১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রামগতিতে রাতের আঁধারে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের পাথর বিক্রি

৩টি ট্রাক আটক
-

লক্ষ¥ীপুরের রামগতি-কমলনগরের মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের পাথর ও বালু বিক্রির সময় হাতেনাতে তিনটি পাথরভর্তি ট্রাক্টর ট্রলি আটক করে পুলিশ। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে লক্ষ¥ীপুরের রামগতি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেবাগ্রাম মেঘনার তীর থেকে এ পাথরগুলো গোপনে বিক্রি করা হয়। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার মোজাম্মেলহক ও ট্রাক্টর মালিক মাঈন উদ্দীন পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, রাত ঘনিয়ে এলেই প্রতিনিয়ত ট্রাকে-ট্রাকে বিক্রি হতো মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধের পাথর ও সিলেকশন বালু। গত তিন মাস ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও অবশেষে স্থানীয় জনতা হাতেনাতে আটক করেছে তিনটি ট্রাক্টর ট্রলি। পালিয়ে গেছে আরো ছয়টি ট্রাক্টর ট্রলি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজারসহ লোকজন। নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের ব্লক বানাতে আনা এসব পাথর-বালু বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোজাম্মেল হক, স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দীন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন রায়হান।
বালু ব্যাবসায়ী মাঈন উদ্দীন জানান, থানায় আটক তিনটি পাথরসহ ট্রাক্টর ট্রলি তার। এসব টলি ভাড়া দিয়েছেন। রামগতি পৌরসভার রিফাত জাহান ভূঁইয়া নামের এক উপসহকারী প্রকৌশলীর মাধ্যমে প্রতি ফুট পাথর ১৮৫ টাকা করে ফারুক নামের আরেক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেন। এ পাথরগুলোর কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির প্রজেক্ট ম্যানেজার মোজাম্মেল হকের যোগসাজশে চক্রটি পাথরগুলো কম দামে অন্যত্র বিক্রি করে। দু’পক্ষেরই ম্যাধম হিসেবে ছিল ট্রাক্টর মালিক ও বালু ব্যবসায়ী মাঈন উদ্দীন। তিনি জানান, এসব পাথরগুলো মেঘনারর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজের জন্য আনা হয়। কমদামে পাথরগুলো বিক্রি করায় অন্য ঠিকাদার এ পাথরগুলো নিয়ে রামগতি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ড্রেনের কাজে ব্যবহার করেন।
স্থানীয়রা জানান, ১২ জুন দুপুরের পর থেকে ৯টি ট্রাক্টর ট্রলিতে পাথর ও সিলেকশন বালু অন্যত্র নেয়ার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এসব পাথর ও বালু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। নদী বাঁধের কাজে আনা এসব পাথর ট্রাক্টর ট্রলিতে করে জমানো হচ্ছে রামগতি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শিক্ষাগ্রামের উপজেলা পরিষদের পেছনের খোলা মাঠে। ওখান থেকেই এক-দুই ট্রাক করে বিক্রি করা হচ্ছে।
বুধবার রাত সারে ৯টার সময় স্থানীয় জনতা তিনটি গাড়ি আটক করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট সুপারভাইজার এবং গাড়িচালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। কৌশলে কেটে পড়েন পানি সাইট দেখভাল করা মাঈন উদ্দীন এবং গাড়ি চালকরা। পরে এলাকাবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য, রামগতি থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯কে কল করে ঘটনাটি অবহিত করা হয়। রাত ১০টার দিকে রামগতি থানা পুলিশের একটি টিম পাথরভর্তি একটি ট্রাক ও ভেকু মেশিন জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।
পাথরভর্তি তিনটি গাড়ি আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোসলেহ উদ্দিন। লক্ষ¥ীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান জানান, বিষয়টি সম্পূর্ণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপার। আমরা তাদেরকে কাজ দিয়েছি। আবার কাজ বুঝে নেব এটাই বাস্তবতা। এখন শুনেছি ঠিকাদারের লোকজন নদী বাঁধের জন্য আনা পাথর অন্যত্র বিক্রি করেছে এবং পুলিশ গাড়িগুলো আটক করছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথে পাথরসহ গাড়িগুলো আটক করি। বর্তমানে পাথরসহ গাড়িগুলো থানা হেফাজতে রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement