বর্তমান সরকার শিক্ষা নয় ক্ষমতা চায়
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১২ জুন ২০২৪, ০২:০৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান বাজেটে জাতিকে শিক্ষিত করা যাবে না এবং শিক্ষার উন্নয়নও সম্ভব নয়। বর্তমান বাজেটে শিক্ষা বরাদ্দ খুবই কম। যে জাতি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেশি দিয়েছে তারাই ততবেশি উন্নত করেছে। যারা শিক্ষায় বরাদ্দ কম করেছে তারা জাতি হিসেবে শক্তিশালী হতে পারেনি। বর্তমান সরকার শিক্ষা নয় ক্ষমতা চায়। দেশে শিক্ষার বরাদ্দ দিনদিন কমে যাচ্ছে। কারণ এবারের বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ মাত্র ১২%। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জাতিকে মেরামত করতে হলে শিক্ষার আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার উদ্যোগ গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘শিক্ষার গুণগতমান ও বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও অধ্যাপক নূরুন নবী মানিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ টি এম ফজলুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিশিষ্ট কবি ও নজরুল গবেষক আবদুল হাই শিকদার, অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল আজিজ, অধ্যাপক কবিরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ।
ড. মো: আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন অনেক খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর জ্ঞান চর্চা হয় না। সেখানে জ্ঞানের প্রবাহ থেমে গেছে। এখন দলীয় চাটুকার ও অযোগ্যরা আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য শুধু শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলেই যথেষ্ট। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এই পরিবর্তন করতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তন করতে হবে। ভোটারবিহীন সরকার পরিবর্তন করতে হবে। এইজন্য গণজাগরণ তৈরি করতে হবে। দেশে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, বাংলা ভাষার মধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। আমাদের শিক্ষা থেকে ইসলাম ধর্মের বিষয়গুলো বাদ দিতে চক্রান্ত চলমান। ভারতীয় ভাবধারা দিয়ে হিন্দুওয়ানি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে গভীর চক্রান্ত চূড়ান্ত করেছে বর্তমান আওয়ামী সরকারের দোসররা। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে এখন শিক্ষার বাজেট কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনোভাবেই শিক্ষাবান্ধব নয় বর্তমান বাজেট। বাজেটে শিক্ষা বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার গবেষণামূলক কাজে বাজেটে বরাদ্দ খুবই কম।
বিশিষ্ট কবি ও নজরুল গবেষক আবদুল হাই শিকদার বলেন, এশিয়া ও আফ্রিকার কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এত কম বরাদ্দ শিক্ষায় নেই। অন্যান্য দেশে বরাদ্দ বেশি দেয়া হয়। শিক্ষার এই বরাদ্দটা যথেষ্ট নয়। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব বাড়ানো। শিক্ষায় বরাদ্দটা ব্যয় নয়, এটা বিনিয়োগ। আমরা সেই বিনিয়োগ সঠিকভাবে করতে পারি না। আমি উচ্চ শিক্ষার চেয়ে প্রাথমিক ও কারিগরিতে এটা বাড়াতে বলব। বিশেষায়িত কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্যাডেট কলেজ, সেনাবাহিনীর বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুযোগসুবিধা এক না। আমি চাইব, শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ুক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ টি এম ফজলুল হক বলেন, ব্রিটিশরা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভাজন তৈরি করে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোটেও আশানুরূপ হয়নি। আমরা মূলত উন্নত বিশ্বের দিকে যাচ্ছি, কিন্তু এই ব্যাপারে আমরা অনেক উন্নয়নশীল দেশ থেকে পিছিয়ে আছি, দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে আছি। এটা মোটেও আকাক্সিক্ষত নয়।
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, সরকার দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়। তারা শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে বাজেটে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ দিবে না। সরকার পার্শ্ববর্তী দেশের শিক্ষার অনুরূপ শিক্ষা চালু করতে চায়। সরকার ক্রমেই শিক্ষা বাজেট কমিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দু’টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। আর কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরের জন্য ছিল ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণায়ের জন্য ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। আধুনিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যেখানে টাকার অঙ্ক বাড়লেও জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ বিগত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল গত অর্থবছরে জিডিপির মাত্র ১.৭৬ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১.৮৩ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২.০৮ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকার কথা। অর্থাৎ বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষায় বরাদ্দ কোনো খরচ নয় বরং বিশাল বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে। যেসব দেশ এটি বুঝতে পেরেছে, সেসব দেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষতা, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা সহায়ক সমাজ গড়ে তুলতে হলে সময়োপযোগী শিক্ষা প্রদান করতে হবে। এ জন্য দরকার শিক্ষা বা গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, যার সুফল পাবে দেশ ও জনগণ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা