চাচাতো বোনকে বিয়ে করায় খুন হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সৌরভ
চাচাকে খুঁজছে পুলিশ- ময়মনসিংহ অফিস
- ০৪ জুন ২০২৪, ০২:০৫
ময়মনসিংহে প্রেমের নির্মম শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) হত্যাকাণ্ডে এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সৌরভের আপন চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ইলিয়াসকে খুঁজছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে দ্রুতই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা ও থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।
সৌরভের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার আপন চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভার। গত ১২ মে ইভা ঢাকায় গিয়ে গোপনে সৌরভকে বিয়ে করেন। তাদের এ বিয়ে মেনে নেননি ইভার বাবা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চাচা ইলিয়াস পরিকল্পিতভাবে সৌরভকে ডেকে এনে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ডাক বিভাগের কর্মচারী মো: ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, ‘যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি; সেই ভাই আমার সন্তানকে হত্যা করল! সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার সন্তানকে না মেরে আমাকে মারত, ওর কী দোষ ছিল? শুধু কি আমার ছেলে ওর মেয়েকে ভালোবেসেছে, ওর মেয়ে কি ভালোবাসে নাই। যদি ওর মেয়ে ভালো নাই বাসত, তাহলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় গিয়ে কেন আমার ছেলেকে বিয়ে করল?’ এসব কথা বলতে বলতে কোতোয়ালি থানায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি আরো জানান, সৌরভ ও ইভার প্রেমের বিয়ের ঘটনার কয়েক দিন পর ইলিয়াস তাকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলেছিল, তোর ছেলেকে টুকরো টুকরো করে খুন করব। এটা না করে পানিও খাব না। তখন তিনি ইলিয়াসের কথা বিশ্বাস করেননি। তিনি মনে করেছিলেন এটা তার রাগ-ক্ষোভের কথা। কিন্তু এখন তার কথাই সত্য হয়েছে। ছেলেকে টুকরো টুকরো করেই খুন করেছে। ছেলে খুনের বিচার চান তিনি। তিনি বলেন, ‘১৬ মে নিজের মেয়েকে কানাডায় পাঠিয়ে দিয়ে গত শনিবার সৌরভকে কৌশলে ডেকে ময়মনসিংহে আনেন। সৌরভ আমাদের কিছু না বলেই চলে আসে। ওই দিন রাতে শুনতে পাই সৌরভ ময়মনসিংহে এসেছে। কিন্তু রাত ১১টার পর যখন সৌরভের মোবাইল বন্ধ পাই, তখন থেকেই চিন্তা হচ্ছিল। পরে সকালে শুনি মনতলা ব্রিজের নিচে সৌরভের লাশের চার খণ্ড পাওয়া গেছে।’ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা মাহমুদা আক্তার পারুল কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না।
এ দিকে হুমকির সত্যতা নিশ্চিত করে নিহত সৌরভের প্রতিবেশী দাদা ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: বোরহান উদ্দিন জানান, ইলিয়াস নিহত সৌরভকে টুকরো টুকরো করে খুন করার হুমকি দিয়েছিলেন। সেই হুমকির অডিও কল রেকর্ড তিনি শুনেছেন এবং সংরক্ষণ করে রেখেছেন।
সৌরভের মায়ের অভিযোগ- ইলিয়াস তার মেয়ে ইভাকে কানাডা পাঠিয়ে দেয়ার পর সৌরভকে ডেকে এনে খুন করেছেন। তিনিও ছেলে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। স্বজনরা আরো জানান, গত ১২ মে ঢাকায় যান ইভা। পরে সৌরভের এক বন্ধুর বাসায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বিয়ের পর সৌরভ তাদের বাসায় নিয়ে যান ইভাকে। ওই দিনই ইভা চলে আসেন ময়মনসিংহে। দু’দিন পর ময়মনসিংহে এসে চাচা-চাচীকে বুঝানোর চেষ্টা করেন সৌরভ। কিন্তু তারা বিয়ে মেনে না নিয়ে উল্টো তাকে হত্যার হুমকি দেন।
ইলিয়াস আলী ময়মনসিংহ নগরীর গোহাইলকান্দিতে একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি সেনাবাহিনীর নায়েক পদে থাকা অবস্থায় অবসরে যান। আর ইউসুফ আলী পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সৌরভের গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি মাইন উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ইউসুফ আলী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা