায় মানবিক সাহায্য সরবরাহ সম্ভব করতে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য বিরতির ঘোষণা করেছে ইসরাইল। কিন্তু হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলের ক্ষোভ বাড়ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাজার হাজার মানুষ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তারা আগাম নির্বাচন ও বন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাসের সাথে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন।
গাজার মানবিক অঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৭
আট মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। উপত্যকাটির উত্তরাঞ্চল থেকে তারা এই ধ্বংসকাণ্ডের সূচনা করে। পরে ক্রমান্বয়ে ইসরাইলের হামলা পুরো গাজা উপত্যকায় বিস্তৃতি লাভ করে। উপত্যকাটিতে যুদ্ধ চলাকালে বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গাজার আল-মাওয়াসি এমনই একটি মানবিক অঞ্চল। বলা হয়েছিল এই অঞ্চলে হামলা থেকে বিরত থাকবে ইসরাইল। তবে ঘোষিত মানবিক অঞ্চলেও হামলা চালিয়েছে তারা। বুধবার আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের হামলায় অন্তত ৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে অনলাইন আলজাজিরা। গণমাধ্যমটি বলছে, পশ্চিম রাফার আল-মাওয়াসি মানবিক করিডরে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করেছে ইসরাইল। এতে সেখানে অন্তত ৭ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ইসরাইলি হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং শরণার্থী শিবিরের বেশ কয়েকটি তাঁবুতে আগুন লেগে সেগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তুর্কি গণমাধ্যম হুররিয়াত ডেইলি নিউজের এক খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে কামান ও বিমান থেকে ভারী গোলা বর্ষণের পাশাপাশি উত্তর গাজায় শেখ রাদওয়ান নামের এলাকায় বিমান হামলায় পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। সেখান থেকে অন্তত ছয়জন নিহত ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা। গাজায় নিয়োজিত যেসব স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে তারাও ইসরাইলি বাহিনী থেকে নিরাপদ নয়। ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যকর্মীদের অপহরণের অভিযোগ করেছে গাজার কর্মকর্তারা। আল জাজিরার পৃথক আরেক খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১০ স্বাস্থ্যকর্মীকে অপহরণ করেছে ইসরাইলি বাহিনী। অপহৃত এসব স্বাস্থ্যকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন গাজার কর্মকর্তারা। তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৩৭২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৮৫ হাজার ৪৫২ ফিলিস্তিনি।
মানসিক শক্তি ধরে রাখতে পারছে না ইসরাইলি বাহিনী
মানসিক শক্তি ধরে রাখতে পারছে না ইসরাইলি বাহিনী। চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮ হাজার ৬৬৩ সেনাকে মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। মিডল ইস্ট মনিটরের এক খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি নেসেট (পার্লামেন্ট) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পার্লামেন্টারি রাজ্য নিরীক্ষা কমিটির কাছে তথ্য জমা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে সবচেয়ে সাধারণ আঘাতগুলোর ৪২ শতাংশ অঙ্গে হয়েছে। মানসিক ও পরবর্তীতে আঘাতজনিত প্রতিক্রিয়া রয়েছে ২১ শতাংশ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ আঘাত ৯ শতাংশ, মেরুদ-ের আঘাত ৭ শতাংশ, কান ৮ শতাংশ এবং চোখ ২ শতাংশ। বাকি আঘাতের শতাংশ স্পষ্ট করে বলা হয়নি। নেসেট আরো জানিয়েছে, ‘আহতদের ৩৫ শতাংশ, যাদের পুনর্বাসন ওয়ার্ডে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তারা মানসিক ক্ষতির শিকার।’ কমিটির চেয়ারম্যান এমকে মিকি লেভি বলেছেন, ‘যে দেশ তার সৈন্যদের যুদ্ধে পাঠায় তাদের অবশ্যই জানতে হবে যে কিভাবে তারা ফিরে আসার সময় তাদের যতœ নেবে এবং অস্ত্র রাখার সাথে সাথে তাদের পরিত্যাগ করবে না।’
নেতানিয়াহুর ভাষণ শুনবেন না ৪ মার্কিন সিনেটর
টাইম অব ইসরাইল জানায়, মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে আগামী ২৪ জুলাই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনসহ চারজন সেই ভাষণ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী করেন তারা। এলিজাবেথ ওয়ারেন সাংবাদিকদের বলেন, একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য মার্কিন নীতিকে আমি সমর্থন করি না, যা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজস্ব জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে এবং মর্যাদার সাথে বাঁচতে দেয় না। ওয়ারেনের সাথে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, রো খান্না এবং জিম ক্লাইবার্ন নেতানিয়াহুর ভাষণ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘এটা আমাদের দেশের জন্য খুবই দুঃখের দিন। উভয় দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি যৌথ সভায় ভাষণ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন’। তিনি বলেছেন, নেতানিয়াহু একজন যুদ্ধাপরাধী। তাকে কংগ্রেসের যৌথ সভায় ভাষণ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো উচিত নয়। আমি অবশ্যই এতে যোগ দেব না।
q
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা