পশুর হাটে ক্রেতার অপেক্ষা
- আবুল কালাম
- ০৮ জুন ২০২৪, ০২:২৭
ঈদুল আজহা ঘনিয়ে এলেও বাজার এখনো জমেনি। তাই পশুর হাটে চলছে ক্রেতার অপেক্ষা। গতকাল গাবতলী পশুরহাট ঘুরে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে। তারা বলছেন, এবার প্রতিটি খামারেই অনেক গরু রয়েছে। তাদের ধারণা চাহিদার চেয়ে এবার গরু বেশি। তাই এখনো বাজার না জমলেও এবার বিক্রি কম হবে। তবে ঈদের সপ্তাহ আগে বাজারে ক্রেতার দেখা মিলবে।
একাধিক পাইকার জানান, এবার তাদের খামারে যে পরিমাণ গরু আছে তাতে সঙ্কট হবে না। তবে খাদ্যের দাম বাড়াতে গরু লালন পালনে খরচ বেড়েছে। এতে গত বছরের চেয়ে এবার পশুর দাম তুলনামূলক বেশি হবে। এ পর্যন্ত বাজারে যে পরিমাণ ক্রেতা তা গত বছরের চেয়ে কম। এতে মনে হয় এবার বাজারে প্রত্যাশিত ক্রেতা নাও মিলতে পারে।
গতকাল গাবতলী বাজার ঘুরে দেখা যায় বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন। কোনবানির পশুও তুলনামূলক কম। সারিবন্ধভাবে রাখা কোরবানির পশুগুলোও শুয়ে বিশ্রামে নিচ্ছে। তবে হাটে খুব বড় আকারের গরু দেখা যায়নি।
গরুর চাহিদার বিষয়ে বিক্রেতারা জানান, এখনো তেমন দরদাম না হলেও যারা আসছেন তাদের মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর বিষয়ে তাদের ভাষ্য- প্রতি বছরই এমনটা হয়। ছোট ও মাঝারি গরু বেশি বিক্রি হলেও বড় গরুর চাহিদা কম থাকে। এবারো তা হবে কি না তা বাজার পুরোপুরি শুরু হলে বুঝা যাবে। আর দামের বিষয়ে তাদের ভাষ্য, এবার মিনিমাম দাম লাখ টাকা। তবে আকার ভেদে দাম কমবেশি হবে।
গরু ছাড়াও রাজধানীর একমাত্র এই স্থায়ী পুশর হাটে খাসি, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ও সামান্য সংখ্যক উট রয়েছে। এগুলোর দাম জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, ‘দাম এখন চেয়ে কী লাভ। ক্রেতা তো নেই। বাজার বুঝে দাম নির্ধাণ করব।’
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, এ বছর অস্বাভাবিকভাবে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে গরু ছাগল বিক্রি করা যাবে কিনা সংশয়ে আছেন খামার ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, এ বছর খাবারের দাম গতবারের তুলনায় তিন গুণ বাড়লেও সে হিসাবে গরুর দাম বাড়েনি। এতে প্রত্যাশিত দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিক্রেতারা জানান, তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ ও ও ধারদেনা করে খামারে গরু লালন করেছেন। ফলে কাক্সিক্ষত দামে বিক্রি করতে না পারলে ঋণের বোঝা বইতে হবে।
একজন পাইকার জানান, গত বছরে যে গরুর দাম ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ছিল এ বছর সেই গরু এক লাখের ওপরে তারা দাম হাঁকছেন। এভাবে গরুর আকার অনুযায়ী দামেও তফাৎ রয়েছে। এখন ক্রেতা কী পরিমাণ হবেন তা নিয়ে এখন তাদের দুশ্চিন্তা।
এ দিকে এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর বিশাল চাহিদা মেটাতে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে গবাদিপশু রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশে ১ কোটি ১০ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার তুলনায় দেশে এখন বাড়তি প্রায় ৮ লাখ পশু অর্থাৎ দেশে এখন প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি পশু প্রস্তুত আছে।
অধিদফতরের একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদে গবাদিপশু পালনকারী খামারি ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে। এ ছাড়া ভারত থেকে গবাদিপশু আসা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
সীমান্তবর্তী জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবার ভারত থেকে দেশে পশু আসার হার অনেক কম। তবে দাম কম হওয়ার কারণে মিয়ানমার থেকে অনেক পশু দেশে ঢুকছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, গেল ঈদুল আজহায় ৩৮ লাখ গরুসহ প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিলো। এবছর ঈদে ৪২ লাখ গরুসহ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি করা হতে পারে। অর্থাৎ কোরবানির পশুর চাহিদা এবার ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এবারের ঈদুল আজহায় চাহিদার চেয়ে ৭ লাখেরও বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, এ বছর ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু ও মহিষ এবং ৭২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩টি ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, গবাদিপশুর মজুদ গত বছর ভাল ছিল। গত বছর গবাদিপশু উদ্বৃত্ত ছিল ১০ লাখ। আর প্রায় ১০ লাখ প্রতিবেশী দেশ থেকে আনা হয়েছিল।
অন্য দিকে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেনাপোল ও শার্শা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু-ছাগল কম আসছে। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যশোরের খামারিরা। অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা গরু-ছাগলের সঠিক হিসাব না থাকলেও বৈধ পথে আসা পশুর একটি হিসাব রয়েছে শার্শা উপজেলার নাভারণ কাস্টমস করিডোরে।