১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
হাটে পর্যাপ্ত পশু : ক্রেতা ও বিক্রি দুটোই কম

মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হারানোর প্রভাব চট্টগ্রামের কোরবানির হাটে

-

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র দু’দিন বাকি। কিন্তু বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল আসতে থাকলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি সেভাবে জমে ওঠেনি। বাজারে ক্রেতার ভিড় থাকলেও তারা পছন্দের গরু-ছাগলের দাম পরখ করে চলে যাচ্ছেন। বেপারীরা কোরবানির পশুর উচ্চমূল্য হাঁকানোর কারণে ক্রেতারা ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছেন বলে অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। আবার বেপারীরা জানিয়েছেন তারা এখনো বাজার পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না। অধিকাংশ বেপারীই বাজারে নিয়ে আসা পশু বিক্রি করতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন প্রান্তে এবার মোট ১০টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে সাগরিকা ও বিবিরহাট বাজার দু’টি স্থায়ী। এছাড়া পোস্তারপাড় ছাগলের হাটটিও স্থায়ী। এর বাইরে সাতটি অস্থায়ী পশুর হাট নিলামের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। অস্থায়ী সাতটি পশুর হাট হচ্ছে- কর্ণফুলী গরুর বাজার (নুর নগর হাউজিংয়ের বিপরীতে), সাইলো রোডের টিএসপি মাঠ সংলগ্ন অস্থায়ী পশুর বাজার এবং সিআইপি জসিমের মাঠের অস্থায়ী পশুর হাট, বাটারফ্লাই পার্ক সংলগ্ন টি কে গ্রুপের খালি মাঠের অস্থায়ী গরুর বাজার, বড়পোল সংলগ্ন মহেশখালের দুই পাশের খালি জায়গার অস্থায়ী পশুর হাট, পাঁচলাইশ ওয়াজেদিয়া মোড়ের অস্থায়ী পশুর হাট এবং আউটার রিংরোডের সিডিএ বালুর মাঠের অস্থায়ী পশুর হাট।
ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব হাটে গরু নিয়ে এসেছেন। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় থেকে নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে কুষ্টিয়া, মাগুরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, নাটোর, রাজশাহী ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গরু আসতে শুরু করে। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে চট্টগ্রামের চাহিদার ৯৫ শতাংশের বেশি স্থানীয়ভাবে পূরণ হবে।
সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ক্রেতা সমাগম মোটামুটি ভালো। ক্রেতারা হাট ঘুরে গরু দেখছেন, দর দাম পরখ করছেন। তবে গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ক্রেতা সমাগম ঘটলেও তেমন বিক্রি হচ্ছিল না চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের আর মাত্র দু’দিন বাকি থাকলেও পশুর হাটগুলোতে এখনও জমে ওঠেনি পশু বিক্রি। বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে হাজির হচ্ছেন বেপারীরা। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। অন্যান্য বছর শত শত পশুবাহী ট্রাক পশুর হাটগুলোর সামনে অপেক্ষমাণ দেখা গেলেও এবার সে চিত্র একেবারেই নেই বললে চলে। চট্টগ্রামের কোরবানিদাতাদের বেশির ভাগই এককভাবে পশু কোরবানি দিতেন। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এবার অনেকেই এককভাবে একটি পশু কোরবানি না দিয়ে কয়েকজন মিলে একটি পশু কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আবার চাহিদা বেড়েছে ছোট গরুর। পশুর হাটগুলোতে ছোট গরুর উপস্থিতি অনেকটাই কম। আবার অনেকেই এবার কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। আবার কেউবা বিভিন্ন অ্যাগ্রোফার্ম বা স্থানীয়ভাবে নিজেদের বাজেটের মধ্যে পশু সংগ্রহ করছেন। ফলে সব মিলিয়ে এবার কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতার উপস্থিতি এবং বিক্রি তুলনামূলক কম।
নগরীর স্থায়ী গরুর বাজার বিবিরহাটে গতকাল শুক্রবার বিকেলে হাতেগোনা ক্রেতার দেখা মেলে। ক্রেতার অভাবে গরুর বেপারী ও রাখালরা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। কেউ ঘুমিয়ে, আবার কেউবা লুডু খেলে সময় পার করছিলেন। বেপারী নুরুল ইসলাম গত চার দিনে কোনো ক্রেতা পাননি জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, গত ১০ বছর ধরে চট্টগ্রামে গরু নিয়ে আসি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। তিনি জানান, অন্যান্য বছর ৩-৪ দিনেই অর্ধেক গরু বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবার একটি গরুও বিক্রি হয়নি। বিকেলের দিকে লোকজন কিছু আসে। গরু দেখে কিন্তু কিনে না। আবার কেউবা পাঁচ শ’ টাকার গরু (মানে ৫ লাখ) দেড় শ’ (দেড় লাখ) চায়। কোরবানির গরু পছন্দ করতে বিবিরহাটে এসেছেন মো: খোরশেদ। পেশায় শিক্ষক এই ক্রেতা একটি গরু পছন্দ করে লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের দেখাচ্ছিলেন। এই প্রতিবেদকের কথা হয় তার সাথে। তিনি অভিযোগ করছিলেন একদিকে বাজারে পশুর দাম অত্যধিক হাঁকানো হচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে পর্যাপ্ত পশু আসেনি বলেও তার দাবি। তিনি যে গরুটি পছন্দ করেন বেপারী সেটির দাম হাঁকান আড়াই লাখ টাকা। অথচ সেটি এক লাখ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলেও এই ক্রেতার দাবি।
এদিকে, চট্টগ্রামের প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামে আট হাজারের বেশি খামারি গবাদি পশু পালন করছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে গবাদি পশুর চাহিদা আট লাখ ৮৫ হাজার কিন্তু মজুদ রয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি গবাদি পশু। খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলা ও উত্তরবঙ্গ থেকে প্রতি বছর চট্টগ্রামে গবাদিপশু আসে। কোরবানি উপলক্ষে ওই সব এলাকা থেকে এ বছরও প্রায় ৫০ হাজার গবাদি পশু আসবে। তাই আসন্ন ঈদুল আজহায় গবাদি পশু ঘাটতির কোনো সম্ভাবনা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement