১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দুদকে হাজির হতে ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন বেনজীর

-


দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে সময় চেয়েছেন পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে বেনজীরের পক্ষে তার আইনজীবী ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন। দুদকের উপপরিচালক বরাবর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুনেছি দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে বেনজীর ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন। আইন অনুযায়ী তাকে সময় দেওয়া হবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দুদক কাউকে নোটিশ করলে তিনি আসতে বাধ্য কিনা, সেটা আইনে সুস্পষ্ট বলা নেই। না এলে ধরে নিতে হবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তবে তার সুযোগ আছে সময় চাওয়ার। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে। এই এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে। গত ২৮ মে বেনজীর ও তার স্ত্রী সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে বেনজীর আহমেদকে আজ ৬ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।

বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় ৬২১ বিঘা জমি, ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ৩টি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের সন্ধান পেয়েছে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

গত মার্চের শেষের দিকে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন এবং তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে ৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। তবে, ধারণা করা হচ্ছে, তারা কেউই দেশে নেই। যদিও দুদক থেকে তাদের বিদেশ যাত্রায় কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি ও হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয়, সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়েছে। একই সাথে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৩ মে সাবেক আইজিপি বেনজীরের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। অন্য দিকে, গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেয়া হয়। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জীশান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

বান্দরবানে বেনজীরের সম্পত্তির বিস্তারিত প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছে দুদক
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, আজ ৬ জুনের মধ্যেই বান্দরবানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের কী কী সম্পত্তি রয়েছে তার হিসাব দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে দুদক। এ নির্দেশনার পর তার সম্পত্তির খোঁজ নিতে মাঠে নেমে পড়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া এলাকায় বেশ কিছু জমির খোঁজ মিলেছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন আগে দুদক ঢাকা থেকে বেনজীর আহমেদের নামে কী সম্পত্তি রয়েছে তার খোঁজ দিতে একটি চিঠি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার ৬ জুনের মধ্যে সেই সম্পত্তির হিসাব ঢাকায় পাঠানোর জন্য ওই চিঠিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের ভূমি বিভাগ থেকে সব ধরনের কাগজপত্র তলব করা হয়েছে। তদন্তের পর বেনজীর আহমেদের যেসব সম্পত্তি রয়েছে তার হিসাব ঢাকায় পাঠানো হবে। সুয়ালকে সম্পত্তির খোঁজ পেলেও লামার সম্পত্তির বিষয়ে এখনো কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তবে দ্রুত সব সম্পত্তির হিসাব দুদুকে পাঠানো হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ রথ্যাবের মহাপরিচালক থাকাকালীন বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকায় প্রায় ৭০ একর জায়গা দখলে নিয়ে নেন। সেখানে রাবার হর্টিকালচার লিজ ও মানুষের ক্রয়কৃত জায়গাও রয়েছে। ওই জায়গা দেখিয়ে গত বছর বন বিভাগ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ঘনফুট গাছের পারমিট করেন বেনজীর। প্রায় অর্ধ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় গাছ বিক্রি করে। ওই জায়গায় গরু ও মৎস্য খামার, সেই সাথে আলিশান বাংলো করা হয়। অন্য দিকে লামার সরই ইউনিয়নেও তার আরো শতাধিক একর জায়গার খবর পাওয়া গেছে। সেখানকার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন সে সময় পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় বেশ কিছু নেতা বেনজীরের নাম ব্যবহার করে প্রচুর সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দখলকৃত এসব জমি প্রকৃত মালিকদের ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement