১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ধেয়ে আসছে উজানের পানি উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা

-

ধেয়ে আসছে উজানের পানি। শিগগিরই দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম
করে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর গজলডোবা বাঁধের সব স্ল্ইুচগেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রবল বেগে উজান থেকে নামতে শুরু করেছে বৃষ্টির পানি। একই কারণে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি নদী উপচে শিগগিরই দুই তীরে বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যেই এই নদীগুলোর কিছু কিছু স্থানে পানি উপচে পড়ার অবস্থা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা-পদ্মার মতো বড় নদীর পানিও বাড়ছে। দেশের এই বড় নদীগুলোর পানি আরো কয়েক দিন বাড়তে পারে। কারণ দেশের উজানে ভারতের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, আলিপুর-দুয়ার ও কুচবিহার জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ৫ দিন পশ্চিমবঙ্গের এই জেলাগুলোতে এবং আরো উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন।
কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী আবহাওয়াবিদ কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের বৃষ্টি সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে আজ রোববার অথবা সোমবারের মধ্যেই তিস্তা ও দুধকুমার নদীর উপকূলবর্তী নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর জেলায় বন্যা দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের ওপরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উজানের পানি প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোতে এর ফলে এই অঞ্চলের নদীগুলোর সাথে সংযুক্ত নদীগুলোর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা হতে যাচ্ছে শিগগিরই।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র উজানে ভারী বৃষ্টির কথা না বললেও সংস্থাটি বলছে, আগামী ৩ দিনের মধ্যে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং কিছু স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করে এই নদীগুলোর সংলগ্ন নি¤œাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা সম্পর্কে বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, সুমেশ্বরী, যাদুকাটা, ঝালুখালী নদীগুলোর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে এবং কিছু স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার কিছু কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
পাউবো আবহাওয়া অফিসকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
পাউবো বলছে, গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয় দেশের এমন ১১০ স্টেশনের মধ্যে ৫৬ স্টেশনের পানি বেড়েছে এবং কমেছে ৪৭ স্টেশনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৫১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটের জাফলং পয়েন্টে ৩৬৯ মিলিমিটার, শেওলায় ১৩০ মিলিমিটার, কানাইঘাটে ১৩২ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের মহেশখোলায় ১৩২ মিলিমিটার, লোরেরগরে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে কুড়িগ্রামের ১০২ মিলিমিটার, লালমনিরহাটের কাউনিয়ায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আরো অনেক স্থানে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির এই পানির সাথে যখন উজানের ধেয়ে আসা পানি যোগ হবে তখন খুব দ্রুততার সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার নদীগুলো ভরে যাবে এবং পানি উপচে বন্যার সৃষ্টি করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement