মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও করজাল বিস্তৃতির ঘোষণা দিয়ে বাজেট পেশ আজ
অবাধে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব আসছে- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আশাবাদ এবং কর খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং ‘গয়রহ’ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের ৫৪তম জাতীয় বাজেট এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার প্রথম বাজেট। একই সাথে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং অর্থবিল ২০২৪ পেশ করবেন তিনি। এর আগে জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে এগুলো অনুমোদন করে নেয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বা মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঘাটতিই ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা কিনা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ধার নেয়া হবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত ঋণ নেয়া হবে আরো ৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশী নিট ঋণ নেয়া হবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
জানা যায়, নতুন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম হচ্ছে- ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’। প্রায় ৩২৯ পৃষ্ঠার এবারের দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান সরকারের গত দেড় দশকে দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকঠামো উন্নয়নের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার পরিধি আরো বাড়ানো ঘোষণা থাকছে। এত দিন ব্যক্তি পর্যায়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলেও আসছে বাজেটে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও এই সুযোগ দেয়া হতে পারে। এ ছাড়া ধনীদের ওপর কর বাড়ানো এবং সংসদ সদস্যদের (এমপি) আমদানি করা গাড়িতে শুল্ক বসানোর প্রস্তাব করা হবে। একই সাথে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা বলা হবে বাজেটে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটির ওপর বিদ্যমান শুল্কহার কমানো হতে পারে।
অপ্রদর্শিত আয় সাদা করতে আইনের সংশোধনের প্রস্তাব : বাজেটে অপ্রদর্শীত অর্থ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় আনার জন্য আয়কর আইনে সংশোধনীর প্রস্তাব করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বাজেট বক্তৃতায় বলা হবে- অর্থনীতিতে কার্যকর চাহিদা সৃষ্টি এবং তা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য একদিকে বেশি পরিমাণ রাজস্ব যোগান দিতে হবে, অন্য দিকে বেসরকারি খাতেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে হবে। ডাটা ভেরিফিকেশন সিস্টেম(ডিভিএস) চালু হওয়ার ফলে বিভিন্ন কোম্পানির অপ্রদর্শিত আয় ও পরিসম্পদ প্রদর্শনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তা ছাড়া রিটার্ন দাখিলে করদাতার অজ্ঞতাসহ অনিবার্য কিছু কারণে অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ক্রটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। এই অবস্থায় করদাতাদের আয়কর রিটার্নে এই ক্রটি সংশোধনের সুযোগ দেয়া এবং অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আয়কর আইনে কর প্রণোদনা সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের প্রস্তাব করতে পারেন। প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫% কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।
অর্থমন্ত্রী মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর সুবিচল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নত বিশ্বের সোপানে অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাই উন্নত বিশ্বের সাথে মিল রেখে সরকার আয়কর আইনের সর্বোত্তম চর্চা ক্রমান্বয়ে অনুসরণের নীতি গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় উন্নত বিশ্বে প্রচলিত জনসাধারণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাতে করভার আরোপের ধারণা হতে এবং দেশের পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার উদ্যোগ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিসি বা কিলোওয়াটভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছিল। এই অর্থবছরে পরিবেশ সারচার্জের বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখার প্রস্তাব করবেন তিনি।
জানা গেছে, বাজেটে শুল্ক বাড়ানোর ফলে দাম বাড়তে পারে এয়ারকন্ডিশনার, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র, মোটরসাইকেল, এটিএম, সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, এলইডি লাইটের। তবে শুল্ক কমানোর প্রস্তাবে কমতে পারে ল্যাপটপ, কিডনি ডায়ালাইসিস ফিল্টার, আমদানি করা প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ, কৃত্রিম আঁশের কার্পেট, চকলেট, চিলারসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম।
ব্যবসা স্থানে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ রাখতে হবে, ব্যর্থ হলে জরিমানা
ব্যবসা স্থানে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ না থাকলে আর্থিক জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে।
রাজস্ব আদায়ের নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং ব্যবসায় সমতামূলক প্রতিযোগিতা আনার জন্য বেশ কয়েকটি নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রভাব ক্রমাগত হ্রাস করে দেশে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে বিকাশের ক্ষেত্রে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, অর্থনীতির আনুষ্ঠানিকীকরণ, করনেট সম্প্রসারণ এবং কর পরিপালন বৃদ্ধি অন্যতম গুরত্বপূর্ণ নিয়ামক। বর্তমান সরকারের অনুসৃত কর নীতি হচ্ছে কর ভিত্তি সম্প্রসারণের পাশাপাশি করহার ক্রমাগত যৌক্তিকীকরণ। এ নীতির পরিপালন হিসেবে রাজস্ব আদায়ের নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং ব্যবসায় সমতামূলক প্রতিযোগিতা আনার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাবগুলো হচ্ছে-
(ক) উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের জন্য রিসোর্ট, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টারকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা;
(খ) ধারা ১৬৬ এর অধীন রিটার্ন দাখিলের আইনানুগ বাধ্যবাধকতা রয়েছে এরূপ সকল ব্যক্তি ধারা ১৮০-এর অধীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করার বিধান করা;
(গ) হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নকালে এবং কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা সমজাতীয় কোনো সেবা গ্রহণকালে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা;
(ঘ) ব্যবসা স্থানে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ প্রদর্শনের ব্যর্থতায় অন্যূন ২০ হাজার টাকা এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা;
(ঙ) রিটার্ন দাখিলে বাধ্য নয় এরূপ কোনো কোম্পানি কর্তৃক প্রাপ্ত যেকোনো প্রকারের গ্রস আয় যা করমুক্ত নয় বা দান-অনুদান নয় বা কোনো প্রকারের কর, খাজনা ও শুল্ক নয়, এর ওপর করারোপ করা;
(চ) ধান, গম, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুটি, ছোলা, মশুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্ট, মোটা আটা, আটা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, কালো গোল মরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, ক্যাসিয়া পাতা, পাট, তুলা ও সুতা ক্রয়ের জন্য খোলা বা কৃত স্থানীয় ঋণপত্র খোলা বা অন্য কোনো অর্থায়ন চুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিশোধিত বা ঋণকৃত পরিমাণের ওপর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর কর্তন এর হার যৌক্তিকীকরণ;
(ছ) শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে প্রদেয় অর্থের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনের বিদ্যমান বিধান অধিকতর সুস্পষ্টভাবে প্রতিস্থাপন;
(জ) কোনো সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর কর্তৃক পরিশোধিত আয় বণ্টন বা কোনো লাইসেন্স ফি বা অন্য কোনো ফি বা চার্জ হইতে কর কর্তন করার হার বৃদ্ধি করা;
(ঝ) ট্রাস্ট, ব্যক্তিসংঘ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সুদ আয় হতে ২০শতাংশ হারে এবং বিভিন্ন ফান্ড ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুদ আয় হতে ১০শতাংশ হারে কর কর্তন করা;
নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকবে
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হবে। অর্থাৎ চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মতো করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হবে।
বর্তমানে ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সর্বোচ্চ সীমা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। নারী, প্রবীণ নাগরিক, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য এবং গেজেটেড যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আরো বেশি। এতে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের করভার লাঘবের ফলে জীবনযাত্রায় কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে এবং করদাতারা নিয়মিতভাবে কর পরিশোধে উৎসাহিত হয়েছেন বলে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করবেন।
তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যমান স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করবেন। একই সাথে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের জন্য করধাপ সমন্বয়পূর্বক বিদ্যমান সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হবে।
স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের জন্য করধাপ ও করহার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে করধাপ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার করহার শূন্যকর নতুন অর্থ বছরেও তা অপরিবর্তিত রাখা হবে। পরবর্তী একলাখ টাকার ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ কর রয়েছে ২০২৪-২০২৫ ও ২০২৫-২০২৬ অথবছরেও তা ৫ শতাংশ থাকছে। এ ছাড়া পরবর্তী ৩ লাখ টাকার ওপরে আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ এবং পরবর্তী ৫ লাখ টাকা আয়ের ওপর ২০ শতাংশ আয়কর অপরিবর্তিত থাকছে। অবশিষ্ট টাকার ওপর ২৫ শতাংশ ও পরবর্তী ২০ লাখ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট টাকার ওপর ৩০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছর সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তা ২০২৪-২০২৫ ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে অপরিবর্তিত থাকবে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা তা ২০২৪-২০২৫ ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে অপরিবর্তিত থাকবে। চলতি অর্থবছর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেটিও ২০২৪-২০২৫ ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে অপরিবর্তিত থাকবে। এ ছাড়া গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা ২০২৪-২০২৫ ও ২০২৫-২০২৬ সালে অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হবে। তৃতীয় লিঙ্গ করদাতা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা তা অপরিবর্তিত থাকবে। কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের ক্ষেত্রে এরূপ প্রত্যেক সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত সীমা ৫০,০০০ টাকা বেশি প্রস্তাব করা হবে।
আয়কর খাতে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
এগুলোর মধ্যে আয়কর খাতে নতুন করে একটি করের স্তর ঘোষণার সম্ভাবনা আছে। বছরে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় করেন এমন স্বাভাবিক ব্যক্তি ও ফার্মকে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হতে পারে নতুন অর্থবছরে। এ ছাড়া ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকায় অপরিবর্তিত থাকছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানির করপোরেট কর শর্ত সাপেক্ষে সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে। তবে যেকোনো সমিতি, ট্রাস্ট, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সুদ আয়ে ১৫ শতাংশের সাথে আরো ৫ শতাংশ বেশি কর আরোপ হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুদ আয় বাবদ দিতে হবে ১০ শতাংশ কর।
বাজেটে ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ডালসহ বিভিন্ন মসলা ও নিত্যপণ্যের এলসি খোলায় উৎসে কর কমানো হতে পারে। এতে এসব পণ্যের আমদানি খরচ কমতে পারে।
শুল্ক খাতে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ঘোষণা থাকতে পারে বাজেটে। এর ফলে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হবে। নতুন বাজেটে দেশে উৎপাদিত বাদাম শিল্পকে সুরক্ষা দিতে কাজুবাদাম আমদানিতে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। ওষুধশিল্পের কাঁচামালে রেয়াতি শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রাখা হবে। কিডনি ডায়ালাইসিসের ফিল্টার ও সার্কিট আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে। নতুন করে ডেঙ্গুর কিট আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেয়া হবে আসছে বাজেটে। তবে রেফারেল হাসপাতাল নামে পরিচিত দেশের কয়েকটি বিলাসবহুল হাসপাতালের পণ্য আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক সুবিধা তুলে দিয়ে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা থাকবে। আড়াই কেজির প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধে বিদ্যমান ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক তুলে দেয়া হতে পারে। রড উৎপাদনে ব্যবহৃত ফেরো ম্যাঙ্গানিজের শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করার ঘোষণা থাকতে পারে বাজেটে।
এয়ারকন্ডিশনার তৈরিতে ব্যবহৃত স্টিল শিটের শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ এবং পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র বা পিউরিফায়ারে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের বিভিন্ন কাঁচামালের শুল্ক রেয়াতের মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা থাকবে নতুন বাজেটে। এ ছাড়া ২৫০ সিসির বেশি ইঞ্জিনের মোটরসাইকেলের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকবে।
বাজেটে এটিএম ও সিসি ক্যামেরার আমদানি শুল্কও বাড়িয়ে ১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া জেনারেটর সংযোজন পণ্যে ১ শতাংশ, এলইডি, এনার্জি সেভিং ল্যাম্পে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব থাকবে। চকলেটের বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকবে বাজেটে। ল্যাপটপ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ।
তবে এ ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। ফলে মোট করভার ৩১ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ হবে। প্রিপেইড ইলেকট্রিক মিটারের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ এবং বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিটারের যন্ত্রাংশের শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হতে পারে।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী সব স্তরে শুল্ক অব্যাহতি অবসানের অংশ হিসেবে শিল্পের কাঁচামালে শূন্য শুল্কের পরিবর্তে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে পারেন। এটি হলে শিল্প খাতের খরচ বাড়ার ঝুঁকি নিয়ে এরই মধ্যে উদ্যোক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শুল্ক ৫ থেকে ১০ শতাংশ করায় খরচ বাড়বে প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড স্ট্রাকচারে। সিএনজি, এলপিজি স্টেশনের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের শুল্ক ৩ থেকে ৫ শতাংশ করার ঘোষণায় খরচ বাড়তে পারে এসব উদ্যোগে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে শিল্পের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও গাড়ি আমদানিও শূন্য শুল্কে হবে না। নতুন বাজেটে এসব ক্ষেত্রেও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব থাকবে।
ব্যাগেজ রুলসের আওতায় স্বর্ণ আমদানিতে কড়াকড়ি থাকছে। আর মোবাইল ফোন আমদানিও সীমিত করা হচ্ছে। আসছে বছরে কোনো যাত্রী একটির বেশি মোবাইল ফোন বিনা শুল্কে আনতে পারবেন না। আগে দু’টি ফোন আনা যেত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা