১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উত্তপ্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ৩ দিনে ৫ জন নিহত

-

ফের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন দিনে পাঁচজন রোহিঙ্গা বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার হয়েছে। বুধবার ভোর ৬টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ ও আরসার দুই গ্রুপের মধ্যকার গোলাগুলিতে আরসা সদস্য সন্ত্রাসী আব্দুল মোনাফ (২৬) নিহত হয়। উখিয়ার ঘোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৯-এর এ-৪ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই ক্যাম্পের আজিম উল্লাহর ছেলে। ৮ এপিবিএন-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো: আমির জাফর বলেন, একাধিক হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি মোনাফের বাহিনীর সাথে অন্যান্য আরসা সদস্যদের গোলাগুলি হয়। খবর পেয়ে এপিবিএন পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। তখন সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। পুলিশ নিজের জান ও সরকারি মালামাল রক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থলে গেলে আব্দুল মোনাফকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-৪ ব্লøকের বাসিন্দা নজির আহমদের ছেলে সৈয়দ আমিনকে (২৫) পিটিয়ে হত্যা করে একদল সাধারণ রোহিঙ্গা। জানা যায়, সৈয়দুল আমিন সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসওর সদস্য। সাধারণ রোহিঙ্গারা তাকে এলোপাতাড়ি মারধরের পর আশপাশের কিছু লোক উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগের দিন সোমবার এক দিনে তিজন নিহত হয়। এ সময় আহত হয় আরো তিনজন। ওই দিন ভোররাতে ৪ নম্বর (এক্সটেনশন) রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ ব্লকে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো, ওই ক্যাম্পের এফ ব্লকের জাফর আহম্মদের ছেলে মো: ইলিয়াছ (৩১), মৃত আব্দুর রকিমের ছেলে মো: ইসহাক (৫৪) ও ক্যাম্প-৩-এর ই ব্লকের মোহাম্মদ ইসমাইলের ছেলে ফিরোজ খাঁন (১৮)। সূত্র জানিয়েছে, ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইলিয়াছকে সন্ত্রাসী সংগঠন আরএসও সদস্যরা গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাতে, পায়ে, তলপেটে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে সে মারা যায়। এরপর ভোর সেয়া ৪টার দিকে আরেক সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আরএসও সমর্থক মো: ইসহাক, ফিরোজ খাঁন, আব্দুল হক, আব্দুস শুক্কুর ও আব্দুল মোনাফকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। জানা গেছে, শুরুতে খুন হওয়া রোহিঙ্গা ইলিয়াছ আরসার সোর্স হিসেবে কাজ করত। আরসা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় আরএসও সদস্যরা প্রথমে তাকে হত্যা করে। পরে ঘটনার খবর পেয়ে বদলাস্বরূপ আরসা সদস্যরা এসে কয়েকজন আরএসও সমর্থকের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। ঘটনার পর আহত রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো: ইসহাক ও ফিরোজ খাঁনকে মৃত ঘোষণা করেন। উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। তিনি বলেন, এত নিরাপত্তা জোরদারের পরেও কিছু ছিু ঘটনা ঘটছে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি থানা পুলিশও সমানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ১৪ এপিবিএন-এর অধিনায়ক মো: ইকবাল বলেন, সন্ত্রাসী দমনে আমরা প্রতিনিয়তই অভিযান চালাচ্ছি। ৮ এপিবিএন-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো: আমির জাফর বলেন, ঠিক কী কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে পুলিশ তা নিশ্চিত নয়। ঘটনার মূল হোতাদের খোঁজা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement